ঝুড়ি ভরা ঝাকানাকা [Jhuri Bhora Jhakanaka]
By Mahbub Azad
5/5
()
About this ebook
উপমহাদেশের বিখ্যাত প্যাঁদানিপ্রবণ গোয়েন্দা ঝাকানাকা, গোবেচারা গোয়েন্দা পুলিশের দারোগা কিংকর্তব্যবিমূঢ় চৌধারি আর ঝাকানাকার নেমেসিস দস্যুসম্রাট বদরু খাঁর রহস্য-রোমাঞ্চ-রাজনীতি জর্জরিত বিটকেল গল্পের সংকলন।
Reviews for ঝুড়ি ভরা ঝাকানাকা [Jhuri Bhora Jhakanaka]
2 ratings1 review
- Rating: 5 out of 5 stars5/5good
Book preview
ঝুড়ি ভরা ঝাকানাকা [Jhuri Bhora Jhakanaka] - Mahbub Azad
ঝুড়ি ভরা ঝাকানাকা
মাহবুব আজাদ
© মাহবুব আজাদ
স্ম্যাশওয়ার্ডসের মাধ্যমে ই-বুক আকারে প্রকাশিত ও বিতরণকৃত। লেখকের লিখিত অনুমোদন ছাড়া এই ই-বুকটির পুনরুৎপাদন, বিতরণ বা বিক্রয় নিষিদ্ধ।
এই গ্রন্থে বিবৃত সকল ঘটনা ও চরিত্র কাল্পনিক। বাস্তবের সঙ্গে কোনরূপ সাদৃশ্য কাকতালমাত্র।
গোয়েন্দা ঝাকানাকার ফেসবুক পেইজের ঠিকানা: http://goo.gl/3Ftfo
মূল্য: ০.৯৯ ইউ এস ডলার মাত্র
গোয়েন্দা ঝাকানাকা ও জাঙ্গিয়া রহস্য
গোয়েন্দা ঝাকানাকা ও বইমেলা রহস্য
গোয়েন্দা ঝাকানাকা ও অজ্ঞান পার্টি রহস্য
গোয়েন্দা ঝাকানাকা ও হারাধনের দশটি ছেলে রহস্য
গোয়েন্দা ঝাকানাকা ও সংরক্ষিত মহিলা আসনের এম্পিদের চুলাচুলি রহস্য
গোয়েন্দা ঝাকানাকা ও বিউটি পার্লার রহস্য
গোয়েন্দা ঝাকানাকা ও পিসুনচ্ছাড় রহস্য
গোয়েন্দা ঝাকানাকা ও আহত সুশীল সমাজ রহস্য
গোয়েন্দা ঝাকানাকা ও মিস্টার অ্যান্ড মিসেস হাফমজুর হত্যা রহস্য
গোয়েন্দা ঝাকানাকা ও জাঙ্গিয়া রহস্য
এক.
আবদুল গোলাম হক নাক কুঁচকে বললেন, শেষ পর্যন্ত আমাকে ট্রেনে চড়ে চট্টগ্রাম যেতে হবে? য়্যাঁ? তা-ও অন্যের ট্রেনে?
সেক্রেটারি মিস জুলিয়া বললেন (ভাই, বিলিয়নেয়ারের বাড়ির বেড়ালটাকেও আপনি আপনি করে বলতে হয়, আর মিস জুলিয়া তো কুখ্যাত ক্রোড়পতি আবদুল গোলাম হকের বিশেষ প্রিয়পাত্রী আর সেক্রেটারি, তাঁকে আপনি না বলে শেষে লেখালেখির পাট খোয়াই আর কি), কিন্তু স্যার, আপনার নিরাপত্তার জন্যেই তো ...।
আবদুল গোলাম হক গজগজ করতে লাগলেন, তাই বলে অন্যের ট্রেনে করে চট্টগ্রাম যাবো ...।
মিস জুলিয়া বললেন, স্যার, বাংলাদেশে তো সব ট্রেনই পরের ট্রেন। সব ট্রেনই বাংলাদেশ রেলওয়ের সম্পত্তি। খালি কয়েকটা খেলনা ট্রেন আছে স্যার শিশুপার্ক আর ফ্যান্টাসি কিংডমে ...।
আবদুল গোলাম হক খাপ্পা হয়ে গেলেন। বললেন, দ্যাখো মিস জুলিয়া, পদে পদে জ্ঞান দিতে এসো না! পয়সা খরচ করলে সব পাওয়া যায়। দাঁড়াও না, ফাঁড়াটা খালি কাটুক আগে, আমি ঢাকা-টু-চিটাগাং ট্রেন সার্ভিসের ব্যবসা শুরু করবো। একটা ট্রেন কিনতে কয় টাকা লাগে?
