Discover millions of ebooks, audiobooks, and so much more with a free trial

Only $11.99/month after trial. Cancel anytime.

সাদা কাগজ (উপন্যাস) / Shada Kagoj (Bengali)
সাদা কাগজ (উপন্যাস) / Shada Kagoj (Bengali)
সাদা কাগজ (উপন্যাস) / Shada Kagoj (Bengali)
Ebook332 pages2 hours

সাদা কাগজ (উপন্যাস) / Shada Kagoj (Bengali)

Rating: 0 out of 5 stars

()

Read preview

About this ebook

প্রতিটি মানুষকে জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত অনেকগুলো অধ্যায় অতিক্রম করতে হয়। প্রতিটি অধ্যায় এক একটি জীবন। হোক ক্ষণস্থায়ী বা দীর্ঘস্থায়ী। এর মধ্যেই ঘটে যায় কতো বিবর্তন। জন্ম সূত্রে সে যা পায় অনেক সময় তা কালের পরিক্রমায় যে পরিবর্তন সংঘটিত হচ্ছে তার মাঝে বিলীন হয়ে যায়। যুগের পর যুগ পরিবর্তনের হাওয়া যেমন প্রচণ্ডভাবে বয়ে চলেছে অনাগত ভবিষ্যতের দিকে, তেমন মানুষের মনের গতি দুর্বার বেগে তার পিছে ছুটে চলেছে নিরন্তর। প্রাচীনতাকে পায়ে দলে বর্তমানকে টপকে ভবিষ্যতের সোনালী স্বপ্নে মানুষ আজ বিভোর। প্রভু প্রদত্ত প্রদর্শিত পথকে যারা নিজ স্বার্থ হাসিলে কৃত্রিম বাঁধ দিয়ে একচেটিয়া উপস্বত্ব ভোগ করছিল তাদেরই অধঃস্তন পুরুষের মধ্য থেকে প্রতিবাদী কণ্ঠ তাই সহজে বেরিয়ে আসতে পেরেছে। গোঁড়ামীর জিঞ্জির যারা পরেছিল তাদেরই কঠিন হাতে তা ছিঁড়ে দিতে সহজেই সক্ষম হয়েছে। শিকল পরিয়ে যাকে রাখা হয়েছিল সে কিভাবে তা ছিঁড়ে বেরিয়ে এলো তার নিখুঁত বর্ণনা করার প্রয়াস চালানো হয়েছে এ উপন্যাসে। যার কাহিনী বিন্যাস দু’টি পর্বে সমাপ্ত। প্রথম পর্বের নাম ‘পথের শেষে’।

LanguageBengali
Release dateMay 5, 2015
ISBN9781310809330
সাদা কাগজ (উপন্যাস) / Shada Kagoj (Bengali)

Read more from বজলুর রহমান Bazlur Rahman

Related to সাদা কাগজ (উপন্যাস) / Shada Kagoj (Bengali)

Reviews for সাদা কাগজ (উপন্যাস) / Shada Kagoj (Bengali)

Rating: 0 out of 5 stars
0 ratings

0 ratings0 reviews

What did you think?

