শয়তানের ধোঁকা বাঁচার উপায় / Shaitaner Dhoka theke Bachar Upai (Bengali)
4.5/5
()
About this ebook
আরবী ভাষায় সীমালঙ্ঘনকারী, দাম্ভিক ও স্বৈরাচারীকে শয়তান বলা হয়। মানুষ ও জিন জাতির জন্য এ শব্দটি ব্যবহার করা হয়। কুরআনের অধিকাংশ জায়গায় এ শব্দটি জিনদের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হলেও কোনো কোনো জায়গায় আবার শয়তান প্রকৃতির মানুষের জন্যও ব্যবহার করা হয়েছে। আর ইবলিস শব্দের অর্থ হচ্ছে নিরাশ বা হতাশাগ্রস্ত।
অধ্যাপিকা মুর্শিদা আক্তার মৌরী Prof. Murshida Akhter Mouri
জন্ম ঢাকার মতিঝিলে ১৯৬৭ সনে। শিক্ষা বি.এ অনার্স; এম.এ (ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি) বি.সি.এস (শিক্ষা) বি.এইচ, এম.এস (হোমিও মেডিকেল কলেজ) ঢাকা বি.এড, এম.এড (ঢাকা টিচার্স ট্রেনিং ইনষ্টিটিউট) ডিপ্লোমা ইন ডিজাবল এডাল্ট মেন্টাল সাইক্লোজি (নিউইয়র্ক) ডিপ্লোমা ইন ফার্মেসী (টেক) (নিউইয়র্ক) কর্ম প্রাক্তন অধ্যাপিকা আনোয়ারা মুসলিম গার্লস কলেজ, ঢাকা। বর্তমানে ডিপার্টমেন্ট অব হেলথ (ইউ.এস.এ-এ কর্মরত)। লেখালেখি ১. শয়তানের ধোঁকা, বাঁচার উপায় ২. আরাফের অধিবাসী ৩. মুসলমানের কেনো এতো প্রকারভেদ? ৪. আগামী দিনের পাথেয় (অপ্রকাশিত) ৫. সালাতে মনোযোগী হওয়ার উপায় (অপ্রকাশিত)
Related categories
Reviews for শয়তানের ধোঁকা বাঁচার উপায় / Shaitaner Dhoka theke Bachar Upai (Bengali)
2 ratings0 reviews
Book preview
শয়তানের ধোঁকা বাঁচার উপায় / Shaitaner Dhoka theke Bachar Upai (Bengali) - অধ্যাপিকা মুর্শিদা আক্তার মৌরী Prof. Murshida Akhter Mouri
শয়তানের ধোঁকা বাঁচার উপায়
অধ্যাপিকা মুর্শিদা আক্তার মৌরী
প্রকাশনায়
আহসান পাবলিকেশন
www.ahsanpublication.com
গ্রন্থস্বত্ব
লেখক
প্রকাশকাল
প্রথম প্রকাশ
শাওয়াল ১৪৩৪/ভাদ্র ১৪২০/ সেপ্টেম্বর ২০১৩
কম্পোজ
আহসান কম্পিউটার, ঢাকা
প্রচ্ছদ
নাসির উদ্দীন
ISBN : 978-984-8808-46-7
শয়তান (ইবলিস)
আরবী ভাষায় সীমালঙ্ঘনকারী, দাম্ভিক ও স্বৈরাচারীকে শয়তান বলা হয়। মানুষ ও জিন জাতির জন্য এ শব্দটি ব্যবহার করা হয়। কুরআনের অধিকাংশ জায়গায় এ শব্দটি জিনদের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হলেও কোনো কোনো জায়গায় আবার শয়তান প্রকৃতির মানুষের জন্যও ব্যবহার করা হয়েছে। আর ইবলিস শব্দের অর্থ হচ্ছে নিরাশ বা হতাশাগ্রস্ত।
শয়তান সৃষ্টির উপাদান
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আগুনের শিখা থেকে এই শয়তান বা জিন জাতির সৃষ্টি করেছেন। অপরপক্ষে মানুষ সৃষ্টির উপাদান হচ্ছে কাদামাটি। (সূরা হিজর : ২৬)
ইবলিস কে?