মিস জুলিয়া তাঁর ল্যাপটপে খুটখুট করে নোট করতে করতে বললেন, দেখি স্যার ইন্টারনেটে সার্চ করে। ... কিন্তু স্যার, রেলওয়ে কি তাদের লাইনে আপনার ট্রেন চলতে দেবে?
আবদুল গোলাম হক উত্তেজিত হয়ে পড়লেন, দিবে না মানে? একশোবার দিবে! দিতেই হবে! না দিলে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে রেল চলাচল আমি বন্ধ করে দিবো!
মিস জুলিয়া বললেন, জ্বি স্যার, তা তো অবশ্যই!
আবদুল গোলাম হক বললেন, এক্ষুণি খোঁজ নাও, ট্রেন কিনতে কত টাকা লাগে।
মিস জুলিয়া আমতা আমতা করে বললেন, স্যার, গুগলে তো ট্রেনের দাম পাওয়া যাচ্ছে না, সচলায়তনে জিজ্ঞেস করবো?
আবদুল গোলাম হক বললেন, যাকে খুশি জিজ্ঞেস করো, আমার দাম জানা হলেই হয়!
মিস জুলিয়া আবার খুট খুট করে টাইপ করতে লাগলেন।
আবদুল গোলাম হক কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললেন, প্লেনে গেলে কী সমস্যা ছিলো?
মিস জুলিয়া বললেন, প্লেনে স্যার একটু বিপদ নাকি ছিলো, উনি বললেন।
আবদুল গোলাম হক বললেন, কী বিপদ?
মিস জুলিয়া বললেন, তা তো স্যার আমাকে খুলে বলেননি। আমি জিজ্ঞেস করে ধমক খেলাম খামাকা।
আবদুল গোলাম হক বললেন, থাক তাহলে। ঐ ব্যাটাকে খামাকা ঘাঁটিয়ে লাভ নেই। বলেছে যখন, তখন নিশ্চয়ই একটা কিছু বিপদ ছিলো!
মিস জুলিয়া বললেন, জ্বি স্যার।
আবদুল গোলাম হক একটু পর আবারও ক্ষেপে গেলেন। কিন্তু তাই বলে ট্রেনে? বাসে গেলেও তো হতো।
মিস জুলিয়া বললেন, বাসে নাকি স্যার সবচেয়ে বেশি বিপদ। তাছাড়া আপনাকে তো লোকে চেনে জানে ...।
আবদুল গোলাম হক বললেন, আরে, ট্রেনে কোন বিপদ নাই নাকি? টয়লেটের অবস্থা কী খারাপ জানো?
মিস জুলিয়া বললেন, স্যার শহিদুলকে বলবো, টয়লেটে আপনার জন্য পটি ফিট করে দেবে নাহয় ...?
আবদুল গোলাম হক গোঁ গোঁ করে বললেন, আচ্ছা, আবারও গেলে দেখা যাবে। আর টয়লেটে যাওয়াও তো এক কষ্ট। একটু আগে যখন বেরোলাম, করিডোরের বাতি গেলো নিভে। অন্ধকারে ধাক্কা খেলাম এক লোকের সাথে ... ওফ ... কী এক জ্বালা! এ কারণেই আমার এই দেশে থাকতে ইচ্ছা করে না। নিরিবিলিতে একটু টয়লেটে যাওয়ার উপায়ও নাই, মানুষ গিজগিজ করে!
মিস জুলিয়া বললেন, ঠিকাছে স্যার, এরপর দরকার হলে আমি আর শহিদুল আপনার সাথে যাবো টর্চ নিয়ে।
আবদুল গোলাম হক বললেন, ঠিকাছে ঠিকাছে! এইবার দ্যাখো ট্রেনের দাম কতো!
মিস জুলিয়া বললেন, স্যার, সচলায়তনেও পেলাম না।
আবদুল গোলাম হক বললেন, "কেন, ওরা জানে না?
