Discover millions of ebooks, audiobooks, and so much more with a free trial

Only $11.99/month after trial. Cancel anytime.

বিয়ে ও পরিবার : সমকালীন জিজ্ঞাসা / Biye o Poribar : Shomokalin Jiggasha (Bengali)
বিয়ে ও পরিবার : সমকালীন জিজ্ঞাসা / Biye o Poribar : Shomokalin Jiggasha (Bengali)
বিয়ে ও পরিবার : সমকালীন জিজ্ঞাসা / Biye o Poribar : Shomokalin Jiggasha (Bengali)
Ebook384 pages2 hours

বিয়ে ও পরিবার : সমকালীন জিজ্ঞাসা / Biye o Poribar : Shomokalin Jiggasha (Bengali)

Rating: 5 out of 5 stars

5/5

()

Read preview

About this ebook

সময় যত এগিয়ে যাচ্ছে জীবনের সমস্যার দিকগুলোও যেন ততই বাড়ছে। আমরা যখনই কোন সমস্যার মুখোমুখি হই তখনই একটি প্রশ্ন এসে আমাদের মনে ভীড় করে- “মুসলমান হিসেবে আমাদের করণীয় কি? ইসলামে এর সমাধান কি?” এ বইটিতে আমাদের জীবনের এমনই কিছু গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা ও তার সমাধানে বিশ্বের বিখ্যাত ইসলামিক চিন্তাবিদগণ কি বলেছেন তা তুলে ধরা হয়েছে।
বিয়ে মানুষের জীবনের একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এর রয়েছে বিভিন্ন অধ্যায়। একেকটি অধ্যায়ের রূপ একেক রকম, সমস্যাও বিভিন্ন। দু’টি ভিন্ন পারিবারিক পরিবেশে বেড়ে ওঠা- দু’টি মানুষের মিলন, দু’টি ভিন্ন পরিবারের মধ্যে সেতুবন্ধন- এ খুব সহজ কথা নয়। এর মধ্যে এসে দাঁড়ায় হাজারো বাস্তবতা। বর্তমান সময়ের সমস্যাগুলো অতীতের থেকে ভিন্নতর। সময়ের সাথে সাথে নারীর শিক্ষাগত, অর্থনৈতিক ও মানসিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটছে। সমাজে ও পরিবারে নারীর অবস্থান ও ভূমিকা নিয়ে আগের ধারণাগুলোরও পরিবর্তন ঘটছে দ্রুত। এসব কিছু প্রভাব ফেলছে পরিবারে। যার থেকে তৈরী হচ্ছে নতুন নতুন প্রশ্নের। তাছাড়া আমাদের সমাজে ইসলামের কিছু ভুল ব্যাখ্যাও প্রচলিত। এসব কিছুকে সামনে রেখেই এ বই লেখার আয়োজন। এ আয়োজনে থাকছে বিবাহ ও বিবাহ সংক্রান্ত খুঁটিনাটি বিষয়- যেমন পাত্র-পাত্রী নির্বাচন, বিবাহ অনুষ্ঠান, দেনমোহন, স্বামী-স্ত্রীর অধিকার ও কর্তব্য, শ্বশুর বাড়ির সঙ্গে সম্পর্ক, তালাক ইত্যাদি ব্যাপারে ইসলামী চিন্তাবিদগণের মতামত ও সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন বৈবাহিক সমস্যার বিশ্লেষণ

LanguageBengali
Release dateApr 9, 2015
ISBN9781311313331
বিয়ে ও পরিবার : সমকালীন জিজ্ঞাসা / Biye o Poribar : Shomokalin Jiggasha (Bengali)

Related categories

Reviews for বিয়ে ও পরিবার

Rating: 4.8 out of 5 stars
5/5

5 ratings0 reviews

What did you think?