Tap to rate

Review must be at least 10 words

    Book preview

    সাদা কাগজ (উপন্যাস) / Shada Kagoj (Bengali) - বজলুর রহমান Bazlur Rahman

    সাদা কাগজ

    প্রতিটি মানুষকে জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত অনেকগুলো অধ্যায় অতিক্রম করতে হয়। প্রতিটি অধ্যায় এক একটি জীবন। হোক ক্ষণস্থায়ী বা দীর্ঘস্থায়ী। এর মধ্যেই ঘটে যায় কতো বিবর্তন। জন্ম সূত্রে সে যা পায় অনেক সময় তা কালের পরিক্রমায় যে পরিবর্তন সংঘটিত হচ্ছে তার মাঝে বিলীন হয়ে যায়। যুগের পর যুগ পরিবর্তনের হাওয়া যেমন প্রচণ্ডভাবে বয়ে চলেছে অনাগত ভবিষ্যতের দিকে, তেমন মানুষের মনের গতি দুর্বার বেগে তার পিছে ছুটে চলেছে নিরন্তর। প্রাচীনতাকে পায়ে দলে বর্তমানকে টপকে ভবিষ্যতের সোনালী স্বপ্নে মানুষ আজ বিভোর। প্রভু প্রদত্ত প্রদর্শিত পথকে যারা নিজ স্বার্থ হাসিলে কৃত্রিম বাঁধ দিয়ে একচেটিয়া উপস্বত্ব ভোগ করছিল তাদেরই অধঃস্তন পুরুষের মধ্য থেকে প্রতিবাদী কণ্ঠ তাই সহজে বেরিয়ে আসতে পেরেছে। গোঁড়ামীর জিঞ্জির যারা পরেছিল তাদেরই কঠিন হাতে তা ছিঁড়ে দিতে সহজেই সক্ষম হয়েছে। শিকল পরিয়ে যাকে রাখা হয়েছিল সে কিভাবে তা ছিঁড়ে বেরিয়ে এলো তার নিখুঁত বর্ণনা করার প্রয়াস চালানো হয়েছে এ উপন্যাসে। যার কাহিনী বিন্যাস দু’টি পর্বে সমাপ্ত। প্রথম পর্বের নাম ‘পথের শেষে’।

    বজলুর রহমান

    তোহফা

    আমার প্রিয় কবি

    কাজী নজরুল ইসলাম

    স্মরণে-

    এক.

    ভেতর বাড়িতে বড় রকমের একটা মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব চলছিল। তাই পাত্র পক্ষের পীড়াপীড়ি সত্ত্বেও আগে বিয়ের কাজ সমাধা না করে খাওয়া দাওয়ার পর্বটি শেষ করে নিলো। গ্রামবাসীসহ নিমন্ত্রিত অতিথির সংখ্যা অনেক। তার মধ্যে অনিমন্ত্রিতের সংখ্যাও কম ছিলো না। এই কারণে পর্বটি শেষ করতে সন্ধ্যা উত্তীর্ণ হয়ে গেলো। কিছু ঘনিষ্ঠ আত্মীয় এবং বরযাত্রী ছাড়া আর প্রায় সবাই বাড়ির পথ ধরেছে। বিয়ে বাড়ির হৈ চৈ আর নেই। বাড়িটা যেন নিস্তব্ধ এক বোবা পুরীর মতো কারও আগমন প্রত্যাশাতে স্থির হয়ে আছে। এমন তো হওয়ার কথা নয়। বিয়ের নিমন্ত্রণে এসে পাত্র পাত্রীর কবুলের মধ্যে দিয়ে যতোক্ষণ অনুষ্ঠানটি শেষ না হয় ততোক্ষণ মজলিস ছেড়ে চলে যাওয়া এদেশে বিশেষ করে পল্লী অঞ্চলে ধারণাই করা যায় না। আজকের এই ব্যতিক্রমের কারণ হলো বর দেখে সবাই হতাশ হয়ে গেছে। বাদরের গলায় মুক্তার মালা! মীর সাহেব কেবল টাকাই চিনলো! এমন বিয়ে দেখার চেয়ে বাড়ি গিয়ে ঘুমিয়ে থাকা অনেক ভালো। এর চেয়ে আরও বিরূপ মন্তব্য শোনা গেছে নিমন্ত্রিতদের মুখ থেকে। বংশ গরিমায় শ্রেষ্ঠত্বের দাবিদার মীর পরিবার আজ অর্থের নেশায় মজে গেছে। আদর স্নেহ, মায়া মহব্বত মূল্যহীন জড় পদার্থের মতো আস্তা কুড়ে বিসর্জন দেয়ার পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। লাখ টাকার বিনিময়ে এই বাড়ির একমাত্র সুন্দরী কিশোরীকে রোগা পটকা ব্যাধিগ্রস্ত কঙ্কাল সার এক বয়স্ক পাত্রের সাথে বিয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। নিমন্ত্রিত অতিথিরা এই অসামঞ্জস্য বিয়ের ব্যাপারটি জানতে পেরে কেউ খেয়ে, কেউ না খেয়ে সরে পড়েছে। বিয়ের অনুষ্ঠান তাদের প্রতি কোনো আগ্রহ সৃষ্টি করতে পারেনি। অভ্যাগতদের প্রকাশ্য নিন্দা মন্দ বাক্যগুলো নীরবে হজম করে মীর সাহেব মুখে শুষ্ক হাসি টেনে নিজের ইজ্জত বাঁচানোর লক্ষ্যে কেবল বলে চলেছেন- তা যাই বলনা কেন ভাই, মেয়েটি ছোট কিনা, তাই দেখে শুনে বড় লোকের ঘরে দিচ্ছি, সুখ শান্তিতে থাকবে। মুখ পাতলা মানুষগুলো চুপ করে থাকতে পারে না। অনেকে বলেই ফেলেছে বড় জাতের গর্ব আর থাকলো কোথায়! টাকার বিনিময়ে সব বিক্রি করে দিলেন? ছি! ছি! কথায় বলে উচিত কথার আহম্মক বেজার। শেষ পর্যন্ত মীর সাহেব আরও অপদস্থ হওয়ার আশঙ্কায় অন্দর মহলে ঢুকে নিজের ঘরে চুপ চাপ বসে থাকলেন। তার বড় ছেলে শমসেরই তার পিতাকে বাহির মজলিস থেকে সরিয়ে দিয়ে নিজের চোখ কান বন্ধ করে তাড়াতাড়ি বিয়ের অনুষ্ঠানটি শেষ করবার জন্যে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। তাদের ভবিষ্যতের রঙিন স্বপ্ন আরও উজ্জ্বলতায় পৌঁছানোর জন্যে বাবা অনেক টাকা পণ নিয়ে মেয়ের বিয়ে দিচ্ছে তাতেই সে সবচেয়ে খুশি।

