ঈমানের সৌন্দর্য / Imaner Sowndorjo (Bengali)
5/5
()
About this ebook
সৌদীআরবস্থ ইমাম মুহাম্মদ বিন সউদ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামিক দাওয়া ও জার্নালিজম অনার্স কোর্স অধ্যয়নের সময়ে ‘মাহাসিনুল ইসলাম’ ইসলামের সৌন্দর্যের উপর পাঠ্য বিষয় থেকেই লেখক এ পুস্তিকা লেখার উৎসাহ খুঁজে পেয়েছেন। এ পুস্তিকায় পাঁচটি অধ্যায়ে যথাক্রমে ঈমানের যৌক্তিকতা ও সৌন্দর্য, ফেরেশতাগণের প্রতি ঈমানের যৌক্তিকতা ও সৌন্দর্য, আসমানী কিতাবসমূহের প্রতি ঈমানের যৌক্তিকতা ও সৌন্দর্য, নবী ও রাসূলদের প্রতি ঈমান এবং আখেরাতের উপর ঈমানের যৌক্তিকতা ও সৌন্দর্য বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
ড. নজীবুর রহমান Dr. Najeebur Rahman
ড. মুহাঃ নজীবুর রহমান ১৯৬২ সালের জুন মাসে বরিশাল জেলার গৌরনদী উপজেলার পিঙ্গলাকাঠী গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর আব্বার নাম মরহুম কারী ইসহাক কবিরাজ। আম্মার নাম জবেদা খাতুন। শৈশবে তিনি পার্শ্ববর্তী গ্রামে অবস্থিত কালনা প্রাইমারী স্কুল থেকে প্রাথমিক শিক্ষা শেষে নিকটবর্তী কাসেমাবাদ আলীয়া মাদরাসা থেকে দাখিল, আলিম ও ফাযিল পরীক্ষায় কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হন। অতঃপর ১৯৮১ সালে সউদী আরবস্থ ‘ইমাম মুহাম্মাদ বিন সউদ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়’ থেকে শিক্ষাবৃত্তি লাভ করে রিয়াদস্থ ‘মা‘হাদ তা‘লিমুল্ লুগাহ আল-‘আরাবিয়া’ থেকে আরবী ভাষায় ডিপ্লোমা ও মদীনা মুনাওয়ারাস্থ ‘মা‘হাদুল আ‘লী লিদ্দাওয়া আল-ইসলামিয়া’ থেকে ‘ইসলামিক দা‘ওয়া ও সাংবাদিকতা’ বিভাগে অনার্স ডিগ্রী লাভ করেন। অতঃপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আধুনিক আরবী সাহিত্যে এম.এ ২য় স্থান ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইসলামিক স্টাডিজ এম.এ ৬ষ্ঠ স্থান অধিকার করেন। গাজীপুরস্থ দুর্বাটি আলীয়া মাদরাসা থেকে ১৯৯৮ সালে (তাফসীর গ্রুপ) কামিল ডিগ্রী লাভ করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০০৪ সালে ‘ইসলামে জিহাদের বিধান’ শীর্ষক শিরোনামে আরবী বিভাগের স্বনামধন্য অধ্যাপক আ.ফ.ম. আবু বকর সিদ্দীকের তত্ত্বাবধানে ডক্টরেট (পি.এইচ.ডি) ডিগ্রী লাভ করেন। পরে সউদী দূতাবাসে কিছুদিন কাজ করার পর সউদী আরবস্থ ‘আন্তর্জাতিক ইসলামী ত্রাণ সংস্থার ঢাকাস্থ অফিসে ইয়াতিম-প্রতিপালন বিভাগের পরিচালক হিসেবে সাত বছর ও কুয়েতী সহযোগিতায় পরিচালিত সোসাইটি অব সোস্যাল রিফর্ম ঢাকাস্থ সংস্থার শিক্ষা বিভাগের পরিচালক হিসেবে সাত বছর দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে তিনি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় গাজীপুর