Tap to rate

Review must be at least 10 words

    Book preview

    বিয়ে ও পরিবার - কানিজ ফাতিমা Kaniz Fatima

    বিশেষ কৃতজ্ঞতা

    আমি ইসলাম অনলাইনের ফতোয়া বিভাগের প্রতি বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ। যার সহযোগিতা ব্যতীত এই বই লেখা সম্ভবপর হতো না। এই বই-এর অনেক স্থানেই ইসলাম অনলাইনের ফতোয়া বিভাগের সরাসরি সাহায্য নেয়া হয়েছে।

    মাসিক জিজ্ঞাসার উদ্যোগ, আমার স্বামী মোহাম্মদ মনিরুল আলমের প্রেরণা ও আমার পিতা মোহাম্মদ শামছুল আলমের স্নেহ সহযোগিতার প্রতি আমি ঋণী।

    উৎসর্গ

    আমার মা, রাশিদা খানম ও

    দাদী মাজেদা খাতুন

    নানী জাহান আরা বেগম

    কে

    লেখকের কথা

    নারীরা বসে নেই। এগিয়ে যাচ্ছে নিজ অধিকার প্রতিষ্ঠার অঙ্গনে। মুসলিম নারীরা সচেতন হয়ে উঠছে। তাদের হক বা অধিকার সম্পর্কে যা আল্লাহ স্বয়ং তাদের দিয়েছেন। তারা বুঝতে শিখছে আল্লাহ প্রদত্ত ও রাসূল (সা) প্রবর্তিত এ হক কেড়ে নেবার অধিকার কারও নেই; নারীরাও আল্লাহর সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত, ঠিক যেমনি পুরুষরা।

    আমি ‘শিখেছে’, ‘উঠেছে’- এ ক্রিয়াগুলো ব্যবহার না করে ‘শিখছে’, ‘উঠছে’ ক্রিয়াগুলো ব্যবহার করেছি। কারণ আমার মতে এখনও এ প্রক্রিয়ার মাঝামাঝি কোন স্থানে আমরা অবস্থান করছি। পূর্ণতা অর্জন এখনও বেশ দূর। মুসলিম নারী জাগরণের, নারীর অবস্থান পরিবর্তনের এ জোয়ার মুসলিম পুরুষদেরও গায়ে লেগেছে। নারীদের প্রতি তাদের সাধারণ দৃষ্টিভঙ্গির বেশ একটা পরিবর্তনও লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আমরা এ অবস্থাকে বলতে পারি একটা Transition Period। এ অবস্থানে অধিকাংশ পুরুষের মধ্যেই লক্ষ্য করা যায় একটি দ্বৈত চরিত্র। একদিকে নারী জাগরণের এ সময় তারা তাদের সঙ্গিনীকে কল্পনা করেন বিদুষী, শিক্ষিত, কর্মচঞ্চল, সচেতন এক নারীরূপে। অন্যদিকে তাদের মনের কোঠরে বাস করে তাদের শৈশবে দেখে আসা সেসব নারী চরিত্র- যারা স্বামী সেবাকেই জীবনের একমাত্র কাজ ও লক্ষ্য হিসেবে বিশ্বাস করতেন। স্বামী বা স্বামীপক্ষের শত অন্যায়-অত্যাচার-গঞ্জনা মুখবুজে সয়ে যেতেন, মুখে ‘রা’ টি করতেন না। তাদের মনে রয়ে গেছে সেই ‘বুক ফাটেতো মুখ ফোটে না’- গোছের নিরীহ বধূটি। অর্থাৎ তারা এর একাংশ আর ওর অপরাংশ মিলিয়ে অদ্ভুত এক কল্পিত নারী চরিত্র তৈরী করেন যা স্বভাবগতভাবেই পরস্পর বিপরীত। তারা অনেক সময়ই ভুলে যান যে নারী সচেতন, যে নারী নারী অধিকারের সঠিক ধারণা রাখেন, যে বহির্জগতে অন্যায়ের প্রতিবাদ করেন, অবহেলার বিরুদ্ধে কলম ধরেন বা পাঁচ-দশ জন মানুষের সম্মুখে কথা বলার সামর্থ্য ও সাহস রাখেন, সে নারী নিজ স্বামীর অবহেলা-অসম্মানকে চিহ্নিত করতে অসমর্থ হবেন, বা বুঝতে পেরেও সমাজের রক্তচক্ষুর ভয়ে গুটিশুটি মেরে যাবেন- এমনটা আশা করা যুক্তিহীন।

