Discover millions of ebooks, audiobooks, and so much more with a free trial

Only $11.99/month after trial. Cancel anytime.

স্বপ্ন স্মৃতি বাস্তব
স্বপ্ন স্মৃতি বাস্তব
স্বপ্ন স্মৃতি বাস্তব
Ebook282 pages2 hours

স্বপ্ন স্মৃতি বাস্তব

Rating: 0 out of 5 stars

()

Read preview

About this ebook

এই উপন্যাসটির বিষয়বস্তু ১৯৬০-৭০ সালের ভারতের রাজ্য পশ্চিমবঙ্গের নকসালবাড়ি আন্দোলন ও পশ্চিমবঙ্গের অর্থনীতি, রাজনীতি ও সংস্কৃতির উপর তার প্রভাব । কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজের ছাত্র আন্দোলন দিয়ে এই উপন্যাসের শুরু এবং নকসাল আন্দোলনের বিফলতা ও তআর পরবর্তী স্বপ্ন ভঙ্গের মধ্যে এই উপন্যাসের পরিসমাপ্তি।

LanguageBengali
Release dateFeb 29, 2012
ISBN9781466173514
স্বপ্ন স্মৃতি বাস্তব
Author

Ratan Lal Basu

ADDRESS: KOLKATAPh. D. in EconomicsProfession: Retired from 1st January, 2009 from the post of Reader in Economics and Teacher-in-Charge, Bhairab Ganguly College, Kolkata, India

Read more from Ratan Lal Basu

Related to স্বপ্ন স্মৃতি বাস্তব

Related categories

Reviews for স্বপ্ন স্মৃতি বাস্তব

Rating: 0 out of 5 stars
0 ratings

0 ratings0 reviews

What did you think?

Tap to rate

Review must be at least 10 words

    Book preview

    স্বপ্ন স্মৃতি বাস্তব - Ratan Lal Basu

    স্বপ্ন স্মৃতি বাস্তব

    By Ratan Lal Basu

    Copyright 2022 Ratan Lal Basu

    Smashwords Edition

    Smashwords Edition, License Notes

    Smashwords Edition, License Notes

    Thank you for downloading this free ebook. Although this is a free book, it remans the copyrighed property of the auhor, and may not be reproduced, copied and distributed for commercial or non- commercial purposes. If you enjoed this book, please encourage your friends to download their own copy at Smashords.com, where they can alo discover other works by this author. Thank you for your support.

    Contents

    প্রস্তাবনা

    প্রথম অধ্যায়

    দ্বিতীয় অধ্যায়

    তৃতীয় অধ্যায়

    চতুর্থ অধ্যায়

    পঞ্চম অধ্যায়

    ষষ্ঠ অধ্যায়

    সপ্তম অধ্যায়

    অষ্টম অধ্যায়

    নবম অধ্যায়

    দশম অধ্যায়

    পরিশেষ

    লেখক পরিচিতি

    প্রস্তাবনা

    সমরবাবু ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। ঘুম ভাঙতেই দেখেন বিকেল হয়ে গেছে। বাইরে বৃষ্টি পড়ছে। ল্যান্ডস্কেপ হোটেলের দশ তলার জানলা দিয়ে তাকিয়ে দেখেন মেকং নদীতে এক অপূর্ব স্বপ্ন মাখা জগত। সমরবাবু লিফ্‌ট দিয়ে দ্রুত নেমে পড়লেন। বাইরে যাবেন শুনে রিসেপসনিষ্ট মেয়েটা একটা সুন্দর রঙিন ছাতা এগিয়ে দিল। প্যাগোডা আকৃতির ক্যাম্বোডিয়ানা হোটেলের সামনে থেকে এক প্যাকেট সিগারেট কিনে এগিয়ে গেলেন মেকং এর তীরে। নদীর তীর ঘেঁষে সারি সারি নানান আকৃতির নৌকা। সমরবাবুকে দেখে একজন মাঝি এগিয়ে এসে ভাঙা ইংরেজিতে বলল, ‘হো-চি-মিন সিতি তু আওয়ারস্’। সমরবাবু বললেন, ‘আমার ভিয়েতনামের ভিসা নেই’। তারপর হেসে ফেললেন। হোটেলের ম্যানেজারের কাছে শুনেছেন নৌকা করে সায়গন যেতে কম করে আট ঘণ্টা লাগে। অথচ যাত্রীদের আকৃষ্ট করার জন্য মাঝিরা কেমন বেমালুম মিথ্যা বলে যায়।

