স্বপ্নের সন্ধানে
()
About this ebook
উপন্যাসের নায়ক নকশালবাড়ি আন্দোলনে যোগদিয়ে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিল বিপ্লবের মধ্যদিয়ে এক সুন্দর পৃথিবী গড়ে তুলবে। সে স্বপ্ন একদিন ভেঙে গেল। কিন্তু হতাশ না হয়ে সে আবার শুরু করল এক নতুন স্বপ্নের সন্ধান যা দিয়ে সে জীবনটাকে অর্থবহ করে তুলতে পারবে।
Ratan Lal Basu
ADDRESS: KOLKATAPh. D. in EconomicsProfession: Retired from 1st January, 2009 from the post of Reader in Economics and Teacher-in-Charge, Bhairab Ganguly College, Kolkata, India
Read more from Ratan Lal Basu
অসাধারণ-সুন্দর ও অন্যান্য গল্প Rating: 0 out of 5 stars0 ratingsদূরের পাহাড় ও অন্যান্য গল্প Rating: 0 out of 5 stars0 ratingsগণেশ ঠাকুরের ভক্ত ও অন্যান্য গল্প Rating: 0 out of 5 stars0 ratingsডায়ারির পাতা থেকে Rating: 0 out of 5 stars0 ratingsপ্রতিবিম্ব Rating: 0 out of 5 stars0 ratingsগল্পের ফুলঝুরি Rating: 0 out of 5 stars0 ratingsস্বপ্ন স্মৃতি বাস্তব Rating: 0 out of 5 stars0 ratings
Related to স্বপ্নের সন্ধানে
Reviews for স্বপ্নের সন্ধানে
0 ratings0 reviews
Book preview
স্বপ্নের সন্ধানে - Ratan Lal Basu
স্বপ্নের সন্ধানে
Ratan Lal Basu
Copyright 2016 Ratan Lal Basu
Smashwords Edition
Smashwords Edition, License Notes
Thank you for downloading this free ebook. Although this is a free book, it remains the copyrighted property of the author, and may not be reproduced, copied and distributed for commercial or non- commercial purposes. If you have enjoyed this book, please encourage your friends to download their own copy at Smashwords.com, where they can also discover other works by this author. Thank you for your support.
সূচিপত্র
প্রথম অধ্যায়
দ্বিতীয় অধ্যায়
তৃতীয় অধ্যায়
চতুর্থ অধ্যায়
পঞ্চম অধ্যায়
ষষ্ঠ অধ্যায়
সপ্তম অধ্যায়
অষ্টম অধ্যায়
নবম অধ্যায়
লেখক পরিচিতি
প্রথম অধ্যায়
-১-
সিগারেটে একটা জোর টান দিয়ে অলোকদা বললেন, ‘ভালোকথা, তোমার থিসিস কবে সাবমিট করছ না এরমধ্যেই সাবমিট করে ফেলেছ?’
দীপক একটু ইতস্ততঃ করল, তারপর মাথা খুঁটতে খুঁটতে আমতা আমতা করে বলল, ‘রিসার্চ অনেকদিন হল ছেড়ে দিয়েছি’।
অলোকদা চোখ বড়বড় করে দীপকের দিকে তাকালেন। যেন কথাটা ঠিক বিশ্বাস করতে পারেননি। কে জানে দীপক ঠাট্টা করছে কিনা। অলোকদাকে জিজ্ঞাসু চোখে তাকাতে দেখে দীপক বেশ জোরের সঙ্গে বলল, ‘আমি সিরিয়াসলি বলছি। ওসব একদম ভালো লাগছিলনা। মনেহল কিহবে ফালতু সময় নষ্ট করে? তাই ছেড়ে দিলাম’।
অলোকদাকে বেশ চিন্তিত দেখালো মাথা নিচু করে কি যেন ভাবতে লাগলেন। দীপক টেবিলের উপর থেকে একটা খাতা নিয়ে আনমনে নাড়াচাড়া করতে লাগল। দীপকের দিকে আড়চোখে চেয়ে অলোকদা বললেন, ‘তোমার সমস্যা আমি এবার কিছুটা আঁচ করতে পেরেছি। একটা স্বপ্ন হঠাৎ হারিয়ে যাওয়ার ব্যাপার। তাইতো?’
অলোকদার মাথার মাঝখানের চুল পাতলা হয়ে এসেছে। টাক পড়িপড়ি ভাব। পাঞ্জাবির বোতাম খোলা ঊর্ধভাগ থেকে একরাশ কালোচুল উঁকিঝুঁকি মারছে। দীপক এতক্ষণ মাকড়সাটাকে দেখছিল। জালবোনা অনেকটা শেষ করে এনেছে। আলমারির মাথায় মাথায় তুম্বুকরা জীর্ণ ফাইলের বোঝা মাকড়সার জাল আর নানান আবর্জনায় ভরে আছে। কি কাজে লাগে ওসব পুরোনো ফাইল?