    অনেককে দেখেছি বিয়ে করার সময় বুদ্ধিমতী, চৌকষ, চটপটে মেয়ে খোঁজেন। কিন্তু বিয়ের পরে সেই বুদ্ধিমতী মেয়েটি যখন তাকে কোন ব্যাপারে পরামর্শ দেয় তখন অন্যদের সম্মুখে সেই পরামর্শকে মেনে নেয়াকে কাপুরুষতা মনে করেন। ভাবেন- স্ত্রীর কথা শুনলে অন্যরা কি মনে করবে?

    সবাই মনে করবে আমি স্ত্রীর কথায় উঠি-বসি।

    ওরা বলবে আমি একটা স্ত্রৈণ।

    অথচ এটা তো খুব স্বাভাবিক যে, যে কোন শিক্ষিত বুদ্ধিমতী মেয়েই আশা করবে যে তার স্বামী তার সঙ্গে পরামর্শ করবে, তার মতামতের গুরুত্ব দেবে। একদিকে বুদ্ধিমতী স্ত্রী চাওয়া অন্যদিকে স্ত্রীর মতামতকে (তা যতটা মানসম্মতই হোক না কেন) মেনে নিলে মান যাবে এমনটা ভাব পরস্পর বিরোধী মানসিকতারই লক্ষণ।

    আমার ধারণা এই Transition Period এ অনেক পুরুষই আসলে কি চাইছেন এ ব্যাপারে নিজেরাই যথেষ্ট স্বচ্ছ ধারণা রাখেন না বা এক ধরনের দোটানায় ভোগেন। একদিকে তারা আমাদের দেশের নারীদের অন্যদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে চাইছেন, তাদেরকে সচেতন নারীরূপে দেখতে চাইছেন, আবার একই সাথে বাস্তব জীবনে নিজের ঘরের নারীটিকে নিজ অধিকার সম্পর্কে নীরব, নিশ্চুপ বোধহীন দেখতে ভালবাসছেন। এ দ্বৈততার ফল মারাত্মক হতে পারে।

    সমস্যার কারণ শুধু পুরুষদের মধ্যে সীমাবদ্ধ না। নারীদের মধ্যেও রয়েছে। নারীরা অনেক ক্ষেত্রেই নিজেদের অধিকার ও কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন না। এ সম্পর্কিত জ্ঞানের অভাব যথেষ্ট পরিমাণে সমাজে পরিলক্ষিত। কোথায় কতটুকু অধিকার রয়েছে এবং এ অধিকারের সীমা কতদূর এটা নাজানা থাকার কারণে সঠিক অবস্থান নেয়াও তাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়ে। ফলে সাংসারিক ও পারিবারিক জীবনে দেখা দেয় নানামুখী সমস্যা। এই নানামুখী সমস্যার বিভিন্ন দিককে তুলে ধরে এ সম্পর্কিত জ্ঞান ও সচেতনতা বৃদ্ধি করাই এই বইটির প্রথম ও প্রধান উদ্দেশ্য।

    নারী ও পুরুষ উভয়কেই মনে রাখতে হবে স্ত্রীর যেমন স্বামীর সন্তুষ্টির প্রতি লক্ষ্য রাখা জরুরী, তেমনি স্ত্রীর সন্তুষ্টির প্রতিও স্বামীর লক্ষ্য রাখা জরুরী। পরস্পরের প্রতি সম্মান ও সহানুভূতিই আমাদের পারিবারিক জীবনকে সফল করে তুলতে পারে।

