চিলেকোঠায় আকাশ The Remote Sky
()
About this ebook
একসময় খবরের কাগজ জেলা শহরে পৌঁছতো একদিন পর! তখন পুরনো-বাসি খবর পড়াই ছিলো সাধারণ মানুষের সংবাদ-আকাক্সক্ষা মেটানোর সবচেয়ে ভালো উৎস। আজ এখানে দাঁড়িয়ে সেইসব দিনের কথা কি ভাবা যায়? এখন সকালে খবরের কাগজ ছাড়া আমাদের দিন শুরু হয় না। কাজেই অতি পুরনো এই মুদ্রিত গণমাধ্যমের প্রাপ্যতা যতো বেড়েছে, খবরের জন্য মানুষের আগ্রহও ততোটাই বেড়েছে। সাংবাদিকতায় এসেছে গভীরতর অনুসন্ধানের প্রবণতা। রেডিও টেলিভিশন তো আছেই, ইন্টারনেটে বসলেই এখন বাটন চেপে বিশ্বের একপ্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে ঘুরে আসা যায়। তথ্য আদান-প্রদান যতো সহজ হয়েছে, বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক ভাবনা কি ততোটা ছড়িয়েছে? নাকি এখনো সেই কেন্দ্রমুখীই হয়ে আছে সবকিছু? এই বইয়ে লেখক চেষ্টা করেছেন কেন্দ্রের পাশাপাশি প্রান্তের বৈশ্বিক ভাবনাকে তুলে আনতে।
Reviews for চিলেকোঠায় আকাশ The Remote Sky
0 ratings0 reviews
Book preview
চিলেকোঠায় আকাশ The Remote Sky - Shiblee Noman
চিলেকোঠায় আকাশ
ক্লাস সিক্স থেকে সেভেনে উঠেছি সবে। জানুয়ারি মাস। হিমশীতল ঠা-া। সেই সময় কেডি স্কুলে সেভেন মানেই একটা বড় বড় ভাব। কারণ সেভেনের দুটো শাখাই বিশাল স্কুল ক্যাম্পাসের মধ্যে আলাদা এক স্থানে। অডিটরিয়াম ভবনে। সকালে স্কুলে গিয়ে আমরা সিঁড়িতে বসে থাকতাম। বছরের শুরুতে ক্লাসের বালাই নেই। অডিটরিয়ামের বিশাল বারান্দায় টেবিল টেনিসের বোর্ড। ব্যাট হাতে পাওয়াই মুশকিল। সিরিয়ালের অন্ত নেই। দুপাশের মাঠে গ্রুপ করে সব খেলছে। আমরা যারা কোনোকিছুতেই সিরিয়াল পেতাম না, তাদের কাজ হতো গপ্পোবাজি। চলতো দুপুর অবধি।
আমরা তখন তিনগোয়েন্দা’র পোকা। রকিব হাসানে বিমোহিত সবাই। এমনই একদিন শহীদ মিনারের সিঁড়িতে বসে আমি, বন্ধ তৌহিদুর রহমান রিয়াদ আর কামাল শাহরিয়ার সুমন আড্ডা দিচ্ছি। এমন সময় বন্ধু আল মামুন রাজ এসে হাজির। হাতে দুটো ঢাউস সাইজের পেপারব্যাক বই। রিয়াদ চেয়েছে পড়ার জন্য। হাতে নিলাম। জুলভার্নের সব উপন্যাসের ভলিউম। সেবা প্রকশনীর বই। মনে ধরলো খুব, একটা উপন্যাসের শিরোনাম ‘নাইজারের বাঁকে’। রিয়াদকে অনেক কষ্টে ম্যানেজ করে প্রথম খ-টা নিলাম। রাত দশটার মধ্যেই খেয়েদেয়ে শুয়ে পড়ার কঠোর নির্দেশ। তখন লাইট বন্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু বইটা আমার পড়া চাই। উপায় বের করলাম। ছোট্ট একটা টর্চ ছিলো আমার। সেটাকেই কাজে লাগানোর চিন্তা করলাম। দশ জোড়া পেন্সিল