হজ্জ কিছু স্মৃতি কিছু কথা / Hajj kichu smrity kichu kotha (Bengali)
()
About this ebook
তরুণ লেখক জনাব মহঃ শের আলী “হজ্জ : কিছু স্মৃতি কিছু কথা” বইটিতে ব্যক্তিগত উপলব্ধি এবং অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন। সহজ-সরল ভাষায় হৃদয়গ্রাহী করে তুলে ধরেছেন কিছু বিষয়। যেমন হজ্জ মৌসুমে মক্কা-মদীনায় ভিক্ষুক বা হকার চোখে পড়ে সবারই কিন্তু ক’জন তাদের নিয়ে ভাবেন। এমন অনেক বিষয়ে লেখকের দৃষ্টি নিবদ্ধ হয়েছে। তিনি চেষ্টা করেছেন কতিপয় ঘটনা বিশ্লেষণের যা সাধারণভাবে সকলের চোখ এড়িয়ে যায়। লেখক কিছু অসংগতি তুলে ধরেছেন সম্পূর্ণ নিজের করে নিয়ে। এটি তার এ লেখার উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য।
Related categories
Reviews for হজ্জ কিছু স্মৃতি কিছু কথা / Hajj kichu smrity kichu kotha (Bengali)
0 ratings0 reviews
Book preview
হজ্জ কিছু স্মৃতি কিছু কথা / Hajj kichu smrity kichu kotha (Bengali) - মহঃ শের আলী Md. Sher Ali
প্রসঙ্গত
মহান আল্লাহ পাক হজ্জ পালনের তৌফিক দেয়ায় আনুষ্ঠানিকতার বাইরেও কিছু ঘটনা, বিষয়, অসংগতি আমার চোখে পড়ে। নিজের আবেগ-অনুভূতি, বিচার-বিবেচনা এবং অভিজ্ঞতার সাথে এসবকে বিশ্লেষণের চেষ্টা করি। তাৎক্ষণিকভাবে কিছু বিষয় লিখে ফেলি বা টুকে রাখি। তারই পূর্ণাঙ্গরূপ আমার এ লেখা। এটি কোনো গবেষণা বা মৌলিক লেখা নয়, নিজের অভিজ্ঞতার বর্ণনামাত্র।
দেড় মাসের অধিক কাল মক্কা-মদীনা-জেদ্দায় অবস্থানের কারণে এ সকল স্থানের মানুষের দৃশ্যমান জীবনাচার প্রত্যক্ষ করার সুযোগ হয়। পারিপার্শ্বিকতা সবসময়েই চোখে পড়ে। আবার অবস্থানরত বাংলাদেশীদের সাথে স্বাভাবিক কারণেই বিভিন্ন বিষয়ে মতবিনিময় করেছি। আর এভাবে আমার কিছু উপলব্ধি তৈরি হয় যা এখানে প্রকাশের চেষ্টা করেছি। এটি নিতান্তই বাহ্যিক প্রত্যক্ষ এবং ব্যক্তিগত উপলব্ধির বহিঃপ্রকাশ মাত্র। দু’একটি ক্ষেত্রে আত্মসমালোচনা হিসেবে মন্তব্য করেছি যা নিজের বলে গ্রহণ করেই।
হজ্জ বিশ্বের বৃহত্তম সমাবেশ, বিশাল আয়োজন। আল্লাহর রহমত আর সংশ্লিষ্টদের আন্তরিক প্রচেষ্টা এবং হাজীগণের অসীম ধৈর্যের কারণে সুন্দরভাবে সম্পন্ন হয়। কিছু ব্যতিক্রম তো হতেই পারে।
বই হিসেবে এটি আমার প্রথম প্রয়াস। অসংখ্য সীমাবদ্ধতা আছেই। সবটুকুর দায়ভার আমারই। তবে এটি লেখা এবং প্রকাশের বিষয়ে অনেকেই আন্তরিক সহযোগিতা করেছেন। সকলের প্রতি আমার সশ্রদ্ধ কৃতজ্ঞতা।
মহঃ শের আলী
প্রকাশকের কথা