    ১ম অধ্যায় :ভূমিকা

    সময় যত এগিয়ে যাচ্ছে জীবনের সমস্যার দিকগুলোও যেন ততই বাড়ছে। আমরা যখনই কোন সমস্যার মুখোমুখি হই তখনই একটি প্রশ্ন এসে আমাদের মনে ভীড় করে- মুসলমান হিসেবে আমাদের করণীয় কি? ইসলামে এর সমাধান কি? এ বইটিতে আমাদের জীবনের এমনই কিছু গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা ও তার সমাধানে বিশ্বের বিখ্যাত ইসলামিক চিন্তাবিদগণ কি বলেছেন তা তুলে ধরবো।

    বিয়ে মানুষের জীবনের একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এর রয়েছে বিভিন্ন অধ্যায়। একেকটি অধ্যায়ের রূপ একেক রকম, সমস্যাও বিভিন্ন। দু’টি ভিন্ন পারিবারিক পরিবেশে বেড়ে ওঠা- দু’টি মানুষের মিলন, দু’টি ভিন্ন পরিবারের মধ্যে সেতুবন্ধন- এ খুব সহজ কথা নয়। এর মধ্যে এসে দাঁড়ায় হাজারো বাস্তবতা। বর্তমান সময়ের সমস্যাগুলো অতীতের থেকে ভিন্নতর। সময়ের সাথে সাথে নারীর শিক্ষাগত, অর্থনৈতিক ও মানসিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটছে। সমাজে ও পরিবারে নারীর অবস্থান ও ভূমিকা নিয়ে আগের ধারণাগুলোরও পরিবর্তন ঘটছে দ্রুত। এসব কিছু প্রভাব ফেলছে পরিবারে। যার থেকে তৈরী হচ্ছে নতুন নতুন প্রশ্নের। তাছাড়া আমাদের সমাজে ইসলামের কিছু ভুল ব্যাখ্যাও প্রচলিত। এসব কিছুকে সামনে রেখেই আমার এ বই লেখার আয়োজন। এ আয়োজনে থাকবে বিবাহ ও বিবাহ সংক্রান্ত খুঁটিনাটি বিষয়- যেমন পাত্র-পাত্রী নির্বাচন, বিবাহ অনুষ্ঠান, দেনমোহন, স্বামী-স্ত্রীর অধিকার ও কর্তব্য, শ্বশুর বাড়ির সঙ্গে সম্পর্ক, তালাক ইত্যাদি ব্যাপারে ইসলামী চিন্তাবিদগণের মতামত ও সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন বৈবাহিক সমস্যার বিশ্লেষণ।

    ইসলামে বিবাহ কি বাধ্যতামূলক?

    একটি মধ্যমপন্থী ধর্ম হিসেবে ইসলামের মূলনীতি হল- ইসলাম বিবাহকে উৎসাহিত করে। কারণ মানুষের প্রাকৃতিক যৌন চাহিদা পূরণের এবং মানব বংশের ধারা অব্যাহত রাখার এটিই একমাত্র বৈধ পন্থা। কৌমার্য বরণের মাধ্যমে স্বাভাবিক চাহিদাকে দমন করাকে ইসলাম সমর্থন করে না। তাছাড়া বিবাহ রাসূলুল্লাহ (সা) এর একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত। আনাস (রা) থেকে বর্ণিত বোখারী শরীফের নিন্মোক্ত হাদিসটি তার প্রমাণ :