অলোকদা দীপককে চুপচাপ বসে থাকতে দেখে বললেন, ‘কিহে চুপ করে আছ কেন?’
দীপক হেসে বলল, ‘আসলে আমি অবাক হয়ে ভাবছিলাম কি করে আপনি আমার মনের কথাটা বুঝে ফেলেছেন’।
অলোকদা ম্লান হেসে বললেন, ‘তোমার মত আমিওতো অনেকটা একই রকম ভাবে ভাবি, একই যন্ত্রণা ভোগ করি। যে স্বপ্নকে কেন্দ্র করে আমাদের জীবনটা আবর্তিত হয়েছে তা হঠাৎ হাওয়ায় উবে গেল। একটা গভীর শূণ্যতা এসে আমাদের সমগ্র সত্তাকে গ্রাস করল’।
দীপক বলে, ‘সেজন্যেইতো আজকাল আমার কিছু ভালো লাগেনা’।
অলোকদা এবার কিছুটা উৎসাহ নিয়ে বলতে থাকেন, ‘কিন্তু দীপক, আমাদেরতো হেরে গেলে চলবেনা, হতাশার অন্ধকারে ডুবে গেলে চলবেনা। আবার আমাদের সন্ধান করতে হবে নূতন এক স্বপ্নের। তা না হলে জীবনটা সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যহীন অর্থহীন হয়ে পড়বে। তোমাকে আমি সংকীর্ণ স্বার্থসিদ্ধির জন্য ডক্টরেট করার কথা বলিনি। আসলে একটা সিরিয়াস কাজে লেগে না থাকলে হতাশা এসে তোমাকে গ্রাস করবে’।
দীপক বলে, ‘কথাটা আপনি ঠিকই বলেছেন। কিন্তু ডক্টরেট করতে গেলে বাধাধরা গতে গবেষণা করতে হয়। সেটা আমার একদম ভালো লাগছিলনা। তার চেয়ে নিজের যা ভালো লাগে সেরকম বিষয়ে স্বাধীন ভাবে গবেষণা করতেই আমার ভালো লাগে। তাতে ডিগ্রি মিলবেনা, কিন্তু মনে শান্তি পাওয়া যাবে’।
অলোকদা উজ্জ্বীবিত হয়ে বলেন, ‘তুমি কি সেরকম কোনো বিষয়ে স্বাধীন গবেষণা করছ নাকি?’
দীপক মৃদুস্বরে বলে, ‘না এখনো সেরকম কিছু মাথায় আসেনি’।
অলোকদা বলেন, ‘তোমার সাথেতো এ বিষয় নিয়ে অনেক আলোচনা করার আছে। একদিন আমার বাড়িতে বসে দীর্ঘক্ষণ আলোচনা করা যাবে। ও হো তোমাকেত চা খাওয়ানো হয়নি। কেক খাবে?’
‘আপত্তি নেই’।
‘তুমি কখন বাড়ি ফিরবে?’
‘দেড়টার সময় একটা বাস আছে, তেঁতুলডাঙাহয়ে যায়। সেটাতেই ফিরব’।
‘গ্রীষ্মের বন্ধে আছতো? এক রোববার আমার বাড়িতে চলে আসনা। আমারওতো মনে তোমার মত অনেক প্রশ্ন জমা হয়ে আছে। দুজনে খোলামনে আলোচনা করলে অনেকটা হাল্কা হওয়া যাবে’।
চা পর্ব শেষ করে দীপক বিদায় নিল। একটা সিগারেট ধরিয়ে বুকভরে টানতে থাকল। একতলার বারান্দা থেকে দুতিনধাপ লম্বা সিঁড়ি অফিসের ঘাসের লন পর্যন্ত নেমে গেছে। মাঝে মাঝে সিঁড়ির প্লাস্টার উঠে গেছে। ঘাঁস আর ঢেঁকিশাক গজিয়েছে। দারোয়ানটা টুলে বসে ঝিমোচ্ছে। সামনের ঘরের এক যুবক ক্লার্ক সবুজশাড়ি মহিলার সামনের চেয়ারে জাঁকিয়ে বসেছে। মহিলার মুখে ব্রণর দাগ। সিঁথিতে সিঁদুর। কপালের সিঁদুরের টিপ ঘামে ভিজে লাল রেখায় নাকের গোড়া বরাবর নেমে এসেছে। ছেলেটা কি একটা কথা বলতে মহিলা হাসিতে ফেটে দীপক লনে নেমে সিগারেট টানতে টানতে পিচ রাস্তার দিকে এগিয়ে চলল।
আজ অলোকদার সান্নিধ্য দীপককে অনেকটা তৃপ্তি দিয়েছে। মনের বোঝা যেন বেশ কিছুটা হাল্কা হয়ে গেছে। অলোকদা ঠিকই বলেছেন, একটা স্বপ্ন হারিয়ে গেছে। আবার নতুন এক স্বপ্নকে খুঁজে বের করতে হবে।
রঙধামালির তিস্তার বিশাল চরের পাশ ঘেঁষে তেঁতুলডাঙার বাস ছুটে চলেছে। পিচরাস্তার উপর চাষিরা ধান শুকোতে দিয়েছে। ছোটছোট ছেলেমেয়েরা বাস দেখে রাস্তার ধারে এসে দাঁড়িয়ে বাসের যাত্রীদের উদ্দেশ্যে হাত নাড়তে থাকে।