হজ্জ একটি ফরজ ইবাদত। সামর্থ্যবান ঈমানদার আল্লাহর মেহমান হয়ে তাঁর ঘরে সমবেত হন, জিয়ারত করেন মহানবী (সাঃ)-এর মাযার। হজ্জের গুরুত্ব এবং তাৎপর্যের বিষয়ে বাংলা ভাষায় অনেক সুন্দর সুন্দর পুস্তক রচিত হয়েছে। তেমনি হজ্জের নিয়ম-কানুনের উপরও অনেক বই বাজারে পাওয়া যায়। আবার হজ্জ গাইড বিষয়ক বইয়ের সংখ্যাও কম নয়। কিন্তু হজ্জের অভিজ্ঞতা বর্ণনা সম্বলিত বই তেমন একটা চোখে পড়ে না।
তরুণ লেখক জনাব মহঃ শের আলী হজ্জ : কিছু স্মৃতি কিছু কথা
বইটিতে ব্যক্তিগত উপলব্ধি এবং অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন। সহজ-সরল ভাষায় হৃদয়গ্রাহী করে তুলে ধরেছেন কিছু বিষয়। যেমন হজ্জ মৌসুমে মক্কা-মদীনায় ভিক্ষুক বা হকার চোখে পড়ে সবারই কিন্তু ক’জন তাদের নিয়ে ভাবেন। এমন অনেক বিষয়ে লেখকের দৃষ্টি নিবদ্ধ হয়েছে। তিনি চেষ্টা করেছেন কতিপয় ঘটনা বিশ্লেষণের যা সাধারণভাবে সকলের চোখ এড়িয়ে যায়। লেখক কিছু অসংগতি তুলে ধরেছেন সম্পূর্ণ নিজের করে নিয়ে। এটি তার এ লেখার উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য।
আর এ কারণে আমাদেরও উপলব্ধি জন্মেছে লেখকের এ অনুভূতি সকলের নিকট প্রকাশ করার। সেজন্য আমরা তাঁর লেখাটি ছাপার দায়িত্ব নিয়েছি। ইন্শাআল্লাহ বইটি সকলের ভাল লাগবে।
একটি বইকে নির্ভুলভাবে প্রকাশ করার কাজটি খুবই কষ্টসাধ্য, তবে অসম্ভব নয়। আমরা চেষ্টা করেছি বইটিকে নির্ভুল করার। তবুও বিজ্ঞ পাঠক তার নজরে কোন ত্রুটি লক্ষ্য করলে মেহেরবানী করে আমাদের জানাবেন। পরবর্তী প্রকাশে আমরা সংশোধনের প্রয়াস পাবো।
জাবালে নূরে আরোহণ
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) হেরা গুহায় ৪০ দিন ধ্যানমগ্ন ছিলেন এবং শেষে এ গুহা থেকে নবুয়্যত লাভ করেন। কুরআন নাযিল হয় এখান থেকেই। জিবরাঈল (আঃ) ‘‘ইকরা বিস্মি রাব্বিকাল্লাজি খালাক’’ বলে মহানবীকে (সাঃ) জড়িয়ে ধরেন। সেই হেরা গুহাটি জাবালে নূরে অবস্থিত। জাবাল অর্থ পাহাড় আর কুরআনের নূর অর্থাৎ আলো প্রথম এ পাহাড়ে নাযিল হয়। সেই কারণে হয়ত এ পাহাড়ের নাম জাবালে নূর বা আলোর পাহাড় হতে পারে। এ পাহাড়ের শরিয়তী গুরুত্ব যা-ই হোক না কেন ঐতিহাসিক গুরুত্ব অপরিসীম। এজন্য মহানবীর (সাঃ) গভীর স্মৃতি বিজড়িত এ পাহাড় দেখার বিশেষ করে হেরা গুহা পর্যন্ত পৌঁছানোর আগ্রহ থাকে অনেক হাজীরই। পাহাড়ের উচ্চতা ৩০০০ ফুট বলে লোক মুখে শোনা। কিন্তু বাস্তবে তাকিয়ে উচ্চতা অনেক বেশী মনে হয় আমার কাছে। প্রথমে দেখে আমি সাহস করতে পারিনি এ পাহাড়ে উঠতে পারবো। কেননা পাহাড়ের ঢাল বেশ খাড়া। উঠার জন্য তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই। মানুষের উঠানামার কারণে পথের মতো সৃষ্টি হয়েছে। খাড়া ঢালের ছিটানো নূরীর উপর পা রাখলে পিছলে যেতে পারে এবং দুর্ঘটনাও ঘটতে পারে। শক্ত পাথরের এ পাহাড়ে উঠতে শারীরিক