    তিন ব্যক্তির একটি দল রাসূলুল্লাহ (সা) এর স্ত্রীগণের কাছে নবী (সা) এর ইবাদত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করার জন্য আগমন করল। তাদেরকে এ সম্পর্কে জানানো হলে তারা নিজেদের ইবাদতের পরিমাণকে যথেষ্ট মনে করলো না এবং তারা বলল : কিভাবে আমরা নবীর সমকক্ষতা অর্জন করতে পারি যাঁর পূর্বের ও পরের সব গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়েছে! এ সময় তাদের মধ্যে থেকে একজন বলল : আমি আজীবন রাতভর নামাজ পড়তে থাকব। অন্যজন বলল : আমি সারা বছর রোজা রাখবো এবং কখনও রোজা ভাঙ্গবো না (অর্থাৎ বিরতি দেব না)। তৃতীয় ব্যক্তি বলল : আমি সর্বদা নারী থেকে দূরে থাকবো এবং কখনও বিবাহ করবো না। অতঃপর নবী (সা) তাদের কাছে আসলেন এবং বললেন, তোমরা কি সেই লোক যারা এরূপ কথাবার্তা বলেছ? আল্লাহর শপথ, আমি আল্লাহর প্রতি তোমাদের চেয়ে বেশী অনুগত এবং তাঁকে তোমাদের চেয়ে বেশী ভয় করি। কিন্তু তা সত্ত্বেও আমি রোজা রাখি আবার বিরতিও দেই, রাতে নিদ্রা যাই এবং মহিলাদের বিবাহও করি। যারা আমার সুন্নতের প্রতি বিরাগ পোষণ করে (অনুসরণ করে না), তারা আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়।

    ইসলাম একদিকে যেমন কৌমার্য (Celibacy) এর দ্বারা মানুষের সহজাত প্রবৃত্তিকে দমন করার পক্ষপাতী নয় ঠিক তেমনি এটি লাগামহীন অবিবেচক যৌন জীবনকেও অনুমোদন করে না। রাসূল (সা) বলেন, "হে যুবসমাজ, তোমাদের মধ্যে যারা বিবাহ করতে সমর্থ তারা যেন বিবাহ করে, কারণ এটি চোখকে আকাক্সক্ষাপূর্ণ দৃষ্টি থেকে দূরে রাখে এবং পবিত্রতা রক্ষা করে। আর যারা বিবাহের সামর্থ্য রাখে না তারা যেন রোজা রাখে। যাতে এটি ঢাল হিসেবে তাকে রক্ষা করতে পারে।

    এতদসত্ত্বেও বিবাহ সম্পর্কিত ইসলামের নির্দেশনা ব্যক্তি বিশেষের অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে ভিন্ন ভিন্ন হয়। কখনও এটি বাধ্যতামূলক, কখনও বিশেষ পছন্দনীয় বা মুস্তাহাব, কখনও এটি শুধুমাত্র হালাল বা বৈধ আবার কোনও কোনও অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে এটি হারামও হতে পারে।

    ইসলামিক ইনস্টিটিউট অব টরোন্টো, কানাডা এর একজন সিনিয়র লেকচারার শেখ আহমদ কাত্তি বলেছেন, যদিও ইসলামিক ফিকাহ শাস্ত্র মতে বিবাহ একটি বিশেষ পছন্দনীয় (ঐরমযষু ৎবপড়সসবহফবফ) কাজ, তদুপরি, অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে একে চার ভাগে ভাগ করা যায়-

    ১. ফরজ বা বাধ্যতামূলক

    ২. মুস্তাহাব বা পছন্দনীয়

    ৩. হালাল বা বৈধ

    ৪. হারাম বা নিষিদ্ধ

    বিবাহ তখনই ফরজ বা বাধ্যতামূলক হয় যখন একজন ব্যক্তি (নারী বা পুরুষ) তীব্র যৌন চাহিদা অনুভব করে এবং তার দ্বারা ব্যভিচার ঘটে যাবার আশংকা থাকে। যেহেতু ব্যভিচার থেকে দূরে থাকা ফরজ এবং বিবাহই একমাত্র এই চাহিদা পূরণের বৈধ পন্থা সেহেতু ঐ ব্যক্তির জন্য বিবাহ ফরজ। এক্ষেত্রে ফিকাহ শাস্ত্রের মূলনীতিটি হল, যদি একটি ফরজ কাজ অন্য একটি কাজ ব্যতীত আদায় সম্ভব না হয় তবে ঐ সহায়ক কাজটিও মূল ফরজের মতই ফরজ হিসেবে গণ্য হবে।