ক্যাম্পাসে আরবী বিভাগে সহকারী অধ্যাপক পদে কর্মরত আছেন। এছাড়া তাঁর প্রকাশিত গবেষণাকর্মের গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থসমূহের মধ্যে- (১) ইসলামে জিহাদের বিধান, (২) রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর জীবনে জিহাদ ও তার শিক্ষা, (৩) আধুনিক আরবী সাহিত্যে নাজীব মাহফুজের অবদান, (৪) সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নাগরিক অধিকার ও ইসলামী শরীয়াত, (৫) ইলমুল ফিকাহ্, (৬) ইসলামে সার্বজনীন মানবাধিকার : প্রেক্ষিত অমুসলিম অধিকার, (৭) ইসলামী বিচার ব্যবস্থার ইতিহাস, (৮) মানব-সভ্যতার গোড়াপত্তনে আল্লাহর বিধান প্রয়োগ-৪ খণ্ড, (৯) শহীদের মর্যাদা ও বিপদ-মুসিবতে অবিচল থাকার তাৎপর্য, (১০) নারী মুক্তি ও ইসলাম, (১১) সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি স্থাপন ও সুদৃঢ়করণে সামাজিক আচার-অনুষ্ঠান ও ধর্মীয় মূল্যবোধের প্রভাব ও (১২) ঈমানের সৌন্দর্য অন্যতম। অতি সম্প্রতি তাঁর লেখা- আধুনিক আরবী সাহিত্যে তাওফিক আল-হাকীমের অবদান প্রকাশের অপেক্ষায় আছে।
Related categories
Reviews for ঈমানের সৌন্দর্য / Imaner Sowndorjo (Bengali)
1 rating0 reviews
Book preview
ঈমানের সৌন্দর্য / Imaner Sowndorjo (Bengali) - ড. নজীবুর রহমান Dr. Najeebur Rahman
লেখকের কথা
‘ঈমানের সৌন্দর্য’ শীর্ষক আমার লেখা পুস্তিকাটি ঢাকাস্থ ‘আহসান পাবলিকেশন’ কর্তৃক প্রকাশিত হওয়ায় মহান রাব্বুল আলামীনের দরবারে জানাচ্ছি অসীম শুকরিয়া আলহামদু লিল্লাহ।
এ পুস্তিকাটি লেখার কাজে, সংশোধনী ও রেফারেন্স নির্দেশনায় আমার শ্রদ্ধেয় ওস্তাদ, অগণিত ইসলামী গ্রন্থের লেখক ও সম্পাদক এবং ইসলামিক ফাউন্ডেশন পত্রিকার স্বনামধন্য সহকারী সম্পাদক মাওলানা মুহাম্মদ মূসা সাহেবকে জানাচ্ছি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা। এর সাথে পুস্তিকাটি প্রকাশনায় যাঁরা সার্বিক কাজে আন্তরিকতার সাথে সহযোগিতা ও শ্রম দিয়েছেন তাঁদের সকলের প্রতি রইলো অকৃত্রিম শুভেচ্ছা ও কৃতজ্ঞতা।
সৌদীআরবস্থ ইমাম মুহাম্মদ বিন সউদ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামিক দাওয়া ও জার্নালিজম অনার্স কোর্স অধ্যয়নের সময়ে ‘মাহাসিনুল ইসলাম’ ইসলামের সৌন্দর্যের উপর পাঠ্য বিষয় থেকেই আমার এ পুস্তিকা লেখার উৎসাহ খুঁজে পেয়েছি। এ শিরোনামের পরে ইসলামের মৌলিক বিষয়সমূহ যেমন : ইবাদত, আদব ও আখলাক এবং মোয়ামালাতের সৌন্দর্যের উপর পর্যায়ক্রমে গ্রন্থ রচনার পরিকল্পনা করেছি।
এ পুস্তিকায় পাঁচটি অধ্যায়ে যথাক্রমে ঈমানের যৌক্তিকতা ও সৌন্দর্য, ফেরেশতাগণের প্রতি ঈমানের যৌক্তিকতা ও সৌন্দর্য, আসমানী কিতাবসমূহের প্রতি ঈমানের যৌক্তিকতা ও সৌন্দর্য, নবী ও রাসূলদের প্রতি ঈমান এবং আখেরাতের উপর ঈমানের যৌক্তিকতা ও সৌন্দর্য বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