    অতিথিদের আপ্যায়নের ব্যাপারে যারা কাজ করছিল তারাও উপস্থিত মানুষের মুখে নানা মন্তব্য শুনে উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছে। ওরাও যার যেই খেয়ে দেয়ে পিছুটান দিয়েছে। যেসব ঘনিষ্ঠ আত্মীয়-স্বজন প্রথম প্রথম ছিলেন তারাও নিজেদের বিবেকের কাছে পরাস্থ হয়ে চুপচাপ বসে আছেন। এখন বিয়ের মজলিসে বরযাত্রী ছাড়া আর কাউকেও দেখা যাচ্ছে না। কেবলমাত্র শমসেরের ঘনিষ্ঠ কয়েকজন ঘোরা ফেরা করছে। তাদের ডেকে নিয়ে সে মজলিসে এসে বসলো। এবার বিয়ে পড়ানো হবে। কিন্তু সমস্যা দেখা দিলো ওকালতি করতে কেউ রাজি হলো না। অগত্যা শমসের নিজে এ দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে অজু করতে গেলো। এর মধ্যে ঘটে গেলো বিপত্তি। বরের ছিলো মৃগী রোগ। এমনই সময় রোগটি তাকে পেঁচে ধরলো। অজ্ঞান হয়ে হাত পা ছেড়ে সেখানেই চিৎ হয়ে পড়ে গেলো। চললো সেবা শুশ্রূষা, কিন্তু কোনো কাজ হলো না। অস্থি কঙ্কাল সার এক শব দেহ যেন বিবাহ মজলিসের মাঝখানে পড়ে থেকে নিরানন্দ পরিবেশটাকে আরও কলুষিত করে দিলো। এমন একটা অস্বস্তিকর পরিস্থিতির জন্য কেউ প্রস্তুত ছিলো না। ঘরে বাইরে একটা চাপা গুঞ্জন শুরু হয়ে গেলো। বরযাত্রীদের মধ্যে অনেকেই ইতোপূর্বে তাদের আপ্যায়নের ত্রুটির ব্যাপারে যে হৈ চৈ শুরু করছিল হঠাৎ করে তাদের মুখ শুকিয়ে সাদা হয়ে গেলো। তারা আস্তে আস্তে নিঃশব্দে কেটে পড়তে শুরু করলো। কেবলমাত্র বরের নিকটতম আত্মীয়রা তার চতুর্ষ্পাশে বসে সম্ভাব্য পরিণতি কি হতে পারে সেই চিন্তায় মগ্ন হয়ে গেলো। সংবাদ পেয়ে শমসের অজুর কাজ অসমাপ্ত রেখে বাড়ির ভেতরে ছুটে এলো। তার সাঙ্গ-পাঙ্গদের নিয়ে অচৈতন্য বরের চেতনা ফেরাতে সেবা শুশ্রূষায় ব্যস্ত হয়ে পড়লো। ওদিকে অন্তঃপুরে, মেয়ে মহলে এমন রোগাক্রান্ত ছেলের সাথে মেয়ে বিয়ে দেবো না, তেমন প্রতিজ্ঞা নিয়ে শক্ত অবস্থান তৈরি করছিল।