মিস জুলিয়া বললেন, না স্যার, জানে তো না-ই, উল্টা মশকরা করছে। বলছে, আপনাকে উত্তম জাঝা আর বিপ্লব।
আবদুল গোলাম হক গজগজ করে উঠলেন, যত্তোসব বখাটের আড্ডা ... আমি পরশুদিনই আবার দুবাই ফিরে যাবো!
দুই.
গোয়েন্দা ঝাকানাকা আনমনে ঘড়ি দেখছিলেন একটু পর পর। পুলিশের গোয়েন্দা শাখার দুঁদে কর্তা কিংকর্তব্যবিমূঢ় চৌধারি, ওরফে কিংকু চৌধারি তাই কৌতূহলভরে প্রশ্ন করলেন, ব্যাপার কী স্যার? একটু পর পর ঘড়ি দেখছেন কেন?
ঝাকানাকা ভুরু কুঁচকে তাকালেন। বললেন, ঘড়ি তো একটু পর পরই দেখতে হয়, চলছে কি না! ঘড়ি মাঝপথে বন্ধ হয়ে যায় যদি?
কিংকু চৌধারি থতমত খেয়ে বললেন, তা ঠিক। কিন্তু সে তো আপনি না দেখলেও বন্ধ হবে।
ঝাকানাকা বললেন, আরে কী আপদ! তাই তো চোখে চোখে রাখছি! বন্ধ হয়ে গেলেই এটা খুলে ফেলবো।
কিংকু চৌধারি বললেন, তারপর?
ঝাকানাকা বললেন, তারপর ব্যাটারি পাল্টে ফেলবো। এই দেখুন, নতুন ব্যাটারি নিয়ে এসেছি সাথে।
পকেট থেকে সেলোফেনের প্যাকেটে ভরা ব্যাটারি দেখালেন তিনি।
কিংকু চৌধারি বললেন, তাহলে এখনই পাল্টে ফেলুন না, বার বার তাহলে আর ঘড়ি পাহারা দিতে হয় না।
ঝাকানাকা বললেন, কেন, এখনো তো ঘড়ি চলছে, থামেনি তো!
কিংকু চৌধারি বললেন, তা ঠিক, কিন্তু ...।
ঝাকানাকা বললেন, কিন্তু আর কিছুই না, আপনাদের আলসেমি! একটা লোক কাজ করে খাচ্ছে, এ ব্যাপারটা আপনারা পুলিশেরা সহ্য করতে পারছেন না। একটা ঘড়িকে দেখেশুনে রাখছি, এই তত্ত্বাবধান আপনার পছন্দ হচ্ছে না। কারণ আপনি পুলিশ। কোন কিছুই দেখেশুনে রাখা আপনাদের পছন্দ না। একটা কিছু হলে পরে তারপর আপনারা নড়েনচড়েন। আমার ঘড়িটা খোয়া গেলেই মনে হয় আপনি খুশি হন?
কিংকু চৌধারি হেঁ হেঁ করে হাসলেন একটু। বললেন, যা-ই বলুন স্যার, গেলো গল্পে আপনার আন্দাজ মেলেনি একদম! বিষ্ণুমূর্তি স্যার, পাওয়া গেলো টুকরাটাকরা অবস্থায় ...।
ঝাকানাকা বললেন, বাজে কথা বলবেন না জনাব চৌধারি। ভুল লোককে প্যাঁদানোর কারণেই মূর্তিটার এই হাল। ঠিক লোকগুলিকে প্যাঁদালে মূর্তি সোজা জাদুঘরে ফেরত আসতো অক্ষত অবস্থায়।
কিংকু চৌধারি কিছু বলতে যাবেন, এমন সময় টিকেটচেকার এসে বললো, আপনাদের টিকেট প্লিজ।
কিংকু চৌধারি পকেট থেকে টিকেট বার করে চেকারের হাতে দিলেন। চেকার আনমনে সেটার একটা পাতা ছিঁড়ে আরেকটা পাতায় খসখস করে টিকমার্ক দিয়ে টিকেট ফিরিয়ে দিলো।
চেকার চলে যাবার পর ঝাকানাকা বললেন, সময় হয়েছে প্রায়, তৈরি হোন।
কিংকু চৌধারি চমকে গিয়ে বললেন, কেন কেন?
ঝাকানাকা বললেন, দেখুন, বদরু খাঁকে আমি প্রায় ছোটবেলা থেকে চিনি। সে-ও সবসময় ধরা খায় তার আলসে স্বভাবের জন্য। অবশ্য আপনারা ওরচেয়েও অলস, তাই আমি আপনাদের তাড়া না দিলে সে ধরা পড়ে না।
কিংকু চৌধারি বললেন, কিন্তু সময় হয়েছে বুঝলেন কিভাবে?
