জামায়াত-বিএনপির মিথ্যা বক্তব্যের ভিত্তিতে রচিত স্বাধীনতা বিরোধীদের মিথ্যাচার ও দাঁতভাঙ্গা
1/5
()
About this ebook
জামায়াত-বিএনপির মিথ্যা বক্তব্যের ভিত্তিতে রচিত স্বাধীনতা বিরোধীদের মিথ্যাচার ও দাঁতভাঙ্গা জবাব
Reviews for জামায়াত-বিএনপির মিথ্যা বক্তব্যের ভিত্তিতে রচিত স্বাধীনতা বিরোধীদের মিথ্যাচার ও দাঁতভাঙ্গা
2 ratings0 reviews
Book preview
জামায়াত-বিএনপির মিথ্যা বক্তব্যের ভিত্তিতে রচিত স্বাধীনতা বিরোধীদের মিথ্যাচার ও দাঁতভাঙ্গা - Sheikh Shohidul Islam Swapon, Sr
বাংলাদেশের পূর্ব ইতিহাস
ব্রিটিশরা এই অঞ্চলটিকে প্রায় ২০০ বছর শাসন-শোসন করেছে। তাদের হাত থেকে স্বাধীনতার জন্য প্রান দিয়েছে, জেল খেটেছে, দ্বীপান্তরে গিয়েছে। ১৯৪০ সালে লাহোর প্রস্তাবে ঠিক করা হয়েছিল ভারতবর্ষের যে অঞ্চলগুলোতে মুসলমান বেশী সেরকম দুটি অঞ্চলকে নিয়ে দুটি দেশ এবং বাকী অঞ্চলটিকে নিয়ে আরো একটি দেশ তৈরী করা হবে। কিন্তু ১৯৪৭ সালের ১৪ আগষ্ট যে এলাকা দুটিতে মুসলমানরা বেশী সেই এলাকা দুটি নিয়ে ভিন্ন দেশ না হয়ে পাকিস্তান নামে একটি দেশ এবং ১৫ আগষ্ট বাকী অঞ্চলটিকে ভারত নামে অন্য একটি দেশে ভাগ করে দেয়া হলো। পাকিস্তান নামে পৃথিবীতে তখন অত্যন্ত বিচিত্র একটি দেশের জন্ম হলো যে দেশের দুটি অংশ দুই জায়গায়। এখন যেটি পাকিস্তান সেটির নাম পশ্চিম পাকিস্তান এবং এখন যেটি বাংলাদেশ তার নাম পূর্ব পাকিস্তান । মাঝখানে প্রায় দুই হাজার কিলোমিটার দুরত্ব এবং সেখানে রয়েছে ভিন্ন একটি দেশ ভারত। পূর্ব আর পশ্চিম পাকিস্তানের মাঝে শুধু যে প্রায় দ্ইু হাজার কিলোমিটারের দুরত্ব তা নয় মানুষগুলোর ভেতরেও ছিল বিশাল দুরত্ব। তাদের চেহারা, ভাষা, খাবার, পোষাক, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য সবকিছু ছিল ভিন্ন শুধু একটি বিষয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষগুলোর মাঝে মিল ছিল - সেটি হচ্ছে ধর্ম। এরকম বিচিত্র একটি দেশ হলে সেটি টিকিয়ে রাখার জন্যে আলাদাভাবে একটু বেশী চেষ্টা করার কথা কিন্তু পাকিস্তানের শাসকেরা সেই চেষ্টা করল না। দেশভাগের সময় পশ্চিম পাকিস্তানের জনসংখ্যা ছিল দুই কোটি, পূর্ব পাকিস্তানের ছিল চার কোটি কাজেই সহজ হিসেবে বলা যায় শিক্ষা দিক্ষা ব্যবসা বানিজ্য পুলিশ মিলিটারী সরকারী কর্মচারী কর্মকর্তা সবকিছুতেই যদি একজন পশ্চিম পাকিস্তানের লোক থাকে তাহলে সেখানে দুইজন পূর্ব পাকিস্তানের লোক থাকা উচিৎ। বাস্তবে হলো ঠিক তার উল্টো সবকিছুতেই পশ্চিম পাকিস্তানের ভাগ ছিল শতকরা আশি ভাগ থেকে নবই ভাগ। বাজেটের পচাত্তর ভাগ ব্যয় হতো পশ্চিম পাকিস্তানে আর পঁচিশ ভাগ ব্যয় হতো পূর্ব পাকিস্তানে যদিও পূর্ব পাকিস্তান থেকে রাজস্ব আয় ছিল বাষট্রি ভাগ। সবচেয়ে ভয়ংকর