প্রলয়ক্ষণ( Apocalypse)
()
About this ebook
Man kind has only one planet to live on.But are we looking after our planet ? What will happen if this world becomes uninhabitable or destroyed by some cataclysm-natural or man made ? What is the insurance of Human Species ?
একটাই মাত্র পৃথিবী আমাদের।কিন্তু আমরা কী এর যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ করছি ? কী হবে যদি এই পৃথিবী অনাবাসযোগ্য বা ধ্বংস হয়ে যায় - কোন মনুষ্য সৃষ্ট বা প্রাকৃতিক দুর্বিপাকের কারণে ?
Mahbub Murshed
Medicine Doctor Medical Science Writer Blog writer
Reviews for প্রলয়ক্ষণ( Apocalypse)
0 ratings0 reviews
Book preview
প্রলয়ক্ষণ( Apocalypse) - Mahbub Murshed
প্রলয়ক্ষণ
একটি বৈজ্ঞানিক কল্প-কাহিনী
লেখক
মাহবুব মোর্শেদ
একটি ভ্যালেন্টাইন পার্ক প্রকাশনা
APOCALYPSE
A Science Fiction
Mahbub Murshed
( Al Kamur)
A Valentines Park Publication
উৎসর্গ
পৃথিবীর পরিবেশ রক্ষায় আন্দোলনকারী
এবং পরিবেশ বান্ধব মানুষদের
প্রলয়ক্ষণ
শুরু
মাটির নীচের জলরোধক বাংকার হতে বাইরে বেরিয়ে এল রাইফ। বাইরের পৃথিবীতে মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে। শোঁ শোঁ বাতাস বইছে। বৃষ্টির বেগ ক্রমশঃ বাড়ছে। আকাশ ছাই-রংগা মেঘে ঢাকা। খুব ছোট বেলায় লন্ডনে বাদলা দিনে ঘুম ভেংগে জানালা দিয়ে বাইরে তাকালে যে রকম দেখাতো। তবে এ বৃষ্টি যে সাধারণ আষাঢ়ে বৃষ্টি নয় তা সত্তর পেরোনো আবহাওয়া বিজ্ঞানী রাইফ ভাল করেই জানেন।
বৃষ্টির সাথে ঘন ঘন বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। এ বিদ্যুৎ চমকও ভয়ংকর সুন্দর - আকাশের এক মাথা হতে আরেক মাথা চিরে চিরে যাচ্ছে।
সমুদ্রের শোঁ শোঁ গর্জন আরো জোরালো হয়ে উঠেছে। সমুদ্র গর্জনকে অনেকটা শাঁখ বাজার শব্দের মতো মনে হচ্ছে। এটা কী ইস্রাফিলের শিংগার শব্দ ? ভাবলেন রাঈফ।
পথ চিনে হাঁটতে বেশ কষ্ট হচ্ছে বিজ্ঞানী রাঈফের। প্রচন্ড বাতাস বার বার উড়িয়ে নিয়ে যেতে চাইছে । তার জলরোধক চশমার কাঁচ ঝাঁপসা হয়ে যাচ্ছে বার বার । বিদ্যুৎ চমক চোখ ধাঁধিয়ে দিচ্ছে। বজ্রের শব্দ কানে তালা লাগিয়ে দিচ্ছে।
তার লেজার ওয়াকিং স্টিক বার বার বিপদ সংকেত দিচ্ছে। অবশেষে দূরে দ্বীপের শেষ প্রান্তে সমুদ্রের পাড়ে দাঁড়ানো গাছটাকে দেখতে পেলেন রাঈফ।
ওই খানে অই লেবু গাছের নীচেই সুজানার কবর। রাঈফের সাথে বাংলাদেশে বেড়াতে এসে এই দেশকে ভালবেসে ফেলেছিল যে ব্রিটিশ তরুণি। আর সমুদ্র পাড়ের এই দ্বীপেই যে শুয়ে আছে লেবু গাছের নীচে। ঠুক ঠুক করতে করতে কোন রকমে সুজানার কবরের পাশে এসে পৌঁছলেন বিজ্ঞানী রাঈফ।
কবরের পাশে নুয়ে পড়া লেবু পাতা হতে শ্বেত পাথরের উপর ঝরে পড়ছে বৃষ্টির ফোঁটা। লেবু গাছের পাশে ধপ করে বসে পড়লেন তিনি। আশ্চর্য হয়ে লক্ষ্য করলেন লেবু গাছে ফুল ফুটেছে । পরিবেশের ভয়াবহ বিপর্যয়ের মধ্যেও লেবু গাছে ফুল ফুটেছে দেখে তিনি মুগ্ধ হলেন। প্রাণ ভরে লেবু ফুলের গন্ধ নিলেন। কবে কোন কিশোরকালে বাবার সাথে বাংলাদেশে এসে লেবু ফুলের গন্ধ নিয়েছিলেন তা মনে করতে পারলেন না । তবে লেবু ফুলের গন্ধে অনেক কাল আগে লন্ডনে বসে বাবার কাছে শোনা একটা ছড়া মনে পড়লো তার।
নেবুর পাতায় করমচা,
আয় বৃষ্টি ঝরে যা ।
ছড়াটি বার বার তার মনে হতে লাগলো।
রাইফের দুচোখ ঘুমে জড়িয়ে আসছিল। প্রচন্ড বজ্র বিদ্যুতের শব্দে জেগে ঊঠলেন। ঘুমালে চলবে না। তাকে এখন যেতে হবে সমুদ্রের একেবারে প্রান্তে - নির্দিষ্ট স্থানটিতে। টাইটানিয়ামের ঘড়িতে সময় দেখলেন। দুপুর বারোটা বেজে এগারো মিনিট। মহাপ্রলয় শুরু হয়ে গেছে। কিন্তু ওরা আসবে তো ?