ঝাকানাকা বললেন, এই চেকারকে আপনি চেনেন?
কিংকু চৌধারি বললেন, না, আমি কিভাবে চিনবো?
ঝাকানাকা বললেন, আমি চিনি। এর নাম ইদ্রিস আলি। আজকে সকাল থেকে ওকে আমার লোক ফলো করছে। রাতে ট্রেনে ওঠার আগ পর্যন্ত সে নজরবন্দি ছিলো। আমার লোক জানিয়েছে, এই লোক খাঁটি ইদ্রিস আলি।
কিংকু চৌধারি থতমত খেয়ে বললেন, তো?
ঝাকানাকা বললেন, কিছুক্ষণের মধ্যেই ইদ্রিস আলি আক্রান্ত হবে বদরু খাঁ-র হাতে। চেকারের ছদ্মবেশ নিয়ে বদরু খাঁ ঢুকে পড়বে হক সাহেবের কামরায়।
কিংকু চৌধারি বললেন, কিন্তু হক সাহেবের কামরার আশেপাশে তো সাদাপোশাকের পুলিশ আছে পাহারায়! ওনার নিজস্ব সিকিউরিটির লোক শহিদুলকেও তো দেখলাম ট্রেনে!
ঝাকানাকা বললেন, আমি কিছুক্ষণ আগে টয়লেটে গিয়েছিলাম, আপনার মনে পড়ে?
কিংকু চৌধারি বললেন, হুঁ, মনে পড়ে। বলেছিলেন, নাম্বার ওয়ান।
ঝাকানাকা বললেন, হ্যাঁ। তখন গিয়ে দেখি, টয়লেটের মধ্যে কে বা কাহারা শহিদুলকে পেঁদিয়ে অজ্ঞান করে ফেলে রেখে গেছে। বাধ্য হয়ে আমি জানালা দিয়ে নাম্বার ওয়ান করে এসেছি।
কিংকু চৌধারি ধড়ফড় করে আসন ছেড়ে দাঁড়ালেন, বলেন কী? য়্যাঁ? সর্বনাশ ...!
ঝাকানাকা বললেন, ব্যস্ত হবেন না। মাঝে মাঝে ট্রেনের জানালা দিয়ে নাম্বার ওয়ান করার অভ্যেস থাকা দরকার। আমি তো গেলবছর কাম্পুচিয়ায় প্লেনের জানালা দিয়ে নাম্বার টু পর্যন্ত করেছি ... আর এ তো সামান্য ট্রেন ...।
কিংকু চৌধারি বললেন, তাই বলে ... শহিদুলকে কে পেটালো?
ঝাকানাকা বললেন, হয়তো বদরু খাঁ! হয়তো অজ্ঞান পার্টির লোক! হয়তো পিকলু পটল!
কিংকু চৌধারি চমকে গিয়ে বললেন, পিকলু পটল! তার কথা আপনি জানলেন কী করে?
ঝাকানাকা মুহাহাহাহাহাহা করে হেসে উঠলেন। বললেন, "পিকলু পটলের কথা আমি জানবো না-ই বা কেন? যেভাবে আপনারা তার ছবি, জীবনী, চিঠিপত্র সব ছাপিয়ে দিচ্ছেন আপনাদের ভাড়াটে পত্রিকা আমোদী রসময়-এ! তার কথা ছেলেবুড়ো সকলেই জানে। পিকলু পটলের পোস্টার বিক্রি হচ্ছে দেখলাম আমার মহল্লায়। তাকে নিয়ে ইস্তফা মনোয়ার সুজুকি নাটক পর্যন্ত বানিয়ে ফেলেছে। তাকে নিয়ে ফালতু কবির প্রোডাকশনস এর সিনেমা তৈরি হচ্ছে, হাতে মারি! ... কোথায় থাকেন আপনি?"
কিংকু চৌধারি সাগ্রহে জিজ্ঞেস করলেন, নাটকটা দেখেছেন?