    যদি কোন ব্যক্তির যৌন চাহিদা খুব তীব্র না হয় এবং তার দ্বারা ব্যভিচার সংঘটিত হবার সম্ভাবনা না থাকে কিন্তু বিবাহ করার সবরকম সামর্থ্য ও সুযোগ তার থাকে এমতাবস্থায় বিবাহ তার জন্য মুস্তাহাব বা পছন্দনীয় কাজ। কারণ এটির দ্বারা সে রাসূল (সা) এর একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নতকে অনুসরণ করছে।

    একজন ব্যক্তির বিবাহ করার মত ন্যূনতম অর্থনৈতিক সামর্থ্য যদি না থাকে (মোহরানা আদায় ও স্ত্রীর ভরণ পোষণ স্বামীর জন্য ফরজ) এবং এভাবে সে যদি বিবাহের দায়িত্বসমূহ পালনে অসমর্থ হয় কিন্তু বিবাহের তীব্র প্রয়োজন অনুভব করে, সেক্ষেত্রে বিবাহ করা তার জন্য হালাল এই শর্তে যে-

    * সে তার সামর্থ্য অনুযায়ী সৎপন্থায় উপার্জনের সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাবে এবং

    * ভাবী স্ত্রীকে নিজের অর্থনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা দান করবে। সত্য গোপন করা এক্ষেত্রে প্রতারণার সামিল।

    আল্লাহ এরূপ অভাবী ব্যক্তিকে সাহায্য করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন। এক্ষেত্রে আরেকটি বিষয় উল্লেখযোগ্য, এমন পরিস্থিতিতে মুসলিম সমাজের দায়িত্ব হল ঐ ব্যক্তিকে আত্মনির্ভরশীল হবার পূর্ব পর্যন্ত সাহায্য করা।

    কিন্তু পরিস্থিতি যদি এমন হয় যে ব্যক্তিটি সৎভাবে উপার্জনের কোন পথই পাচ্ছে না এবং বৈবাহিক দায়িত্ব (অর্থনৈতিক) পালনের কোন উপায়ই তার সম্মুখে খোলা নেই, এমতাবস্থায় ঐ ব্যক্তিকে রোযা ও অন্যান্য সংযম সাধনের মাধ্যমে নিজেকে দমনের চেষ্টা চালাতে হবে।

    যদি কোন ব্যক্তি মনে করে যে তার দ্বারা বিবাহের আবশ্যক (ফরজ) দায়িত্ব-কর্তব্য পালন করা সম্ভবপর নয় এবং তার ব্যভিচারে লিপ্ত হবার সম্ভাবনাও নেই, তখন ঐ ব্যক্তির জন্য বিবাহ হারাম বা নিষিদ্ধ। ইসলাম আমাদের অন্য ব্যক্তির প্রতি অন্যায় এবং অন্য ব্যক্তির অধিকার হরণকে হারাম করেছে। কাজেই স্বামী বা স্ত্রীর একের অন্যের প্রতি ফরজ দায়িত্বের অবহেলা পুরোপুরি হারাম।

    বিবাহ কখন হারাম সে সম্পর্কে বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ, ফিক্হ আস-সুন্নাহ্ বই এর লেখক মরহুম শেখ সাইয়েদ সাবিক বলেন, একজন পুরুষের জন্য বিবাহ হারাম তখন যখন তার স্ত্রীর অধিকার রক্ষার সামর্থ্য না থাকে। এ সামর্থ্যহীনতা দৈহিক বা অর্থনৈতিক যেটাই হোক না কেন। কোন পুরুষ যদি দৈহিক মিলনে অক্ষম হয় বা স্ত্রীর ভরণ পোষণের ব্যয় বহনের মত অর্থনৈতিক সামর্থ্য তার না থাকে তবে তার জন্য বিবাহ বৈধ নয়।