    সিগারেট ধরিয়ে সমরবাবু তাকিয়ে রইলেন নদীর দিকে। ঝিরঝিরে বৃষ্টি সপ নদী আর মেকং এর সঙ্গমস্থলে এক মোহময় জগত সৃষ্টি করেছে। পলপটের দুঃস্বপ্ন ভুলে সমরবাবু আবার ফিরে গেলেন ছাত্র জীবনের স্বপ্নের জগতে। মনে পড়ে গেল কবিতার একটা ছত্রঃ

    "চেয়ে দেখ মেকং আর বেনহাই এর জলে নতুন জীবনের মুখ

    কান পেতে শোন নতুন দিনের ঘোষণা মন্দ্রিত হচ্ছে হো-চি-মিন এর কণ্ঠে।"

    সমর বাবুর সামনে থেকে হঠাত সব কিছু মুছে গেল। ভেসে উঠল সুদূর অতীতের দৃশ্যাবলী।

    মনে পড়ে গেল শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের কবিতার কয়েকটা ছত্রঃ

    "তারা আমাদের বলে গেলো হারানো দিনের সেই অনুপম স্বপ্নগুলি স্মৃতিগুলি

    আমরা অনুভব করলাম আবার সেই সব হারানো গল্প

    যা আমরা এতাবৎকাল হারিয়ে এসেছি

    হারিয়ে এসেছি হারিয়ে এসেছি হারিয়ে এসেছি ফিরে পাবনা

    জেনে কখনো আর

    -----------------------------------------

    ফিরে পাবো না আর ফিরে পাবো না আর ফিরে পাবো না আর

    সেইসব জ্যোস্নার ঝরাপাতার কথকতার দিন ফিরে পাবো না আর।"

    [বইটি স্বপ্ন নামে নিশানা প্রকাশনী, ১০৫/১৩ দমদম রোড, শীল কলোনি, কলকাতা-৭০০০৭৪ থেকে প্রকাশিত হয়েছে]

    প্রথম অধ্যায়

    ‘তোমাদের এডমিশান টেষ্টতো পর্শুদিন হয়ে গেছে’।

    সমরকে করুণ চোখে ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকতে দেখে ক্লার্ক সহানুভূতির স্বরে বললেন, ‘তুমি মৌলানা আজাদ বা অন্য কোন কলেজে দরখাস্ত করনি?’

    সমর যন্ত্রের মত পিছু হঠে একটা টুলের উপর বসে পড়ল। ক্লার্কের কয়েকটা কথা সমরের পৃথিবীটাকে বদলে দিয়েছে। দার্জিলিং মেলের বাঙ্কে শুয়ে তন্দ্রার অবসরে, বীরভূমের তালগাছে ঘেরা পিছুহটা পুকুর আর সীমাহীন মাঠ দেখতে দেখতে, স্টিমারের দলাই-মলাই ভিড়ে বিস্বাদ চা খেতে খেতে সমর অনেক স্বপ্ন দেখেছে প্রেসিডেন্সিতে ভর্তি হয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেবে।

    অনেকদিন আগে সমর একবার কলকাতা এসেছিল। বাবার সাথে কলেজ স্কোয়ারের বেঞ্চে বসে ওয়াটার পোলো খেলা দেখছিল। বাবা প্রেসিডেন্সি কলেজের বাড়িটা দেখিয়ে বলেছিলেন, ‘এটাই আমাদের দেশের সবচেয়ে ভালো কলেজ; দেশের অধিকাংশ গুণি মানুষ এই কলেজে পড়েছেন’। তখনি সমরের মনে বাসনা জাগে বড় হয়ে প্রেসিডেন্সিতে পড়বে। আর সেই বাসনাকে ঘিরে তার মনে স্বপ্ন বাসা বাঁধতে থাকে।