    রাসেদ গতকাল বন্ধুদের সাথে এসে বিয়ের ব্যাপারে যে সাজগোজ চলছিল তাতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিয়েছিল। গতরাতে তার বন্ধু বাসেতের সাথে ভেতর বাড়িতে থাকবার ব্যবস্থা হলেও সে যায়নি। সে যুক্তি দেখালো বাইরের বৈঠকখানায় আরও যেসব অতিথি আছেন তাদের সাথে রাত কাটাবে। একটা নতুন পরিচিতি তো থাকবে। যে আসল কারণটির জন্য সে বন্ধুর মা আর মামির আবেদন এড়িয়ে গেছে সেটা কারও কাছে প্রকাশ করেনি। সেটি হচ্ছে- বোনদের সাথে আবার এই আপদ এসে জুটলো কেন! মুখ ফুটে না বলা এমন মন্তব্যটি যে মীর সাহেব আর বড় ছেলে শমসের বার বার বলতে গিয়ে চেপে গেছে তাদের মুখের চেহারা দেখেই রাসেদ বুঝে নিয়েছে। তাই সে তাদের থেকে দূরত্ব রেখে বন্ধু ও অন্যান্যদের সাথে মিলে বিবাহ অনুষ্ঠানের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য যা করণীয় তা সে পালন করে এসেছে। বন্ধুর বোন বিধায় নিজের মনে করে আন্তরিকতা সহকারে আনন্দ বাড়ানোর উপকরণ যথাযথভাবে স্থাপন করেছে। আধুনিক মানের আসর সাজানোতে আর সবাই খুশি হলেও মীর সাহেব আর শমসের তাদের নিপুণ হাতের ছোঁয়া পছন্দ করেনি। একটা তীক্ষ্ম দৃষ্টির রাসেদের চোখ এড়ায়নি। বন্ধুর মায়ের একান্ত ইচ্ছায় সে এই বিয়ে বাড়িতে এসেছে। তাই তাকে নিয়ে কে কি ভাবলো তা সে আমলই দিলো না। তার সর্বদা হাসিমুখ, আসর সাজানোর নিপুণতা দেখে অতিথিদের মধ্যে কেউ ভাবতেই পারেনি যে সে মীর বাড়ির কারও পরমাত্মীয় নয়। ভেতরের ডাকটি সে কৌশলে এড়িয়ে বাহিরের হৈ চৈ, আনন্দের মধ্যে ডুবে থাকলো। সে শুনেছে বন্ধুর মামাতো বোন মোহসীনা খুব সুন্দরী। তা সে ভেবে নিয়েছে তার বরও নিশ্চয় তেমন একজন রাজপুত্রের মতো দেখতে সর্বগুণ সম্পন্ন হবে। কল্পনার জালে নিজের ধারণাকে জড়িয়ে নিয়েই বিবাহ মঞ্চের সৌন্দর্য বৃদ্ধির ব্যবস্থা করা হয়েছে। হঠাৎ করে তার উদ্যাম উৎসাহে আনন্দের ভাটা পড়ে গেলো। ছেলে মেয়ের হৈ চৈ- বর এসেছে, বর এসেছে চিৎকার শুনে সে তার বন্ধু বাসেত এগিয়ে গেলো দৃষ্টি আকর্ষণ করার মতো সাজে সজ্জিত গেটের দিকে। বাহনের মধ্যে বর দেখে দু’বন্ধুই চম্কে উঠলো। একী মানুষের জীবিত সন্তান! না, শ্মশান থেকে উঠিয়ে নিয়ে আসা বন্য জন্তুর খুবলে খাওয়া শব দেহ!! একটা অব্যক্ত বেদনায় দু’বন্ধুই কঁকিয়ে উঠলো। আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা যারা বর দেখার জন্য আনন্দ করতে করতে সেখানে জড় হয়েছিল- তারা কেউ নাক সিটকাল, কেউ বিরূপ মন্তব্য করলো, ছোটদের মধ্যে কেউ কেউ হুনুমান বলে চিৎকারও করে উঠল। আস্তে আস্তে ভিড় ঠেলে দু’বন্ধুই বেরিয়ে এলো। অথচ ওদেরই বরকে মঞ্চে নিয়ে আসবার কথা। রাসেদ সেখান থেকে বেরিয়ে একটু দূরে একটা আম গাছ তলায় গিয়ে দাঁড়াল। এখানে আর একদণ্ডও থাকবার ইচ্ছা তার নেই। সে যদি মায়ের সাথে দেখা করতে পারতো তাহলে এই অর্থলোলুপ নিষ্ঠুর পিতার বংশ গরিমার মুখে পদাঘাত করে এখনই এ বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়তো। বন্ধু যে তার সাথে এদিকে আসেনি তা সে এতোক্ষণ খেয়াল করেনি। চারিদিকে চেয়ে দেখলো তেমন কাউকে পাওয়া যায় কিনা যাকে দিয়ে বন্ধুকে ডেকে পাঠাতে পারে। ওদিকে বাসেত সোজা ভেতর বাড়িতে ঢুকে বরের বিবরণ পেশ করতেই একটা গুঞ্জন শুরু হয়ে গেলো।