ওয়াকিং স্টিক-এ ভর দিয়ে আবার ঊঠে দাঁড়ালেন এবং সমস্ত শক্তি একত্রিত করে এগিয়ে চললেন সমুদ্রের দিকে - কাঠের ব্রিজের উপর ঠক ঠক শব্দ তুলে।
সমুদ্র আরো উত্তাল হয়ে উঠেছে । আকাশ ঢেকে যাচ্ছে ঘন কালো মেঘে। আকাশের এ মাথা হতে ও মাথা একবার স্ক্যান করলেন তিনি। ওদের সংকেত তিনি আগেই পেয়েছেন। তার নিশ্চিত বিশ্বাস তারা আসবে।
হঠাৎ ঘন কালো মেঘের ভেতর থেকে তিনি বেরিয়ে আসতে দেখলেন জিনিসটিকে- ঘুরন্ত চাক্তির মতো। চারপাশে সবুজ,লাল,কমলা আর নীলাভ দ্যুতি ছড়াচ্ছে। এই বজ্র বিদ্যুৎ এবং ঝড়-বৃষ্টির মধ্যেও তার গতি মসৃণ এবং সুনির্দিষ্ট । স্পেস শিপটি ঠিক তার মাথার উপরে এসে স্থির হলো।
প্রশান্ত মহাসাগরের রহস্যময় উড়ন্ত যান
দুবছর আগের কথা ।
প্রশান্ত মহাসাগরের গভীরে ঘুরে বেড়াচ্ছিল রাশিয়ান সাবমেরিন আইভান।
এটা একটা সমন্বিত মহড়ার অংশ। প্রশান্ত মহাসাগরের এ অংশের সমুদ্রে বিভিন্ন রহস্যজনক সংকেত পাওয়া যাচ্ছে । শুধু তা-ই নয় সমুদ্রের নিচে এবং উপরে বেশ কিছু রহস্যময় যানের আনাগোনার খবর পাওয়া গেছে বিভিন্ন যাত্রীবাহী এবং মালবাহী জাহাজের ক্যাপ্টেনদের কথা-বার্তায়। কিছু কিছু রহস্যময় যান আবার বিপদজনক নিকট দূরত্বে থেকে কিছু জাহাজকে অনুসরণ করছিল। তাই পারমাণবিক সাবমেরিন, এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার, ডেস্ট্রয়ার সহযোগে এই মহড়ার আয়োজন।
তবে এখনো পর্যন্ত তেমন কিছু ধরা পড়েনি ওদের রাডারে বা সোনারে।
তা-ই এই মহড়াকে সবাই একটু সহজভাবে-ই নিয়েছে।
মাঝ দুপুর।
কন্ট্রোল রুমে বসে লাঞ্চ খেতে খতে গল্প করছিল ওয়াচ অফিসার ইগর পেশকভ। হঠাৎ মাইক্রোফোনে বিশ্রি কড় কড় শব্দ হলো এবং একটু পরেই অদ্ভুত এক সংকেত দিতে লাগলো সোনার। স্ক্রিনের দিকে চোখ পড়তেই মুখ হা হয়ে স্যান্ডউইচের টুকরো পড়ে যাবার উপক্রম হলো পেশকভের।
অত্যন্ত দ্রুতগামী কোন যান ছুটে আসছে তাদের দিকে ।
এতো দ্রুত যে অবিশ্বাস্য - ১৫০ নট গতিতে। ঘন্টায় ৫০ নটের বেশি গতিতে ছুটতে পারেনা কোন সাবমেরিন - আমেরিকার সবচে আধুনিক সাবমেরিন ও না। আর এটা চলছে সুমদ্র পৃষ্ঠের ২০হাজার ফুট নিচ দিয়ে ! পৃথিবীর কোন সাবমেরিন এখনো পর্যন্ত ১০০০০ ফুটের গভীরে ডুব দিতে পারে না। অজ্ঞাত যানটি উপরে উঠে আসছে দ্রুত গতিতে। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে উঠলো পেশকভের। ছোঁ মেরে ইমার্জেন্সী ফোনটা তুলে নিয়ে গড় গড় করে ভাইস অ্যাডমিরাল ভ্লাদিমির চেরনোভস্কিকে এক নিঃশ্বাসে বলে থামলো সে। একটু পরেই বিপদ সংকেত বেজে উঠলো। রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে - সবাই যেন প্রস্তুত থাকে যে কোন বিপদের জন্য।
ভাইস অ্যাডমিরালের রেড অ্যালার্ট পেয়ে তড়িৎ ব্যবস্থা নিলেন ন্যাভাল শিপের কম্যান্ডার ইউরি বেলেনকভ। গানাররা সবাই মিসাইল লঞ্চ প্যাডে পজিশন নিয়ে অপেক্ষা করছে এবং ন্যাভাল এয়ার ক্রাফট-এর পাইলটরা মিগ বিমানগুলোতে। হঠাৎ সমুদ্রের পানিতে আলোড়ন উঠলো এবং নাবিক ও গানাররা অবাক হয়ে দেখলো বিশাল চকচকে দুটো রূপোর চাকতি তেরচাভাবে উঠে এসেছে সমুদ্রের নিচ থেকে। চাকতি দুটো তাদের জাহাজের এতো কাছ ঘেঁষে উঠলো যে তাকে রীতিমতো আক্রমণাত্মক বলে ধরা যেতে পারে। তাদের জাহাজ মৃদু দুলে উঠলো। ইউরি একটি মিসাইল লঞ্চ করার আদেশ দিলেন।