ব্যাটারি কিনলাম। বাসায় ফিরে ছটফট করতে থাকলাম। রাত ১০টার পর লাইট নিভিয়ে টর্চ নিয়ে লেপের তলায় ঢুকে পরলাম। পড়া শুরু হলো জুলভার্ন। আমি যেনো পাগল হয়ে গেলাম। অসাধারণ সব জায়গা। স্বপ্নের মতো বিবরণ। আমি চোখের সামনে যেনো সব দেখছি! গোগ্রাসে গিলেছিলাম জুলভার্ন। কিছুটা বড় হওয়ার পরেও জুলভার্ন বলতে পাগল ছিলাম আমি। পড়তাম আর ভাবতাম, ইশ! যদি এই মানুষটার মতো সারা দুনিয়ে ঘুরে বেড়িয়ে লিখতে পারতাম! জুলভার্ন মানেই তখন আমার চোখে আশি দিনে দুনিয়া ঘুরে আসা এক মানুষ! কিন্তু কিছুদিন পর হোচট খেলাম। জানতে পারলাম, জুলভার্ন সারাটা জীবন তার চিলেকোঠার এক কোণে বসেই লিখে ফেলেছেন অসাধারণ সব কাহিনি। আমি প্রথমে বিশ্বাস করি নি। পরে যখন রেফারেন্স পেলাম, তখন আশ্চর্য হতাম, কীভাবে একজন মানুষ পারে এমন? সেই থেকে ভ’গোল আর ভ’রাজনীতি আমার মাথায় পোকার মতো ঢুকে গেলো।
রাজশাহী পড়তে এসে আমার আরেকটা প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা হলো। আমি অনেক দেশভাগে দেশত্যাগকারী পরিবারের দেখা পেলাম। তাদের খুব ভেতর থেকে জানা ও বোঝার সুযোগ পেলাম। আমি বিস্মিত হয়ে লক্ষ্য করলাম ভ’খ-টা শুধু কেটে টুকরো করা হয়েছে, কিন্তু রাষ্ট্রের ভ’গোল ও রাজনৈতিক অবস্থানকে ডিঙিয়ে ভ’খ-ের সঙ্গে ভ’খ-ের একটা আত্মার সম্পর্ক থাকে। সেটা চাইলেই ভুলে যাওয়া যায় না। আমার এসব চিন্তায় বাতাস দিলেন হাসান আজিজুল হক। তাঁর সঙ্গে কথা বলে বোঝার চেষ্টা করেছি, সেই সময়ের বাস্তবতাটা। রাজনীতি কীভাবে খ-িত সত্তা তৈরি করে, তা খুব ভালোভাবেই টের পেয়েছি। সেই সময় থেকেই আমার মনে হয়েছে, বাংলাদেশ নামের রাষ্ট্রটাকে সঠিকভাবে চালাতে হলে ভারতের রাষ্ট্র ও রাজনীতি সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকা জরুরি। ভারতপন্থি কিংবা ভারতবিরোধী তকমা পরস্পরের পিঠে সেঁটে দিয়ে নয়, বরং সবাইকে বাংলাদেশপন্থি বলে বিবেচনা করেই এই ধারণা অর্জন করা প্রয়োজন।
২০১১ সালে যখন অনেক স্বপ্ন নিয়ে একদল তরুণ দৈনিক সোনার দেশের নবযাত্রা শুরু করে, তখনই পাঠকদের আশ্বাস দেয়া হয় যে, এই কাগজ তাদের ভ’রাজনীতি নিয়ে কৌত’হলী করে তুলবে। হলোও তাই। সোনার দেশে লিখতে গিয়েই প্রথম অনুভব করলাম, আমাদের দেশের গণমাধ্যমগুলোর সীমাবদ্ধতা কোন পর্যায়ের। মূলধারার গণমাধ্যমের বাইরে বেরিয়ে নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে আন্তর্জাতিক সংবাদগুলোকে সামনে আনতে না পারলে সামনে সমূহ বিপদ। সোনার দেশ তা করে দেখিয়েছে। তাই অনেকের বাঁকা হাসি উপেক্ষা করে ২০১৩ সালের অক্টোবর থেকেই সোনার দেশ ‘রিক ট্রায়াঙ্গল’ প্রভাবে এ অঞ্চলের ভবিষ্যত ভ’রাজনীতি নিয়ে সিরিজ ছেপেছে। এমন আরো অনেক দৃষ্টান্ত রয়েছে।
আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা বলে, বাংলাদেশের বিকাশের সবচেয়ে বড় পিছুটান অতিরিক্ত কেন্দ্রমুখী প্রবণতা। ঢাকা না গেলে আমি উমুক পাবে না, তমুক পাবো না- এইসব চিন্তা যতোদিন লাগামহীন থাকবে, ততোদিন দেশটা ধীরেই এগোবে। আমার কাছ থেকে সব সময়ই মনে হয়েছে, রাজশাহী অঞ্চলটা বাংলাদেশের রাজনীতির জন্য ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। শুধু সীমান্ত এলাকা বলেই নয়, এখানে সীমান্তের দুপাশেই যেমন আত্মীয়দের বসবাস, তেমন যাতায়াতও রয়েছে। ফলে এই অঞ্চলের রাজনীতির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে অনেক কিছুই ঘটানো যায়। অতি সম্প্রতি তার অনেক দৃষ্টান্তও দেখা গেছে। তাই বাংলাদেশের তো বটেই, এই অঞ্চলের মানুষগুলোর জন্য ভ’রাজনীতিটাকে ঠিকভাবে বোঝা জরুরি বলে আমি সব সময়ই মনে করে এসেছি। কারণ খুব শিগগির এ অঞ্চলের আন্তঃসীমান্ত ভৌগলিক ও বাণিজ্যিক গুরুত্ব অনেক বাড়বে। সেই বিবেচনা থেকেই একটানা দুবছর সোনার দেশে লিখেছি।
আমার লেখাপত্র পড়ে অনেক শুভাকাক্সক্ষীই বলেছেন, আমি হয়তো কপি পেস্ট করে চালিয়েছি! আবার অনেকে ভেবেছেন, আমি বহু দেশ ঘুরেছি। ভ’মিকার বদলে লিখে ফেলা এই ছোট রচনায় শুধু এটুকু বলে রাখি, দুটোর কোনোটিই ঠিক নয়। আমি কপি-পেস্ট করি না, পছন্দও করি না। আর বহুদেশ ঘোরার সৌভাগ্য আমার মোটেই হয় নি। আমি শুধু ভারতেই গিয়েছি। দ্বিতীয় ভাবনার পিঠে এই তথ্য হাজির করলে ভাবনাকারীর প্রথম প্রশ্ন থাকে, এ তাহলে কীভাবে সম্ভব। আমি বলি, কেন সম্ভব নয়? এখন প্রযুক্তি হাতের মুঠোয়, পড়াশোনা থাকলেই দিনের পর দিন এমন লেখা যাবে। আমি কাউকেই বলি নি, আমি আজো সেই জুলভার্নেই মেতে আছি। চিলেকোঠায় বন্দী থেকে যদি ক্যাপ্টেন নিমোর মতো অসাধারণ চরিত্রকে দিয়ে অসাধারণ অভিযান তিনি চালিয়ে দিতে পারেন সেই যুগে, তাহলে এ যুগে কি আমি পারবো না?
কাজেই কখনো কখনো চিলেকোঠায় বন্দী মানুষের আঁধার ছাদ ফুঁড়ে মানুষ উঁকি দেয় আকাশের জন্য। তাই ভ’রাজনীতি নিয়ে প্রান্তিক মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে লিখেই ফেললাম ‘চিলেকোঠায় আকাশ’। এখানে আসলে বিভিন্ন জায়গায় আগে প্রকাশিত আমার আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও ভ’রাজনীতি বিষয়ক লেখার সংকলন করা হয়েছে। এগুলোর কোনো কোনোটি লেখা হয় নি, অনেকটা প্রতিবেদনের মতো হয়েছে। তারপরেও গ্রন্থিত হলো। কারণ চিলেকোঠায়ও আকাশ আসে!