ঝাকানাকা বললেন, সময় পাইনি। মিস মিলি দেখেছে বললো, ওর কাছ থেকে পরে সময় করে শুনে নেবেন। কিংবা ইউটিউবে খোঁজ নিয়ে দেখবেন আছে কি না ...।
কিংকু চৌধারি লজ্জা পেয়ে বললেন, না, মানে, মিস মিলি তো কিছু বললো না নাটকটা দেখে ...। আর ইউটিউব দেখতে বলছেন? ইন্টারনেটে লগ ইন করা-ই এক দায়, আর ইউটিউব তো কোন ছার ...!
ঝাকানাকা বললেন, তবে আপনি যে পিকলু পটলের সন্ধান পেয়েই এ ট্রেনে আজ আমার সাথে এক ঢিলে দুই পাখি মারতে চড়েছেন, তা আমি কিভাবে জানলাম, সেটা আপনাকে বলা যাবে না। সেটা আমার গোপন রহস্য, পারলে আপনি সমাধান করুন গিয়ে।
কিংকু চৌধারি মলিন মুখে বললেন, আর বলবেন না স্যার, হাড্ডিচর্বি এক হয়ে যাচ্ছে এই পিকলু শালার পেছনে ছুটতে গিয়ে! জেল থেকে পালিয়ে শালা আমার জীবনটা বরবাদ করে ছাড়ছে! সেদিন বিশ্বব্যাঙ্কের কান্ট্রি ডিরেক্টরের পকেট মেরেছে স্যার! আমাদের তো চাকরি টেকানো নিয়েই মুশকিল! বড় বড় স্যারেরা ফোন করে ধমকায় রোজ!
ঝাকানাকা হাসলেন। বললেন, আপনার চাকরি অনেক আগেই যাওয়া উচিত ছিলো। অবশ্য আপনারটা গেলে পুলিশের আরো আরো কর্তারও যাওয়া উচিত। যাকগে, চলুন, আগে আমার শিকার পাকড়াও করি।
কিংকু চৌধারি বললেন, আগে মানে? স্যার, আপনি কি পিকলু পটলকে ট্রেস করে ফেলেছেন?
ঝাকানাকা চোখ টিপে বললেন, ঐটা চার নাম্বার চ্যাপ্টারে গিয়ে জানতে পারবেন। এখন আপনার বন্দুকে গুলি ভরে নিন। বদরু খাঁ কিন্তু ভয়াবহ চিজ!
কিংকু চৌধারি মাথা নেড়ে পকেটে হাত ঢুকিয়ে পিস্তল বার করতে গিয়ে থমকে গেলেন, তারপর আর্তনাদ করে বললেন, স্যার, আমার পিস্তল! আমার পিস্তল হারিয়ে গেছে স্যার!
ঝাকানাকা গোঁফ চোমড়াতে চোমড়াতে বললেন, হারিয়ে গেছে না পিকপকেট হয়েছে?
কিংকু চৌধারির কালোপানা মুখটা রাগে লাল হয়ে গেলো। তিনি হুঙ্কার ছেড়ে বললেন, বটে? কিংকু দারোগার পকেটে হাত! তবেরে শয়তান ...!
ঝাকানাকা চোখ বুঁজে মুহাহাহাহাহাহা করে হাসলেন। বললেন, তাবৎ এশিয়ার সবচেয়ে ধুরন্ধর পকেটমার পিকলু পটল এই ট্রেনে আপনার সঙ্গী, তা জেনেও আপনি আপনার পিস্তল কী করে পকেটে গুঁজে ঘুরে বেড়ান আমি বুঝি না। আমার মতো শোল্ডার হোলস্টারে রাখতে পারতেন না?
কিংকু চৌধারি ফ্যাকাসে মুখে বললেন, চিন্তার কিছু নাই স্যার, আমার ব্যাগে আরেকটা পিস্তল আছে।
ঝাকানাকা বললেন, ঠিকাছে, ওটা বার করে গুলিটুলি ভরে নিন। বদরু খাঁ কিন্তু বাগে পেলে একদম ফুঁড়ে দেবে আপনাকে!