    হায়ার সেকেন্ডারী পরীক্ষায় ভাল রেসাল্ট করার পর সে আর মনের বাসনাটাকে চেপে রাখতে পারেনি। সবার কাছে গর্ব করে বলে বেড়িয়েছে, ‘দেখিস, আমিই এই স্কুলের একমাত্র ছাত্র যে প্রেসিডেন্সিতে পড়বে’। দু-একজন একটু ব্যঙ্গ করে বলেছিল, ‘গাছে কাঁটাল গোফে তেল। আগে এডমিশান টেষ্টে এলাও হয়ে নে তারপর বাতেলা ঝাড়িস’। সমর রেগে বলেছিল, ‘তোরা দেখে নিস, আমার প্রেসিডেন্সিতে ভর্তি হওয়া কেউ ঠেকাতে পারবেন।

    সমরের মন তখন আত্মবিশ্বাসে ভরপুর ছিল। একটা নতুন জীবন, একটা স্বপ্নের পৃথিবী। ট্রামে চেপে কলেজ স্ট্রীট পর্যন্ত আসতে আসতে, প্রেসিডেন্সি কলেজের প্রাসাদে ঢুকে ক্লার্ককে প্রশ্ন করা পর্যন্ত বেঁচে ছিল সে স্বপ্ন। কিন্তু তারপর ক্লার্কের সামান্য কয়েকটা কথায় সমরের সব স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে গেল। ফিরে গিয়ে জলপাইগুড়ির এ.সি. কলেজে ভর্তি হওয়া ছাড়া এখন আর কোন রাস্তা খোলা নেই। তাও ওখানেও ভর্তি বন্ধ হয়ে গেছে কিনা কে জানে। ফিরে গেলে প্রথমেই সবাই ব্যঙ্গ বিদ্রূপে মেতে উঠবে। ঝলমলে স্বপ্নের পৃথিবীটা ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেল। সামনে শুধু নিরন্ধ্র অন্ধকার।

    টুল থেকে উঠে সমর যন্ত্রের মত এগিয়ে চলে। একটা ছেলের গায়ে ধাক্কা মেরে হাতের বইগুলো ফেলে দেয়। বই কুড়োতে কুড়োতে ছেলেটা বিরক্ত হয়ে বলে, ‘দেখে চলতে পারেননা,কানা নাকি!’ সামনেই টয়লেট। ভেতরে কেউ নেই। বেসিনের সামনে এসে সমর কান্নায় ভেঙে পড়ে। অনেক কষ্টে এতক্ষণ কান্না চেপে ছিল। কান্নার দমকে দমকে বুকটা যেন ছিঁড়ে খুঁড়ে যেতে চায়। নাক গলা সর্দিতে ভারি হয়ে আসে।

    ‘ভাই কাঁদছ কেন?’ চম্‌কে ফিরে সমর দেখে একটা ছিপছিপে লম্বা ছেলে তার দিকে সহানুভূতি ভরা চোখে চেয়ে আছে। শ্যামবর্ণ সুন্দর চেহারা। সমর লজ্জা পেয়ে রুমাল দিয়ে মুখ ঢাকে। ছেলেটার কাছ থেকে চোখের জল আড়াল করতে চায়। সমরের পিঠে হাত রেখে ছেলেটা মিষ্টি স্বরে বলে, ‘কাঁদছ কেন? লজ্জার কি আছে? আমাকে বলনা তোমার কি হয়েছে।’