ইবলিসের আভিধানিক অর্থ চরম হতাশ। এমন একটি জিনকে ইবলিস বলা হয় যে আল্লাহর হুকুমের নাফরমানি করে আদম ও আদম সন্তানদের অনুগত হতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল। মানব জাতিকে পথভ্রষ্ট করার ও কিয়ামত পর্যন্ত তাদেরকে ভুল পথে চলার প্রেরণা দান করার জন্য সে আল্লাহর কাছে সময় ও সুযোগ প্রার্থনা করেছিল।
কুরআনে সাধারণভাবে ‘শায়াতীন’ (শয়তানরা) শব্দটি এসব জিন ও তাদের বংশধরদের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে। এ শব্দগুলো থেকে মনে হয় সম্ভবত শয়তান একা সিজদা করতে অস্বীকার করেনি বরং তার সাথে জিনদের একটি দলই আল্লাহর নাফরমানি করতে প্রস্তুত হয়েছিল। এ ক্ষেত্রে ইবলিস এর নাম নেয়া হয় তাদের নেতা হবার এবং বিদ্রোহের ক্ষেত্রে সবার চেয়ে বেশী অগ্রসর থাকার কারণে। সে ছিল কাফেরদের অন্তর্ভুক্ত।
এ অবস্থায় এর অর্থ হবে পূর্ব থেকেই জিনদের মধ্যে একটি বিদ্রোহী ও নাফরমান দল ছিল এবং ইবলিস এই দলের অন্তর্ভুক্ত।
"সেই সময়ের কথা স্মরণ কর যখন তোমাদের রব ফেরেশতাদের বলেছিলেন, আমি পৃথিবীতে একজন খলীফা প্রতিনিধি নিযুক্ত করতে চাই। তারা বললো, আপনি কি পৃথিবীতে এমন কাউকে নিযুক্ত করতে চান যে সেখানকার ব্যবস্থাপনায় বিপর্যয় সৃষ্টি করবে এবং রক্তপাত করবে? আপনার প্রশংসা ও স্তুতিসহ তাসবীহ পাঠ এবং আপনার বর্ণনা তো আমরা করেই যাচ্ছি।
আল্লাহ বললেন, আমি যা জানি তোমরা তা জানো না। অতঃপর আল্লাহ আদমকে সমস্ত জিনিসের নাম শেখালেন। তারপর সেগুলো পেশ করলেন ফেরেশতাদের সামনে এবং বললেন, যদি তোমাদের ধারণা সঠিক হয় অর্থাৎ কোন প্রতিনিধি নিযুক্ত করলে ব্যবস্থাপনা বিপর্যস্ত হবে তাহলে একটু বলতো দেখি এই জিনিসগুলোর নাম? তারা বললো : ত্রুটিমুক্ত তো একমাত্র আপনারই সত্তা, আমরা তো মাত্র ততটুকু জ্ঞান রাখি যতটুকু আপনি আমাদের দিয়েছেন। প্রকৃতপক্ষে আপনি ছাড়া আর এমন কোন সত্তা নেই যিনি সবকিছু জানেন ও সবকিছু বুঝেন। তখন আল্লাহ আদমকে বললেন, তুমি ওদেরকে এই জিনিসগুলোর নাম বলে দাও। যখন সে তাদেরকে সেসবের নাম জানিয়ে দিল তখন আল্লাহ বললেন : আমি না তোমাদের বলেছিলাম, আমি আকাশ ও পৃথিবীর এমন সমস্ত নিগূঢ় তত্ত্ব জানি যা তোমাদের অগোচরে রয়ে গেছে? যা কিছু তোমরা প্রকাশ করে থাকো তা আমি জানি এবং যা কিছু তোমরা গোপন করো তাও আমি জানি।
তারপর যখন ফেরেশতাদের হুকুম দিলেন, আদমের সামনে নত হও (সিজদা কর) তখন সবাই অবনত হলো, কিন্তু ইবলিস অস্বীকার করলো। সে নিজের শ্রেষ্ঠত্বের অহংকারে মেতে উঠলো এবং নাফরমানদের অন্তর্ভুক্ত হলো।" (সূরা বাকারা : ৩০-৩৪)
কি উদ্দেশ্যে আল্লাহ আদম (আঃ) ও বিবি হাওয়াকে জান্নাতে পরীক্ষা করলেন?