পুস্তিকাটিতে যদি ভুলত্রুটি পরিলক্ষিত হয়, দয়া করে জানালে পরবর্তী সংস্করণে সংশোধন করে ছাপানোর চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।
মহান আল্লাহর নিকট আমার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তাঁরই সন্তুষ্টির জন্য বাস্তবায়নের তাওফীক কামনা করে এর মাধ্যমে আমাদের ইহলৌকিক সার্বিক কল্যাণ ও পারলৌকিক পরম শান্তির তাওফীক কামনা করছি। আমীন ॥
মুহাঃ নজীবুর রহমান
মিরপুর, ঢাকা
২০ নভেম্বর, ২০১৪ইং
প্রথম অধ্যায় : ঈমানের যৌক্তিকতা ও সৌন্দর্য
১.১. আল্লাহর অস্তিত্ব ও তাওহীদ
মানব ইতিহাসের প্রাচীনতম যুগের যেসব তথ্য আমাদের হাতে এসেছে এবং প্রাচীনতম জাতিসমূহের যেসব ধ্বংসাবশেষের সন্ধান আমরা পেয়েছি তা থেকে বুঝা যায় যে, প্রত্যেক যুগের মানুষ কোনো না কোনোভাবে একজন স্রষ্টাকে মেনে নিয়েছে এবং কোনো না কোনো পদ্ধতিতে ইবাদত করেছে। আজো পৃথিবীতে যত জাতি রয়েছে- তারা নিতান্ত আদিম প্রকৃতির হোক অথবা সুসভ্য হোক, তাদের সবারই মধ্যে একটি বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান রয়েছে যে, তারা কোনো বিশেষ সত্তাকে মহা-প্রভু বলে মানছে, তার ইবাদত করছে। এ থেকে বুঝা যায়, একজন স্রষ্টার ধারণা মানুষের প্রকৃতির সাথে মিশে আছে। মানব সত্তার অভ্যন্তরে এমন একটি বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা তাকে বাধ্য করছে কাউকে মহা-প্রভু মানতে ও তার ইবাদত করতে। প্রকৃতপক্ষে মানুষ আল্লাহর গোলাম হয়েই জন্মগ্রহণ করে। স্বাভাবিকভাবেই সে পরমুখাপেক্ষী, দুর্বল ও দুঃস্থ। তার অস্তিত্ব বজায় রাখার জন্য যে অসংখ্য জিনিসের প্রয়োজন, তা তার শক্তির আধিপত্যের অধীন নয়। এমন অনেক জিনিস আছে যা তার অনিষ্ট সাধন করে, তার সারা জীবনের পরিশ্রম মুহূর্তে বিনষ্ট করে দেয়, তার সকল আশা-আকাক্সক্ষা ভূলুণ্ঠিত করে দেয়, তাকে রোগ-ব্যাধি ও মৃত্যুর কোলে ঠেলে দেয়। সে চায় সেই সব অনিষ্টকর জিনিসকে ধ্বংস করে দিতে; কখনো তা ধ্বংস হয়, কখনো হয় না। তার ফলে সে উপলব্ধি করে যে, উক্ত অনিষ্টকারী জিনিসের আনা-গোনা হওয়া বা না হওয়ার উপর মানুষের কোনো কর্তৃত্ব নেই।
এমন অনেক কিছুই রয়েছে, যার শান-শওকত ও বৃহৎ আকৃতি দেখে মানুষ ভীত হয়ে পড়ে। পাহাড়, নদী ও ভয়াবহ হিংস্র জানোয়ারের রূপ যখন তার চোখের সামনে আসে, ঝড়-ঝঞ্ঝা, প্লাবন ও ভূমিকম্পের নগ্ন রূপ সে দেখতে পায়, মেঘের গর্জন, অন্ধকার ঘনঘটা, বজ্রের হুঙ্কার, বিজলির চমক ও মুষলধারায় বৃষ্টির দৃশ্য একের পর এক যখন তার সামনে আসতে থাকে, তখন সে দেখে যে, এসব জিনিস কত বড়, কত শক্তিশালী আর তার তুলনায় সে নিজে কত দুর্বল কত নগণ্য!