    কান্না জড়ানো স্বরে সমর বলে, ‘আমি নর্থ বেঙ্গল থেকে কাল বিকেলে এসেছি। কলেজে এসে শুনলাম আমাদের এডমিশান টেষ্ট হয়ে গেছে। প্রেসিডেন্সিতে আর ভর্তি হতে পারবনা। ফিরে গিয়ে কারো কাছে মুখ দেখাতে পারবনা। তা ছাড়া অন্য কোন কলেজে দরখাস্তও করিনি। এখন আমি কি করব?’ ছেলেটা মনদিয়ে সমরের সব কথা শুনল, তারপর হেসে বলল, ‘তুমি কেঁদনা,বোধ হয় ম্যানেজ হয়ে যাবে’।

    ছেলেটার কথায় সমরের মনে আবার আশা জেগে উঠল। কিন্তু ম্যানেজ হবেই বা কি করে? সমর প্রশ্ন করতেই ছেলেটা বলে, ‘শুধুমাত্র যারা হায়ার সেকেন্ডারী পাশ করেছে তাদের এডমিশান টেষ্ট হয়েছে, প্রি- ইউনিভার্সিটি আর সিনিয়র কেম্ব্রিজ পাশ করে যারা এসেছে তাদের টেষ্ট এখনো বাকী আছে। তোমার সমস্যা যদি হেড অব দি ডিপার্টমেন্টকে বুঝিয়ে বলতে পার তবে তিনি নিশ্চয় তোমাকে টেষ্টে বসার সুযোগ দেবেন। খুব ভালো লোক’।

    আশা নিরাশার দোলায় দুলতে দুলতে সমর ছেলেটার সাথে চলতে থাকে। প্রশ্ন করে, ‘আপনি কোন ইয়ারে পড়েন?’ ছেলেটা বলে, ‘আমি এই কলেজ থেকেই এবছর পি.ইউ.(Pre-University)পাশ করেছি। এড্‌মিশান টেষ্টে বসব। আমাকে আর আপনি করে বোলনা। আমার নাম সুবল রায়। তোমার?’

    ‘সমর দত্ত’।

    কয়েকটা জমকালো পোশাক পরা মেয়ে মেমদের মত ইংরেজি বলতে বলতে আসছিল। সুবল বেশ সুন্দর ইংরেজিতে প্রশ্ন করল হেড অব দি ডিপার্টমেন্ট এসেছেন কিনা। একটা স্মার্ট মেয়ে তড়বড় করে কি বলল। সমর কিছু বুঝতে পারলনা। সুবলকে প্রশ্ন করে জানল উনি এখনো আসেননি। তবে একটু পরেই তাঁর ক্লাশ আছে।

    লাইব্রেরীতে বসে অপেক্ষা করতে করতে সমর অস্বস্তি বোধ করতে থাকে। পোশাক আসাক চালচলনে চারিদিকের ছেলেমেয়েগুলো যেন ভিন্ন জগতের। কত সুন্দর ইংরেজি বলছে। আনাড়ি গেয়োঁ সমর কোনোদিন ওদের নাগাল পাবেনা। সমর চুপসে গেল, খুব নার্ভাস বোধ করতে লাগল।নাহয় এডমিশান টেষ্টে বসার সুযোগ পেল; কিন্তু কি করে এসব ছেলেমেয়েদের সাথে পাল্লা দিয়ে সিলেক্টেড হবে! সুবলের আশ্বাসে যে ক্ষীণ আশার আলো দেখেছিল, তা ক্রমে ম্লান হয়ে আসতে থাকে। জলপাইগুড়ি ফিরে যাওয়ার চিন্তা দুঃস্বপ্নের মত সমরকে তাড়া করতে থাকে।

    লাইব্রেরির সামনেদিয়ে গট গট করে হাঁটতে হাঁটতে এক ভদ্রলোক চলে গেলেন। পাশের ছেলেটা বলল, ‘স্যার এসে গেছেন; আপনার কি দরকার আছে বলছিলেন। এখনো ক্লাশের দেরি আছে। দেখা করে আসুন’।

    লাইব্রেরি থেকে বেরিয়ে সমর দেখে সুবল ফিরে আসছে। সুবলকে দেখে সমর মনে বল পায়। একরকম জোর করে নিজেকে টেনে নিয়ে স্যারের চেম্বারের সামনে দাঁড়ায়। পর্দা ফাঁক করে কাঁপা কাঁপা গলায় বলে, ‘মে আই কাম ইন স্যার?’