পৃথিবীতে অর্থাৎ নিজের কর্মস্থলে খলীফা নিযুক্ত করে পাঠাবার আগে মানসিক প্রবণতা যাচাই করার উদ্দেশ্যে তাদের দু’জনকে পরীক্ষা করার জন্য জান্নাতে রাখা হয়। তাদেরকে এভাবে পরীক্ষা করার জন্য একটি গাছ বাছাই করা হয়। হুকুম দেয়া হয়, ঐ গাছটির কাছে যেয়ো না। গাছটির কাছে গেলে তার পরিণাম কি হবে তাও বলে দেয়া হয়। বলে দেয়া হয়, এমনটি করলে, আমার (আল্লাহর) দৃষ্টিতে তোমরা যালিম হিসেবে গণ্য হবে। নিষেধ করার কারণ এ ছিল না যে, গাছটি প্রকৃতিগতভাবে এমন কোনো দোষযুক্ত ছিল যার ফলে, তার কাছে গেলে আদম ও হাওয়ার ক্ষতির সম্ভাবনা ছিল। আসল উদ্দেশ্য ছিল আদম ও হাওয়ার পরীক্ষা। শয়তানের প্রলোভনের মোকাবেলায় তারা আল্লাহর এই হুকুমটি কতটুকু মেনে চলে তা দেখা। এই উদ্দেশ্যে কোনো একটি জিনিস নির্বাচন করাই যথেষ্ট ছিল। তাই আল্লাহ কেবল একটি গাছের নাম দিয়েছেন, তার প্রকৃতি সম্পর্কে কোনো কথাই বলেননি।
এই পরীক্ষার জন্য জান্নাতই ছিল সবচেয়ে উপযোগী স্থান। আসলে জান্নাতকে পরীক্ষা গৃহ করার উদ্দেশ্য ছিল মানুষকে এ কথা বুঝিয়ে দেয়া যে, মানবিক মর্যাদার প্রেক্ষিতে তোমাদের জন্য জান্নাতই উপযোগী স্থান। কিন্তু শয়তানের প্রলোভনে পড়ে যদি তোমরা আল্লাহর নাফরমানির পথে এগিয়ে যেতে থাকো তাহলে যেভাবে শুরুতে তোমরা এ থেকে বঞ্চিত হয়েছিলে তেমনি শেষেও বঞ্চিত হবে। তোমাদের উপযোগী এই আবাসস্থলটি এবং এই হারানো ফিরদাউসটি লাভ করতে হলে তোমাদের অবশ্যই নিজেদের সেই দুশমনের সফল মোকাবেলা করতে হবে, যে তোমাদেরকে আল্লাহর হুকুম মেনে চলার পথ থেকে দূরে সরিয়ে রাখার চেষ্টা করছে।
শয়তান মানুষের প্রকাশ্য শত্রু
মানুষের শত্রু শয়তান এবং শয়তানের শত্রু মানুষ। শয়তান মানুষের শত্রু এ কথা একেবারে স্পষ্ট। কারণ সে মানুষকে আল্লাহর হুকুম পালনের পথ থেকে সরিয়ে রাখার এবং ধ্বংসের পথে পরিচালনা করার চেষ্টা করে। কিন্তু শয়তানের শত্রু মানুষ এ কথার অর্থ কি? আসলে শয়তানের প্রতি শত্রু তার মনোভাব পোষণ করাই তো মানবতার দাবী। কিন্তু প্রবৃত্তির কামনা-বাসনার সামনে সে যে সমস্ত প্রলোভন হাজির করে মানুষ সেগুলোর দ্বারা প্রতারিত হয়ে থাকে। নিজেদের বন্ধু ভেবে বসে। এই ধরনের বন্ধুত্বের অর্থ এই নয় যে, প্রকৃতপক্ষে শত্রু তা বন্ধুত্বে পরিবর্তিত হয়ে গেছে। বরং এর অর্থ হচ্ছে, এক শত্রু আর এক শত্রু র হাতে পরাজিত হয়েছে এবং তার জালে ফেঁসে গেছে।
মানুষ কেন মন্দ কাজ করে
নাফসের তাড়নায় ও শয়তানের প্ররোচনায় মানুষ মন্দ কাজ করে।
নাফস, রূহ ও কালবের ফাংশন বা কর্মতৎপরতা কি?
নাফস মানে দেহের যাবতীয় দাবী। খিদে লাগলে খেতে চায়, গরম বোধ করলে ঠাণ্ডা চায়, সুন্দর কিছু পেলে দেখতে চায়, ভোগের উপকরণ পেলে ভোগ করতে চায়। দেহের কোনো নৈতিক চেতনা নেই বলে সে যা চায় তা নৈতিক দিক দিয়ে মন্দ হতেই পারে। তাই মানুষ যখন কোনো কাজ করার সিদ্ধান্ত নেয় তখনি সে কাজটি নৈতিক দিক দিয়ে আপত্তিকর হলে রূহ আপত্তি জানায়। তখন নাফস ও রূহের মধ্যে লড়াই চলে। রূহ ও নাফসের লড়াইতে যার জয় হয় তার সিদ্ধান্ত অনুযায়ীই কর্ম সম্পাদন করা হয়। এই কর্ম সম্পাদনী শক্তিই হচ্ছে কালব। কালব শব্দের অর্থ পরিবর্তনশীল। এক সময় সে রূহের আনুগত্য করে আর এক সময় নাফসের। সে (কালব) এক অবস্থায় থাকতে পারে না বলেই এর নাম কালব।
কর্ম সম্পাদনের কোনো ক্ষমতা বা ইখতিয়ার মানুষের নেই
মানুষকে আল্লাহ তা‘আলা কোনো কাজের জন্য ইচ্ছা করা ও চেষ্টা করার ক্ষমতা এবং দায়িত্ব দিয়েছেন। কাজটি সমাধা বা সম্পন্ন করার কোনো ইখতিয়ারই দেননি। কাজটি ভালো হোক আর মন্দ হোক