    এ সম্পর্কে অপর একজন বিশিষ্ট চিন্তাবিদ আল কুরতুবী বলেন, "যদি কোন ব্যক্তি বিবাহের খরচ বহনের মত সামর্থ্যবান না হয়, যদি তার মোহরানা পরিশোধের সামর্থ্য না থাকে বা স্ত্রীর অন্যান্য অর্থনৈতিক অধিকার আদায়ের সামর্থ্য না থাকে তবে তার বিবাহ বৈধ নয়, যতক্ষণ না সে তার অবস্থা ভাবী স্ত্রীকে জানায় অথবা সে অর্থনৈতিক সচ্ছলতা লাভ করে। আর যদি সে দৈহিক দুর্বলতা বা ত্রুটির কারণে দৈহিক মিলনে অসমর্থ হয় তবে তাও ভাবী স্ত্রীকে পরিপূর্ণভাবে জানাতে হবে। এক্ষেত্রে লুকোচুরি বা গোপন করার মাধ্যমে স্ত্রীকে প্রতারিত করা স্পষ্ট নিষিদ্ধ।

    একই নিয়ম মহিলাদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। কোন মহিলা যদি স্বামীর হক আদায়ে অসমর্থ হন অথবা তার এমন কোন ত্রুটি তাকে যার ফলে সে দৈহিক মিলনে অক্ষম হন তবে এসব গোপন করে বিবাহ করা স্পষ্টতঃ নিষিদ্ধ (হারাম)। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়- স্থায়ী মানসিক রোগ (insanity), কুষ্ঠরোগ (leprosy), গোদ রোগ (elephantiasis) অথবা স্ত্রীর অঙ্গের কোন রোগ (genital or vaginal desease)।

    এমন কোন সমস্যা থাকলে তা বিবাহের পূর্বেই পুরুষটিকে জানিয়ে দিতে হবে। ব্যাপারটি অনেকটা ক্রয়-বিক্রয়ের চুক্তির ন্যায়। বিক্রেতা বাধ্য থাকবে পণ্যের ত্রুটি সম্পর্কে ক্রেতাকে অবহিত করতে। যদি কোন পক্ষ নিজের ত্রুটি অপরপক্ষের নিকট গোপন করে তবে এ পক্ষ (যার নিকট গোপন করা হয়েছে) বিবাহ বাতিলের অধিকার রাখে। যদি স্বামী বিবাহের পর এমন কোন মারাত্মক ত্রুটি স্ত্রীর মধ্যে পান যা তার নিকট গোপন করা হয়েছিল তবে তিনি বিবাহ বাতিল করতে পারবেন এবং মোহরানা ফেরত নিতে পারবেন (যদি তিনি ইচ্ছা করেন)। অনুরূপ কোন স্ত্রী যদি বিবাহের পর স্বামীর এমন কোন ত্রুটি পান যা গোপন রাখা হয়েছিল, তাকে বিবাহের পূর্বে অবহিত করা হয়নি, (যা দ্বারা তার ফরজ অধিকার লঙ্ঘিত হয়) তবে তিনি বিবাহ বাতিলের সম্পূর্ণ অধিকার রাখেন।"

    এক্ষেত্রে স্ত্রী তার মোহরানা কতটা পাবেন সে ব্যাপারে ইমাম মালেক দু’টি মত ব্যক্ত করেছেন। যদি দৈহিক মিলন ঘটার পরে স্ত্রী বিবাহ বাতিল করেন তবে তিনি পূর্ণ মোহরানা পাবেন। অন্যথায় (অর্থাৎ বিবাহের পর পরই দৈহিক মিলন ঘটার পূর্বেই বিচ্ছেদ ঘটলে) তিনি অর্ধেক মোহরানা পাবেন।