    স্যারের চেম্বার থেকে বেরিয়ে সমর নিজেই বুঝতে পারেনা কি করে স্যারকে সব কিছু বলতে পারল। সমরের মুখে লাজুক হাসি দেখে সুবল বলে ওঠে, ‘কেমন আমি বলে ছিলামনা। টেষ্টে এলাও হলে ভরপেট খাইয়ে দিতে হবে কিন্তু’।

    এডমিশান টেষ্টে উত্তীর্ণ দের তালিকার সামনে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে সমর। বুক ঢিপ ঢিপ করতে থাকে। তাকিয়ে দেখতে সাহস হয়না। অনেক কষ্টে প্রায় দম বন্ধ করে সমর লিষ্টের দিকে তাকায়। দ্রুত চোখ বুলিয়ে যায় নাম গুলোর উপর দিয়ে। প্রথমেই সুবলের নাম। আর দু-তিনটে নামের পরে ঐত স্পষ্ট করে লেখা সমর দত্ত। সমরের শরীর দিয়ে উষ্ণ রক্তস্রোত প্রবাহিত হতে থাকে। উত্তেজনায় হাত-পা কাঁপতে থাকে। তার পর সংশয় জাগে, ওটা অন্য কোন সমর দত্ত নয়তো! পিঠে একটা হাতের স্পর্শে ফিরে তাকায়। সুবল মিটিমিটি হাসছে, ‘এবার আমার খাওয়াটা?’

    কলেজ স্ট্রীট পেরিয়ে সমর আর সুবল কফি হাউসের দিকে এগিয়ে চলে। কফি হাউসের সিঁড়ির মুখে চিত্রাভিনেতা সৌমিত্র চ্যাটার্জি ওদের পাশ কাটিয়ে যান। সমর বোকার মত হাঁ করে চেয়ে থাকে। সুবল হেসে বলে, ‘সৌমিত্র প্রায়ই কফি হাউসে আসেন’। সমর অবাক হয়ে ভাবতে থাকে গ্রাম্য জীবন থেকে সে সম্পূর্ণ এক স্বপ্ন মাখা নতুন জগতে এসে পড়েছে। সংশয় জাগে, স্বপ্ন দেখছে নাত।

    কফি হাউসে এলাহি কান্ড। সমস্ত ঘর জুড়ে অসংখ্য টেবিলের চার পাশে ছেলেমেয়েদের জটলা। এক একটা টেবিলের পাশে ছ-সাতটা বেতের চেয়ার টেনে নিয়ে ছেলে মেয়েরা গাদাগাদি করে বসে হাসি কলরবে মেতেছে। সারা ঘর জুড়ে মৌমাছির গুনগুন রবের মত শব্দপ্রবাহ অনর্গল বয়ে চলেছে। সিগারেটের পর সিগারেট পুড়ছে। কত স্মার্ট ছেলে, কত সুন্দর সুন্দর মেয়ে। সমরের অনুভূতিতে স্বপ্নের শিহরণ জাগে। সেই কৈশোর বয়স থেকে লালন করা কল্পনার পৃথিবীর দুয়ার যেন আজ উন্মোচিত হয়েছে। সেকি পারবে এসব ছেলেমেয়ের সাথে একাত্মতা গড়ে তুলতে! উত্তর-পূব কোণে একটা টেবিলের পাশে কালো মোটা মধ্যবয়সী ভদ্রলোক আনমনে চুরুট টানছেন। পাশের দুটো চেয়ার খালি। সুবল ভদ্রলোকের কাছ থেকে জেনে নিয়ে একটা চেয়ারে বসে পড়ল। সমরও সুবলকে অনুসরন করল। এদিক ওদিক চোখ ঘুরিয়ে আজব দুনিয়ার আজব কান্ড কারখানা দেখতে লাগল।