    রাত বাড়তে থাকে। বরের চেতনা ফেরে না। কয়েকজন সাথি নিয়ে শমসের অস্থির চিত্তে অপেক্ষা করতে থাকে। এমতাবস্থায় কনের মা খালা আর ফুফুরা কি করবে তা স্থির করে ফেললেন। বাসেতকে করণীয় বিষয়টি জানিয়ে সেটা সমাধা করবার সব দায়িত্ব তার উপর অর্পণ করলেন। বাসেত বাইরে বেরিয়ে এলো, রাসেদকে খুঁজে বের করতে কিছুটা সময় গেলো। এখন রাত দশটা বেজে গেছে। মা ডাকছেন বলে জোর করে তার হাত ধরে টেনে নিয়ে গেলো ভেতর বাড়িতে। এর আগে মা অনেকবার ডাকতে পাঠিয়েছেন কিন্তু সে একবারও যায়নি, বাসেত তাকে নিয়েও যেতে পারেনি। এবার যে কেন মন্ত্রমুগ্ধের মতো তার সাথে গেলো তা সে নিজেই বুঝতে পারলো না। মামীর অনুরোধ আর মায়ের আদেশ তাকে বোবা বানিয়ে দিলো। স্বপ্ন দেখতেও সময় লাগে কিন্তু তার চেয়েও কম সময়ে সে এক নতুন জগতে প্রবেশ করলো। বাসেত নিজেই উভয়ের পরস্পরের স্বীকৃতির মাধ্যমে চিরস্থায়ী বন্ধনের কাজ সমাধা করে দিলো। মেয়ে মহলে একটা স্বস্তি ফিরে এলেও এর সম্ভাব্য পরিণতি কি হতে পারে তা কেউ ভেবে দেখার সময় পায়নি। বাহিরে অচৈতন্য বরের চেতনা না ফেরার কারণে ভীষণ চিন্তার মধ্যে সময় বয়ে যাচ্ছে শমসেরের। ভেতর বাড়ির এই ষড়যন্ত্রের কথা যখন তার কানে পৌঁছলো তখন সে ক্রোধে অগ্নিশর্মা হয়ে ছুটে গেলো অন্তঃপুরে। শুনল ঘটনা সত্য। সে কোনো প্রকার উত্তেজিত না হয়ে বাইরে বেরিয়ে এলো। বোনের বিয়েতে কোনো রকম অঘটন ঘটতে পারে এমন আশঙ্কায় সে প্রথমেই লেঠেল সর্দার রজব আলী হাওলাদার আর তার কয়েকজন সঙ্গীকে দাওয়াত দিয়ে নিয়ে এসেছিল। তারা বাইরে মঞ্চের উপর বরের চারপাশে বসেছিল। শমসের বাইরে এসে ইশারা করতেই তারা ছুটে নেমে এলো। যে মীর বাড়ির অন্তঃপুরে হাওয়া প্রবেশ করতেও ভয় পেতো সেই কঠিন পর্দা প্রথার নিয়ম ভঙ্গ করে চার পাঁচজন লেঠেল সঙ্গে নিয়ে শমসের ভেতরে ঢুকে গেলো। যে ঘরে রাসেদকে নিয়ে বাসেত, মা, স্ত্রী, মামী খালাদের নিয়ে বসেছিল সেখানে গিয়ে ঢুকে পড়লো। একটি সাদা কাগজ রাসেদের সামনে মেলে ধরে বললো- বিয়ে করেছিস ভালো কথা এবার ভালো ভালো তালাক দিয়ে সরে পড় যদি জানে বাঁচতে চাস। ঘরের মধ্যে যারা ছিলো তারা সবাই একযোগে বাধা দিতে এগিয়ে এলে শমসেরের ইঙ্গিতে লেঠেল বাহিনী ঘরে ঢুকে জোর করে রাসেদকে কাঁধে তুলে নিয়ে ঘরে শিকল তুলে দিয়ে বেরিয়ে গেলো। বাইরে বের করে নিয়ে গিয়ে একটি ধারাল ছোরা তার সামনে ধরে বললো- শীঘ্র কইরা তালাক লিখ্যা দে নইলে এখনই গলা কাইট্যা নিমু। রাসেদ কাঁপা হাতে কলম তুলে নিয়ে কাগজের নিচে নাম লিখে দিয়ে কম্পিত কণ্ঠে বললো, আপনারা যা খুশি লিখে নিন আমি সই করে দিয়েছি। শমসের ‘পরে লেখব’ বলে কাগজটি ভাঁজ করে পকেটে পুরে ওদের নিয়ে ঘাটের দিকে গেলো। কি করতে