২০ নভেম্বর ২০১৪
তিস্তায় আশার আলো বেঁচে আছে
আকাশ থেকেই তার থমথমে কালো মুখ দেখা যাচ্ছিল। বিমানের চাকা রানওয়ে ছোঁয়ার আগেই বোধকরি কলকাতা বুঝিয়ে দিলো, মুখ ভার করে বৃষ্টি ঝরানোরই পরিকল্পনা তার। বিমানবন্দরটাকে একেবারেই শান্ত লাগছিল। আনুষ্ঠানিকতা সেরে বাইরে বেরিয়েই বৃষ্টির আসল চেহারাটা দেখা হলো।
পার্কিং থেকে হোটেলের গাড়িতে করেই বেরিয়ে এলাম। ড্রাইভারের নাম কেরামত। মুর্শিদাবাদ বাড়ি। ফসল ফলিয়ে আর দিন চলে না, তাই ‘দিন বদলাতে’ কলকাতায় গাড়ি চালকের চাকরি নেয়া। মূল পথে গাড়ির জট বেশি। তাই কেরামত আমাদের নিয়ে গেলো নিউ টাউনের ভেতর দিয়ে। নিউ টাউন আসলেই নতুন শহর। চওড়া রাস্তা, একখানে সব এক প্যাটার্নের বাড়ি, বহুতল ভবন, কিছু ফাঁকা জমি। সবমিলিয়ে মনে হলো, কলকাতা নয়, এ যেন অন্য কোনোখানে। রাস্তার মাঝখানে উঁচু উঁচু পিলার করে রাখা হয়েছে। এখানে ওখানে নির্মাণ কাজ চলছে। কেরামতের কাছ থেকে জানতে চাইলাম, পিলারগুলো সম্পর্কে। মনে হলো কেমন একটা অনাগ্রহী কণ্ঠে বললো, হবে হয়তো মেট্রো-ফেট্রো কিছু। কদ্দিন লাগবে কাজ শেষ হতে? কেরামত নাকি অনেক দিন ধরেই দেখছে এই অবস্থা। কাজ এগুচ্ছে না। কারণটা কী? কেরামতের সোজাসাপটা জবাব, ‘আপনি রাজ্য সরকারে থেকে কেন্দ্র সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করবেন, আর ওদের কাছ থেকে টাকা পয়সা পাবেন? মুরোদ থাকলে এখন নিজে করুক।’
কলকাতায় ১০ দিন থেকেছি এবার। অনেকের সঙ্গেই কথা বলেছি। চায়ের আড্ডা থেকে শুরু করে জানাশোনাওয়ালা মানুষ কিংবা তরুণদের আড্ডা-সবখানেই আমি কেরামতের কথার প্রতিচ্ছবি দেখেছি। মনে হয়েছে, তিস্তার পানি বণ্টন আর স্থলসীমা চুক্তি নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের যে অবস্থান কলকাতার একটি বড় অংশের মানুষ সেটাকে ঠিক বলে মানছেন না। রবীন্দ্র সদনে আড্ডায় পরিচয় হলো তরুণ অরবিন্দের সঙ্গে। দেশ নিয়ে খোঁজখবর রাখেন, ভাবেনও। এরকম ওরা বেশ কজনই আছে। ওদের কাছ থেকেই জানতে পারলাম, এই প্রজন্মের বেশিরভাগই তিস্তা ও স্থলসীমা চুক্তিতে কোনো বাধা দেখে না। অরবিন্দের মতে, তিস্তায় তো এমনিতেই পানি থাকে না। ভারতের দিকেই বাঁধ দিয়ে দিয়ে নদীটার দুরবস্থা। অনেক দিন ড্রেজিংও নেই। তাই একটু বৃষ্টি হলেই নদী উপচে যায়। ব৭াধ কাটতে হয়। সেখানে দুদেশের পানি চুক্তি হলে কী সমস্যা তা অরবিন্দরা বুঝতে পারেন না। স্থলসীমা চুক্তি নিয়ে কারো জমি হারানোর প্রশ্ন নেই। তাহলে সেখানেও সমস্যাটা কী, তা বুঝতে পারেন না তিনি। অরবিন্দ মনে করেন, কেন্দ্রের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে নিজের শক্তি দেখাতেই মমতার এই পথে হাঁটা। তার এই রাজনীতির বিস্তারিত নিয়েও কথা হলো। তবে সেটা অন্য পর্বে জানাবো। তিস্তা আর স্থলসীমা নিয়েই থাকি।