সামর্থ্য, মনোবল এবং ঈমানী চেতনা দরকার। আল্লাহকে বললাম- হে আল্লাহ তুমি আমাকে শারীরিক সামর্থ্য এবং মানসিক শক্তি দাও এর চূড়ায় পৌঁছার। তোমার প্রিয়নবী যেখানে বসে অতি একান্তে তোমাকে স্মরণ করেছেন তা নিজ চোখে দেখার সুযোগ আমাকে দাও। এ পবিত্র ভূমিতে নানা কারণেই পুনরায় আসার সুযোগ হবে কিনা জানিনা। জীবনে আর হয়ত আসা নাও হতে পারে। আবার হলেও বয়স বেশী হলে এ পাহাড়ে উঠার সাহস নাও হতে পারে। যেখানে বসে তোমার প্রিয়তম বান্দা, মানবকুলের নেতা তোমার সান্নিধ্যে পৌঁছেন, সে জায়গাটি দেখার সুযোগ আমাকে দাও। আল্লাহর কাছে এ কথাগুলো বলে পাথরের উপর একটু বসে আবার উঠতে শুরু করলাম। আমার সাথীরা কেউ আমার পেছনে আবার কেউ কেউ আমার সামনে। কিন্তু একটি বিষয় আমাকে অভিভূত করল। আমার পাশ দিয়েই এক বৃদ্ধ বেশ গতিতে আমাকে অতিক্রম করে চলে গেল। ষাটের কাছাকাছি, মুখ ভরা দাড়ি, শ্যামবর্ণের এ বাংলাদেশী বৃদ্ধের ঠিকানা লেখা দেখলাম তার কোমরের ব্যাগের উপর, চাঁপাই নবাবগঞ্জ। তার গতিতে ক্লান্তির ছাপ নেই, মনোবলের কোনো ঘাটতি নেই। আমার থেকে অন্ততঃ ২০ বছর পূর্বে দুনিয়ায় আসা মানুষটির দৃঢ়তা আল্লাহর ইচ্ছায় আমার মনোবল বাড়িয়ে দিলো। আরোহণ অব্যাহত অবস্থায় দেখলাম পথের দু’পাশে বিভিন্ন সমস্যা জর্জরিত মানুষ বসে বা শুয়ে ভিক্ষা চাইছে। পঙ্গুত্ব, দারিদ্র্য বা বার্ধক্য তাদের এ পেশায় এনেছে হয়তবা। প্রচণ্ড রোদের মধ্যে খোলা জায়গায় থাকায় কারো কাছে তারা পানিও চাচ্ছে। কেউ কেউ নিজের পট থেকে একটু পানি মুখের মধ্যে ঢেলে দিয়ে যাচ্ছে। পাহাড়ের পাদদেশের দোকানে পানির দাম ছোট পট যেখানে এক রিয়াল, মাঝামাঝি পৌঁছার পর প্রাপ্ত দোকানে তা দুই রিয়াল। আবার চূড়ার দোকানে দাম আরো বেশী। ভিক্ষুকগুলো ‘‘এক রিয়েল দো’’ বলে প্রার্থনা করছে। কেউ দিচ্ছে, আবার অনেকেই দিচ্ছে না। পাথরের খাড়া পাহাড়ের গায়ে চলার পথ। কোথাও খাড়া পথ, আবার কোথাও সামান্য একটু ঢালু। তবে পাথর কেটে সামান্য প্রসেস করে মাঝে মাঝে সিঁড়ি বানানো আছে। আবার দেখা গেল সিঁড়ির অর্ধেক বানিয়ে বা প্রক্রিয়াধীন রেখে তা দেখিয়ে সাহায্য গ্রহণ করছে। বিষয়টি মনে হয় এমন যে, আমি তোমাদের উঠা-নামার সুবিধার জন্য এ সিঁড়িটি বানাচ্ছি। এর বিনিময়ে আমাকে সাহায্য করো। আমি এমনিতেই হাত পাতছি না। তাও ভাল যে, এরা আরোহীদের কষ্ট বিবেচনায় এ কাজটি করতে পারছে। তবে তাদের মুখের দিকে তাকালে আর্থিকভাবে সুখে থাকা মানুষ মনে হয়নি। এরা আরোহীদের চিনে শুনে তাদের ভাষায় রিয়াল, রুপী, দিনার, ডলার, টাকা বা পাউন্ড চায়।
আমরা কয়েকবার মাঝে মাঝে পাশে পাথরের উপর বসে একটু জিরিয়ে নিয়ে অবশেষে জাবালে নূর-এর চূড়ায় উঠলাম। সেখানে একটি