হবে লেঠেল সর্দারের কানে কানে বলে দিয়ে সে বাড়ি ফিরে এলো। এর মধ্যেই বাড়িতে হা-হুতাশ, গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে কান্নার রোল পড়ে গেছে। যে বাড়ির মেয়ে মহলের একটা টু শব্দ বাইরে প্রকাশ পায় না সেই বাড়ির ভেতর থেকে অনেকগুলো মেয়েদের কান্নার আওয়াজ শুনে পাড়া প্রতিবেশীরা ছুটে এলো কি ব্যাপার জানতে। দেখতে দেখতে ঘটনাটি একান ওকান হতে হতে সমস্ত গ্রাম ছড়িয়ে পড়লো। অল্প সময়ের মধ্যে মীর বাড়ির ভেতরে মেয়েদের আর বাহিরে পুরুষের ভিড় জমে গেলো। বন্দীদশা থেকে ছাড়া পেয়ে বাসেত ঘরের বাইরে বেরিয়ে এলো। ব্যাপারটি তার কাছ থেকে শুনে গ্রামের মানুষ শমসেরকে বদমায়েশ শয়তান বলে গালাগাল দিতে লাগলো। সেই তার বাবার কানভারি করে এমন অসম বিয়ের ব্যবস্থা করেছে। তারপর যদিও মেয়েটির একটি গতি হলো তাও শয়তানটার সহ্য হলো না। কোথায় সে! খুঁজে বের করতে হবে। দেখি সেই ছেলেটিকে কোথায় নিয়ে গেলো। কয়েকজন বয়স্ক নেতৃস্থানীয় মানুষ ধমক দিলো উপস্থিত ছেলেদের। এই ছেলেরা তোরা এখনও দাঁড়িয়ে কি দেখছিস? তাড়াতাড়ি শমসেরকে খুঁজে বের করে নিয়ে আয় নইলে রজব আলীর হাতে দিলে হয়তো বড় গাঙে ছেলেটাকে ভাসিয়ে দিয়ে আসবে। একদল জোয়ান ছেলেদের নিয়ে বাসেত অন্ধকারে বেরিয়ে পড়লো। বাড়ির আঙিনায় এসে শমসের অনেক মানুষের হাক ডাক শুনে ঘাবড়িয়ে গেলো। সে বুঝল এখনই বাড়ি ঢুকলে তার জীবন বাঁচানোর দায় হয়ে যাবে। কেননা সে তো আর কোনো প্রকারেই রাসেদকে তাদের হাতে এনে দিতে পারবে না। রজব আলী এতোক্ষণ তাকে হয়তো হাত পা বেঁধে বড় গাঙে ফেলে দিয়েছে। বাঁচতে হলে এখনই তাকে সরে পড়তে হবে। সে তখনই অন্ধকারে গা ঢাকা দিলো। গ্রামের জোয়ান ছেলেরা কয়েক দলে বিভক্ত হয়ে চারদিকে ছড়িয়ে পড়লো। গ্রাম, পার্শ্ববর্তী গ্রাম, নদীর পাড়, খালের মধ্যে, মাঠের ভেতর রাত দু’টো পর্যন্ত খোঁজা-খুঁজি করলো। তার স্ত্রী বললো- কোথায় গেছে জানি না, ঘরে নেই। সবাই হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরে গেলো। মধ্য রাতের পর বরের চেতনা ফিরে এলো। তাদের খোঁজ-খবর নেয়ার একটি মানুষও সেখানে নেই। রাতে বর এবং তার সঙ্গীদের শয়নের ব্যবস্থাও কেউ করলো না। তারা সেই মঞ্চের উপরেই যেভাবে ছিলো তেমনই গড়িয়ে রাত পার করলো। ওদিকে রাসেদকে জোর করে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়ার পর থেকেই কনে অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে। সমস্ত রাত এমনি ভাবে কেটে গেলো, তার মাথায় পানি দেয়া, বাতাস করা, সেবা যত্নের ত্রুটি না হলেও জ্ঞান ফিরে আসেনি। বাড়ির আর সব মহিলাদের দুশ্চিন্তায় রাত গেলো, কেউ একটুও দু’চোখের পাতা বুঁজতে পারেনি।