দীপকের এই ছুটিতে বাড়ি আসার কথা ছিলনা, ভেবেছিল কোথাও বেড়াতে যাবে। কিন্তু মা-বাবার জন্য মনকেমন করায় মত বদল করল। একদিন বাড়ির উদ্দেশ্য দার্জিলিং মেল এ চেপে বসল।
-২-
দার্জিলিং মেলটা শিয়ালদার কারশেড থেকে বেরিয়ে গুটিগুটি এগিয়ে আসছিল। যাত্রীদের হুটোপুটি, ইঞ্জিনের ক্রমবর্ধমান হুসহাস শব্দ, আর হেড লাইটের আলোর ঝলকে হাবুডুবু খাচ্ছিল দীপক। ট্রেনের বগিগুলো আলোছায়ার জাফরি ছড়িয়ে একের পর এক পাশকাটিয়ে যাচ্ছিল। ফার্স্টক্লাশ, লেডিসটু-টায়ার থ্রি-টায়ার বগিগুলো একের পর এক দীপকের পাশদিয়ে চলে যাচ্ছিল। দীপকের রিসার্ভেশন নেই। সাধারণ কম্পার্টমেন্টে উঠতে হবে। ওর মালবাহী কুলিটাই জায়গা করে দেবে বলেছে, অতিরিক্ত কিছু টাকার বদলে। দীপকের পলকহীন চোখদুটো তাই কুলিটার দিকে। ওরই মত লড়াকু ভঙ্গিতে পেশিগুলোকে শক্ত আর সজাগ করে ওঁৎ পেতে থাকে দীপক, কখন নির্দিষ্ট বগিটা সামনে এসে পড়বে। কুলির সংকেত আসতেই দীপক সামনের বগিটার চলন্ত হাতলে নিজেকে ঝুলিয়ে নিল। পিছনথেকে ধাক্কা খেতেখেতে যেন একটা অন্ধকার সুড়ঙ্গের মধ্যদিয়ে কুলিটার ঠিক পিছন পিছন এগিয়ে চলতে বাধ্য হল। কুলিটা অসম্ভব দক্ষতার সাথে একটা বাঙ্কের উপর ধুপকরে দীপকের সুটকেসটা নামিয়ে দিয়ে দীপককে জানলার ধারের সিটে বসিয়ে দিল। স্টেশনে গাড়ি ইন করতেই দীপক ও আরো অনেকে নিজেদের পাশের জানলা খুলে দিল। জানলা খুলে দেওয়ার সাথে সাথে স্টেশনের আলোর ঝলক কামরাটাকে আলোকময় করে তুলল। এখন কামরার মধ্যের সবকিছু স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। পাশের বেঞ্চদুটো কিছু ছেলে দখল করেছে। ওরা যাত্রী নয়, সিট বিক্রি করে পয়সা উপার্জন করে। ওদের সাথে দরাদরি করে অনেকে সিট কিনতে লাগল। এবার কামরার ভিতরের আলো জ্বলে উঠল। দীপক জানলাদিয়ে বাইরে মুখ বাড়িয়ে সিগারেট ধরাল।
ট্রেন ছাড়ার পর বাইরের আলোর বিন্দুগুলো অন্ধকারের নানা বৃত্তে ইতিউতি লুকোচুরি খেলতে থাকে। ঘটাংঘট আওয়াজ তুলে ট্রেন দ্রুত ছুটে চলেছে। কামরায় বিক্ষিপ্ত আলাপ জমে উঠেছে। দীপক একটা সিনেমা পত্রিকার পাতা উলটে চলে। পাশের বেঞ্চে দুই ভদ্রমহিলার আলাপ দীপকের কানে আসে, ‘ডালহাউসিথেকে ফিরে ভাবলাম দার্জিলিংটা ঘুরে আসি। তাহলে সব হিল স্টেশনগুলো দেখা হয়ে যাবে। কে জানতবাপু এমন অবস্থা। তাহলে রিজার্ভেশন না করে আসতামনা’।
‘উনিতো রিজার্ভেশনের চেষ্টা করেছিলেন। ছমাস আগে থেকেই নাকি সব বুকড’।
আলাপ চলতে থাকে।
‘আমার বড় ছেলেটা সাউথ পয়েন্টে পড়ছে। মেয়েটা লোরেটো থেকে সিনিয়র কেম্ব্রিজ পাশ করেছে’।
‘আমার একটা ছেলেকে ক্যালকাটা বয়েসএ দিয়েছি। ছোট ছেলেটার ভবিষ্যৎ নিয়ে আমি খুবই চিন্তিত আছি। উনি বলছেন হিন্দুতেই পড়ুক। কিন্তু আমার মত নেই। বাংলা মিডিয়ামে পড়ে কি আর চাকরিবাকরি পাবে? আমি বারবার বলছি ওখানথেকে ছাড়িয়ে যেকোনো ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে ভর্তি করে দিতে।। উনি খালি খরচের কথা তুলবেন। খরচ বাঁচাতেগিয়ে কি ছেলেটার ভবিষ্যৎ নষ্ট করব?’