    আমরা জেনেছি নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবার জন্য বিয়ে বাধ্যতামূলক কিনা। এখন আমরা যে বিষয়ে আলোকপাত করতে চাই তা হল নারীদের জন্য বিবাহ বাধ্যতামূলক কিনা। এ ব্যাপারে ২৬ বছর বয়স্ক একজন মহিলা চিঠি লিখেছিলেন ইসলাম অনলাইনে একথা জানতে চেয়ে যে, তার মা-বাবা তাকে বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছে। কিন্তু আশে-পাশে অনেক অসুখী পরিবার দেখে সে ভীত। একদিকে পিতা-মাতার অনুরোধ, অন্যদিকে বিয়ে ভীতি- এমতাবস্থায় তার কি করণীয়। এর উত্তরে বলা হয়েছে-

    যদিও সাধারণত বিয়েকে ইসলাম উৎসাহিত করে তথাপি অবস্থা ও পারিপার্শ্বিকতার উপর ভিত্তি করে এটি কোন কোন ব্যক্তির জন্য ফরজ হয়, কারও জন্য মুস্তাহাব, কারও জন্য শুধুই হালাল এমনকি কারও কারও জন্যও হারামও হয়ে থাকে। (বিস্তারিত পূর্ব আলোচনায়)। এই নীতি নারী ও পুরুষ উভয়ের জন্য প্রযোজ্য। কাজেই মেয়েটির উচিত হবে নিজ অবস্থা পর্যালোচনা করে সেরূপে সিদ্ধান্ত নেয়া।

    বর্তমান সময়ের বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ শেখ আহমদ কাত্তি প্রশ্নকারী মেয়েটির উদ্দেশ্যে বলেন :

    যেহেতু ইসলাম পিতা-মাতাকে বিশেষ সম্মানের চোখে দেখার নির্দেশ দেয় সেহেতু তাদের সাথে যে কোন ব্যাপারে মত বিনিময়ের সময় তাদের প্রতি বিনয়ী, নম্র ও সহানুভূতিশীল হওয়া আমাদের কর্তব্য। সব পিতা-মাতাই সন্তানের ব্যাপারে উদ্বিগ্ন থাকেন। তাই যে কোন সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে সেটি বাবা-মা এর জন্য কতটা কষ্টদায়ক হবে তা চিন্তা করে সন্তানদের সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত। তবে ইসলাম বিয়ের ব্যাপারে সম্মতি দান করা বা না করার পুরোপুরি অধিকার নারীকে দিয়েছে। এ ব্যাপারে পিতা-মাতার মতামতের চেয়ে পাত্রীর মতামতকে ইসলাম প্রাধান্য দেয়।

    এর সপক্ষে কিছু হাদিস উল্লেখ করা যেতে পারে :

    আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন, কোন বিধবা মহিলাকে তার সম্মতি ব্যতীত বিবাহ দেয়া যাবে না। কোন কুমারী মহিলাকেও তার অনুমতি ব্যতীত বিবাহ দেয়া চলবে না। (বুখারী)

    হযরত ইবনে আব্বাস (রা) বলেন : হযরত খানসা বিনতে খিযাম (বা খিদাম) (রা) এর একবার বিয়ে হয়েছিল। এরপর তিনি স্বামীহীনা হন। এমতাবস্থায় তার পিতা তাকে অন্য এক ব্যক্তির সাথে বিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু হযরত খানসা এ বিয়ে পছন্দ করেননি। তিনি রাসূলুল্লাহ (সা) এর কাছে এসে তাঁকে একথা জানালেন। ঘটনাটি শোনার পর নবী করীম (সা) এ বিয়ে বাতিল করে দিলেন। (বুখারী)

    শেখ আহমদ কাত্তি আরও বলেন, "পিতা-মাতার

    Enjoying the preview?
    Page 1 of 1