কিংকু চৌধারি কেবিনের তাকের ওপর রাখা ব্যাগ নামিয়ে পিস্তল খুঁজতে লাগলেন। ঝাকানাকা শোল্ডার হোলস্টার থেকে নিজের বিখ্যাত ষোলঘরা রিভলভার ষোড়শী
বার করে পরীক্ষা করতে লাগলেন। বদরু খাঁর সাথে প্রায়ই তাঁকে গুলিবিনিময় করতে হয়। বদরু খাঁর বারো ছররার দোয়াজদাহাম পিস্তলের সাথে মোকাবেলা করার জন্য জিঞ্জিরা থেকে বিশেষ অর্ডার দিয়ে তৈরি করা রিভলভার এই ষোড়শী, চোরডাকাতরা এর চেহারা দেখলেই অনেক সময় ঘাবড়ে গিয়ে বন্দুকপিস্তল ফেলে দেয়।
কিংকু চৌধারি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে সোজা হলেন। যাক, স্যার, এই পিস্তলটা খোয়া যায়নি। এটাতে সবসময় গুলি ভরাই থাকে ...।
বলতে বলতে তিনি ঝাকানাকার রাগরক্তিম চেহারা দেখে থেমে গেলেন। কী ব্যাপার স্যার?
ঝাকানাকা তাঁর ষোড়শীকে বাড়িয়ে ধরলেন কিংকু চৌধারির দিকে। কিংকু চৌধারি সেটা হাতে নিয়ে দেখলেন উল্টেপাল্টে। সে কি স্যার, গুলি ভরেননি কেন এখনো?
ঝাকানাকা বললেন, দুপুরে আমি নিজের হাতে গুনে গুনে ষোলটা গুলি ভরেছিলাম এটাতে।
কিংকু চৌধারি বললেন, এখন খালি কেন?
ঝাকানাকা বললেন, পিকলু পটলের কাজ। রিভলভারটা রেখে গেছে, তবে গুলিগুলো ঝেড়ে দিয়েছে!
তিন.
বদরু খাঁ ইদ্রিস আলির হাত পিছমোড়া করে বাঁধতে বাঁধতে বললো, ইদ্রিস আলি! ... বেশি চোট লাগেনি তো?
ইদ্রিস আলির চোখ দিয়ে দরদর করে অশ্রু ঝরতে লাগলো।
বদরু খাঁ গিঁট টেনে পরীক্ষা করে দেখতে দেখতে বললো, "এই যে প্যাঁচটা কষিয়ে তোমাকে বাঁধলাম, এই গিঁট্টুর নাম জাহাজবন্ধন গিঁট্টু। মোগল আমলে এই গিঁট মেরে আমাদের চট্টগ্রাম বন্দরে বড় বড় সমুদ্রগামী জাহাজ ডকের সাথে বাঁধা হতো। এমনও হয়েছে, যে ঝড়ে দড়ি ছিঁড়ে গেছে, কিন্তু গিঁট অটুট রয়েছে! কিছুদিন আগে একটা ফারসী পুঁথি পাওয়া গিয়েছিলো সাতকানিয়ায়। পুঁথিটা আমিই চুরি করেছিলাম যাদুঘর থেকে। পথে যেতে যেতে বোরড হয়ে যেতে পারি ভেবে যাদুঘরের এক ফারসী-দুরস্ত কর্মকর্তাকেও কিডন্যাপ করেছিলাম সে কারণে। তিনি আমাকে সেদিন সারারাত মাইক্রোবাসে বসে বসে দুলে দুলে পুঁথি পড়ে আর অনুবাদ করে শুনিয়েছিলেন। ... আহ, ইতিহাস! বড় ইন্টারেস্টিং জিনিস। উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষাটা পাস করতে পারলে আমি হয়তো ইতিহাসের ছাত্রই হতাম! তো, ঐ পুঁথিতে এই গিঁট্টুর সব রহস্য এঁকে দেয়া ছিলো। ভোরবেলা যখন আমি চিলমারি হয়ে বর্ডার টপকাচ্ছি, তখন ভাবলাম, যাদুঘরের ভদ্রলোকের ওপরই এই গিঁট একটু পরীক্ষা করে যাই না কেন? দিলাম বেচারাকে গিঁট মেরে। আজ থেকে এক বছর আগের ঘটনা। এখনো বেচারা ঐ মাইক্রোবাসেই বাঁধা আছে। কোন শালার ব্যাটা খুলতে পারেনি ঐ দড়ি। ড্রাইভার বাধ্য হয়েছে গাড়িটা সস্তায় ঐ যাদুঘরওয়ালার বউয়ের কাছে বেচে দিতে। বেচারা এখন গ্যারেজে বাস করে কাটিয়ে দিচ্ছে জীবনটা। ... কী করে ছুটবে, বলো? গিঁট খোলার তরিকা জানি দুনিয়াতে কেবল আমি, আর পুঁথিটা যে গুজরাটির কাছে বিক্রি করেছি,