    মাথায় পাগড়ি পরা সাদা পোশাকের ওয়েটাররা ব্যস্ত সমস্ত ভাবে এদিক ওদিক ছোটাছুটি করছে। জল আর খাওয়ার টেবিলে টেবিলে পৌঁছে দিচ্ছে, বিল মিটিয়ে নিচ্ছে। মাঝে মাঝে আড্ডাদারদের সাথে হাসি মস্করাও করছে। সুবল মুখ দিয়ে ‘উস্‌-উস্‌’ শব্দ করে হাতে তুড়ি মারতেই একজন ওয়েটার টেবিলের সামনে এসে দাঁডাল। সুবল বলে, ‘দুটো মোগলাই আর কফি’। সমরকে করুণ চোখে চাইতে দেখে সুবল হেসে বলল, ‘আজ আমিই খাওয়াচ্ছি, টেস্টে ফার্স্ট হয়েছি বলে। তোমার খাওয়ানোটা বাকি রইল।’

    এই অপরিচিত পরিবেশে বসে সমরের অস্বস্তি হতে থাকে। নিজের ঢোলা প্যান্ট, অবিন্যস্ত চুলকথাবার্তা-চালচলন সবকিছুই এখানকার পরিবেশের সাথে সম্পূর্ন বেমানান। সমরের বারবার মনে হয় সবাই বুঝি ওর বোকাবোকা গ্রাম্য চেহারার দিকে তাকিয়ে আছে। পাশের টেবিলে একটা মেয়েকে হাসতে দেখে মনে হয় সমরকে দেখেই বুঝি হাসছে। খাওয়ার সময় আরো ফ্যাসাদ। কাঁটা চামচ ব্যবহার করার অভ্যাস নেই। সুবলকে অনুকরন করার অনেক চেষ্টা করেও সমর পেরে ওঠেনা। ওর আনাড়িপনা দেখে সবাই বুঝি হাসছে। সমরের হাত আর চলতে চায়না।

    ‘কি একা একা খুব খাচ্ছ’ বলতে বলতে একটা মেয়ে হাত বাড়িয়ে সুবলের প্লেট থেকে এক টুকরো মোগলাই তুলে মুখে পুরল। মোটা ভদ্রলোক অনেকক্ষণ উঠে গেছেন। মেয়েটা খালি চেয়ারটা টেনে নিয়ে সমরের পাশে ঘন হয়ে বসে পড়ল। শাড়ীর প্রান্ত সমরের কাঁধ ছুঁয়ে যেতেই সমরের শরীরে কেমন একটা শিহরণ জাগে; সমর লজ্জায় জড়োসড়ো হয়ে পড়ে। হাত থেকে কাঁটা চামচ পড়ে যায়।

    ‘খুব লাজুক দেখছি। বাচ্চা ছেলেটা কে রে সুবল?’ মেয়েটা হাসতে হাসতে প্রশ্ন করে।

    ‘জলপাইগুড়ি থেকে এসেছে। আমার সাথে ফার্স্ট ইয়ারে ভর্তি হবে।’

    ‘তাই বুঝ্‌ঝি!’ মেয়েটা ন্যাকামী করে ‘ঝ’ এর উপর জোর দিয়ে বলতেই সমর নিজের অজান্তে হেসে ওঠে। মেয়েটা সমরের দিকে ঝুঁকে পড়ে বলে, ‘বাচ্চা দেখছি হাসছে। লজ্জা কেটেছে খোকা? তোমার নাম কি? আমার নাম রত্না রায়। ফিজিক্সে ভর্তি হব’

    সমর অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় বলে, ‘সমর দত্ত’।

    রত্না হেসে ওঠে, ‘মেয়েদের দিকে তাকাতেও লজ্জা; কি করে এই কো এডুকেশন কলেজে পড়বে!’ রত্না কথা বলতে বলতে সমরের হাতে নিজের উন্মুক্ত

    Enjoying the preview?
    Page 1 of 1