এসব বিভিন্ন প্রাকৃতিক দৃশ্য ও তার নিজের দীনতার বিভিন্ন প্রমাণ চোখের সামনে দেখে মানুষের অন্তরে স্বতই নিজের দাসত্ব (বন্দেগী), পরমুখাপেক্ষিতা ও দুর্বলতার অনুভূতি জাগ্রত হয় এবং সেই অনুভূতির সাথে সাথেই মনের মধ্যে জন্ম নেয় এক মহান স্রষ্টার ধারণা। যে হাতের ইঙ্গিতে চালিত হয় এসব মহাশক্তি, তাঁর ধারণা তার মনে জাগ্রত হয়। তাঁর শক্তির অনুভূতি মানুষকে বিনয় ও নম্র করে, তাঁরই কাছে সাহায্য ভিক্ষা করতে বাধ্য করে। তাঁর কল্যাণদায়ক শক্তির অনুভূতি মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে বিপদ মুক্তির জন্য তাঁরই কাছে হস্ত প্রসারিত করতে। তাঁর অনিষ্টকর শক্তির অনুভূতি মানুষকে বাধ্য করে তাঁর ভীতি অন্তরে পোষণ করতে এবং তাঁর অসন্তুষ্টি থেকে আত্মরক্ষার জন্য চেষ্টা চালাতে।
অজ্ঞতার সর্বনিম্ন স্তর তাকেই বলা যায়, যখন মানুষ এসব ভয়ানক শক্তিকে প্রত্যক্ষ করে ও তাদের কল্যাণকর বা অনিষ্টকর রূপ দেখে মনে করে, ‘এরাই খোদা’। ফলে তারা পূজা করতে থাকে জীব-জানোয়ার, পাহাড় ও নদীকে, তারা পূজা করে জমিন, আগুন, বৃষ্টি, হাওয়া, চন্দ্র, সূর্য ও আরো কতো শক্তির।
যখন এ অজ্ঞতার মাত্রা কিছুটা কম থাকে এবং জ্ঞানের আলো কিছুটা পাওয়া যায়, তখন বুঝা যায় যে, এসব জিনিস মানুষেরই মতো পরমুখাপেক্ষী, কত বড় বড় জানোয়ার তুচ্ছ মশা-মাছির মতো মরে যায়; প্রশস্ত নদীর পানি ওঠে, নামে, শুকিয়ে যায়, মানুষ নিজেই কেটে ফেলে পাহাড়। জমিনের ফলে-ফুলে সমৃদ্ধ হওয়া তার নিজের ইচ্ছাধীন নয়, পানি যখন তাকে সাহায্য করে না, তখনই জমিন শুষ্ক ও অনুর্বর হয়ে যায়। পানিও নিজের খুশীমতো চলতে পারে না, তাকেও হতে হয় হাওয়ার মুখাপেক্ষী। হাওয়াও নিজের ক্ষমতার অধীন নয়, তার কল্যাণ-অকল্যাণ নির্ভর করে অন্যবিধ শক্তির উপর। চন্দ্র, সূর্য, তারকাও কোনো বিশেষ বিধানের আনুগত্য করে চলে। এ বিধানের বাইরে তারা কখনো তাদের গতির বিন্দুমাত্র রদবদল করতে পারে না। এসব দেখে শুনে মানুষের মন কোনো অদৃশ্য রহস্যাবৃত শক্তির দিকে ফিরে যায় তখন সে ভাবতে থাকে যে, এসব দৃশ্যমান বস্তুসমূহের অন্তরালে রয়েছে এমন এক রহস্যাবৃত শক্তিপুঞ্জ, যা পরিচালিত করছে তাদেরকে এবং সবকিছুই হচ্ছে এ শক্তিপুঞ্জের অধীন। এখান থেকেই বহু