    পরদিন সকালেও শমসেরের কোনো খোঁজ-খবর না পেয়ে বাসেত কয়েকজন যুবককে সাথে নিয়ে গেলো রজব আলীর বাড়ি। তাকেও পেলো না। কয়েকজন বয়োজ্যৈষ্ঠ মুরুব্বিয়ান পরামর্শ দিলো, থানায় যেতে। অগত্যা বাসেত আর কি করে বাধ্য হয়েই কঠোর পদক্ষেপ নিতে থানায় যাওয়ার জন্য বেরিয়ে পড়লো। তার ছোট মামার ছেলে আর পাড়া সম্পর্কে ভাই এমন জন চারেক তার সঙ্গী হলো। তারা নদীর ঘাটে গিয়ে দেখে মেজ দারোগা চারজন সিপাই নিয়ে নৌকা থেকে নামছেন। তাদের পেছনে বরের এক মামা। তিনি এসেছিলেন ভাগ্নের বিয়েতে। সমস্ত রাত অনাদরে অবহেলায় মশার কামড় সহ্য করে এক প্রকার অবাঞ্ছিত বোবার মতো মঞ্চের উপর রাত কাটিয়েছেন। ভোরবেলা তিনিই থানায় গিয়ে অভিযোগ দায়ের করেছেন- মীর সাহেব লক্ষাধিক টাকার বিনিময়ে তার মেয়েকে আমার ভাগ্নের সাথে বিয়ে দেয়ার অঙ্গিকার করে দিন ধার্য করেছেন। আমরা সেই মোতাবেক গতকাল অপরাহ্নে ভাগ্নেকে নিয়ে বিয়ে করাতে আসি। প্রথম প্রথম আমাদের প্রতি কৃত্রিম সমাদর দেখালেও পরবর্তীতে চরম প্রতারণা করা হয়েছে। আমরা খাওয়ার আগে বিয়ে পড়ানোর দাবি জানালে তারা তা অস্বীকার করে প্রথমে খেতে দেয়। খাওয়ার পরে আমার ভাগ্নে হঠাৎ করে অজ্ঞান হয়ে পড়ে। এর পরে আমাদের প্রতি তাদের বিমাতাসুলভ আচরণ চলতে থাকে। আমার সন্দেহ- কন্যা পক্ষ বরের খাবারের মধ্যে কোনো বিষাক্ত কিছু মিশিয়ে দিয়ে তাকে অজ্ঞান করে ফেলেছে। সমস্ত রাত তারা আমাদের কোনো খোঁজ-খবর নেয়নি। তাছাড়া অনেক রাত অবধি মীর বাড়িতে বহু মানুষের সমাগম হয়েছে। তাদের হাক-ডাক, গালাগালি, নানা প্রকার খারাপ মন্তব্য শুনতে পেয়েছি। একটা মারমুখি ভাব বুঝে আমরা তাদের সামনে যাইনি। বাড়ির ভেতরের দিকে

    Enjoying the preview?
    Page 1 of 1