‘আমার মেয়েকে নিয়ে আবার আর এক ফ্যাসাদ। বলে কিনা আর্টস নিয়ে কলেজে পড়বে। কোনো ভদ্রলোকের ছেলেমায়েকি আর্টস নিয়ে পড়ে?’
ভদ্রমহিলার স্বামী এতক্ষণ চুপচাপ সব শুনছিলেন আর মিটিমিটি হাসছিলেন। এবার হেসে বললেন, ‘আমি কিন্তু আর্টস নিয়েই পড়েছি’।
ভদ্রমহিলা তাচ্ছিল্যভরে বললেন, ‘তোমাদের কথা ছেড়ে দাও। এখন সোসাইটি বদলে গেছে। তখন যা চলত এখন তা চলবে নাকি?’
দমকা হাওয়া লেগে মেঘেরা যেমন ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে তেমনি বাইরের আলোর ফুটকি, জোৎস্নায় মাখোমাখো বাড়িঘর-গাছপালা এলোমেলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়তে থাকে। ধীরে ধীরে যাত্রীদের কথার স্রোত স্তিমিত হয়ে আসতে থাকে। সারা কামরাজুড়ে তন্দ্রা নামছে। কেবল তাসের আসর এখনো উত্তাল। গাড়ির দোলায় তন্দ্রা নামে দীপকের চোখে। দীপক সিটের কোণে মাথা এলিয়ে দেয়।
বেশ কিছুটা ঘুমিয়ে নিয়েছে দীপক, সিটে বসে বসেই। ট্রেনে যেতেযেতে এ অভ্যাসটা করে ফেলেছে দীপক। কিষণগঞ্জ আসতেই যাত্রী আর কুলিদের কোলাহলে দীপকের ঘুম ভেঙে গেল। ভোর হয়ে এসেছে। স্টেশনে নেমে দীপক কলের জলথেকে দাঁত মেজে নিল। একটা স্টল থেকে ডিমসেদ্ধ আর চা খেয়ে সিগারেট ধরাল। ট্রেন ছাড়ার হুইসিল দিতেই সিগারেট ফেলে এক দৌড়ে ট্রেনে উঠে পড়ল। সিটে এসে বসতেই গাড়ি ছেড়ে দিল। বাইরে আলো ছড়িয়ে পড়ছে। একটা হলুদ বলের মত সূর্যটা মাঠের উপর দিয়ে গড়িয়ে চলতে থাকে।
নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে তেঁতুলডাঙার ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করতে করতে পরেশবাবুর সাথে দেখা হয়ে গেল। দীপককে দেখে উচ্ছ্বসিত হয়ে বললেন, ‘আরে দীপকযে। কলেজ কবে ছুটি হল?’
দীপক হেসে বলল, ‘এইত দুতিনদিন হল’।
‘তোমার বাবাযে বললেন, এবার কোথায় বেড়াতে যাবে তাই বন্ধে বাড়ি আসতে পারবেনা’।
‘সেরকমই ঠিক ছিল। তারপর বাবামার জন্য মন কেমন করতে লাগল। বয়স হয়েছে। কখন কি হয়ে যায়’।
‘ঠিকই বলেছ’।
‘আপনি কেমন আছেন?’
‘এই আছি একরকম। আগেত অফিসের কাজেই সময় কেটে যেত। রিটায়ার করার পর নাতিনাতনিদের নিয়ে