বোঝাই যাচ্ছে, তিস্তা আর স্থলসীমা চুক্তির সব থেকে বড় বাধা যে মমতা, সে ব্যাপারে এখন আর কারো কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু মমতা কেন হঠাৎ করে এই অবস্থানে গেলেন? কেউ কেউ মনে করেন, এর পেছনে তার মন্ত্রণাদাতাদের হাত রয়েছে। তাদের অনেকেরই ঢাকায় হাসিনা সরকার নিয়ে অস্বস্তি রয়েছে বলে তাদের ধারণা। সেই অস্বস্তি কী কারণে তা নিয়ে অন্য একটি পর্বে লিখবো। তবে আমজনতার এমন ধারণার বাইরে বিশ্লেষকরা আসলে কী ভাবছেন, জানতে এক সন্ধ্যায় চলে গেলাম দৈনিক স্টেটসম্যানের সম্পাদক মানস ঘোষের কাছে। চৌরঙ্গী চত্বরে বিশাল এক প্রাচীন দালান। পুরনো আমলের একটা লিফট। রিসিপসন থেকে ভেতরে ঢুকে বিশাল এক কর্মযজ্ঞ দেখলাম। সেগুলো পেরিয়ে এক কোণায় মানস দার ঘর। বিশালাকায় এই মানুষটি স্বাধীনতা পূর্ব ও পরবর্তীকালে দীর্ঘসময় ঢাকায় দ্য স্টেটসম্যানের স্থায়ী প্রতিনিধি ছিলেন। বাংলাদেশের অনেকের সঙ্গেই নিয়মিত যোগাযোগ। দুদেশের রাজনীতি নিয়েই ভাবেন। বাংলাদেশ থেকে গিয়েছি শুনে পুরনো বন্ধুদের খোঁজখবর নিলেন। দুজনের সঙ্গে কথাও বলিয়ে দিলাম। গত ২২ সেপ্টেম্বর নিজের কাগজেই মানস দা এসব নিয়ে একটি লেখাও লিখেছেন। আলোচনা চললো সেটা নিয়েই। মানস দার মতে, ২০১১ সালে যখন মনমোহনের সঙ্গে ঢাকায় মমতা না এসে চুক্তির ফর্মুলা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন, তখন মমতার উদ্দেশ্য ছিল ভিন্ন। রাজ্য সরকারের দায়িত্ব নিয়েই তিনি দাবি করেছিলেন, পূর্ববর্তী সরকার দুই লাখ কোটি টাকার দেনা চাপিয়ে দিয়ে গেছে। মমতা চেয়েছিলেন এই ঋণের ওপর সুদ নেয়া তিন বছর বন্ধ রাখুক কেন্দ্র সরকার আর সেই সঙ্গে ঋণ পরিশোধের প্রক্রিয়াও নতুন করে তৈরির প্রস্তাব ছিল তার। কিন্তু সেই প্রস্তাব কেন্দ্র গ্রহণ করে নি। মানস দা মনে করেন, মমতা আসলে তিস্তা নিয়ে একটা ট্রাম্পকার্ড খেলে তার সেই দাবিটা আদায় করে নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু হয়েছিল উল্টোটা। মমতার ইচ্ছে তো পূরণ হয়ই নি, বরং বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে রাজ্যগুলোকে যে উন্নত, সামান্য উন্নত ও অনুন্নত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, সেখানে পশ্চিমবঙ্গ কেন্দ্রের কাছ থেকে বাড়তি কোনো অনুদান পাবে না। মানস দার মতে, কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্ত মমতাকে আরো তাতিয়ে দিয়েছে। ফলে তিনি কোনোমতেই আর কিছু শুনতে রাজি হন নি।
তাহলে এবার? আগামী ১১ নভেম্বর দিল্লি যাচ্ছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি। হয়তো তিস্তা আর স্থলসীমা নিয়ে সেখানেই হবে শেষ চেষ্টা। মানস দার কাছ থেকে বেরিয়ে এরপর সেই চেষ্টায় আশার আলো মিলতে পারে কিনা তা বুঝতে বেশ কয়েকজন ঘনিষ্ঠ সংবাদকর্মীর সঙ্গে কথা বললাম। সেখান থেকেই বেরিয়ে এলো, আশার আলো এখনো বেশ ভালোভাবেই