ছিল সেনাবাহিনীর সংখ্যা পূর্ব পাকিস্তানের তুলনায় পশ্চিম পাকিস্তানের সৈন্যের সংখ্যা ছিল পঁচিশ গুন বেশী। এরকম অত্যাচারে জর্জরিত হতে হতে কেটে গেল ২৩ টি বছর তারপরও পশ্চিম পাকিস্তানের লোকেরা পূর্ব পাকিস্তানের দিকে কোন নজর দিল না। আবার এই ২৩ বছরের মধ্যে হয়েছে বিভিন্ন আন্দোলন সেই আন্দোলনকে উপেক্ষা করে তারা তাদের এই এক চেটিয়া সিদ্ধান্তের উপর অনড় রইল। তারা পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি কোন রকম গুরত্ব দিলনা। তারা সর্বপ্রথমেই আঘাত হানল ভাষার উপর যে পাকিস্তানের রাষ্ট্র ভাষা হবে উর্দূ এর পর শুরু হলো ভাষা আন্দোলন সেই ভাষা আন্দোলনে শহীদ হলেন সালাম বরকত শফিক রফিক জবারসহ আরো অনেকে। এরপর ঘটে গেছে আরো অনেক আন্দোলন ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট গঠন করে ২১ দফা প্রনয়ন, ১৯৬২ সালে সামরিক শাসন বিরোধী আন্দোলন, ১৯৬৪ সালে সামপ্রদায়িক দাঙ্গায় বাঙ্গালী রুখে দাড়াও প্রতিরোধ, ১৯৬৬ সালে ৬ দফা দাবী উথাপন, ১৯৬৯ সালে ১১ দফার গণঅভ্যুথান, ১৯৬৯ সালে ৬ দফার পক্ষে ম্যান্ডেট এবং ৭০ সালের নির্বচনে জয়লাভ, তারপরও তারা পুর্ব পাকিস্তান কে কোনরুপ গুরুত্ব দিলনা। শেষঅবধি ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষনা ও মুক্তিযুদ্ধ এবং দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে ৩০ লক্ষ শহীদ ও ২ লক্ষ মা বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে আমরা অর্জন করেছি আমাদের স্বাধীনতা।
বাংলাদেশের অদভ্যুদ্বয়ের ইতিহাস
আজকে আমরা ১৬ ই ডিসেম্বর, ২৬ মার্চ বাঙ্গালীর জীবনে পরম আনন্দের দিন, শৃঙ্খল ভাঙ্গার দিন, স্বাধীন আকাশে মুক্ত বিহঙ্গের মতো উড়ে বেড়ানোর দিন। আজকে আমরা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ১৬ ই ডিসেম্বরে বিজয় দিবস পালন করছি, ২৬ মার্চে স্বাধীনতা দিবস পালন করছি। এই বিজয় ছিনিয়ে আনতে আমাদের অনেক ত্যাগ তিতিক্ষার সম্মুখীন হতে হয়েছে। দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে ৩০ লক্ষ শহীদ ও ২ লক্ষ মা বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে আমরা অর্জন করেছি আমাদের স্বাধীনতা। আর আজ সেই স্বাধীনতাকে কলঙ্কিত করার জন্য কতিপয় ব্যাক্তি ইতিহাস বিকৃতির চেষ্টা করে যাচ্ছে যা লিখতে গেলে অনেক সময় লাগবে হয়তো পড়ার মতো কারো ধৈর্য্য থাকবে না। তারপর ও সংক্ষিপ্ত আকারে কিছু কথা লিখলাম যা ধৈর্য্য সহকারে পড়ার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি। যাতে করে নতুন প্রজন্মের মানুষেরা স্বাধীনতার প্রকৃত ইতিহাস জানতে পারে এবং স্বাধীনতাকে বুঝতে পারে এবং স্বাধীনতাকে রক্ষা করতে পারে। স্বাধীনতা অর্জন করা সহজ কিন্তু স্বাধীনতা রক্ষা করা কঠিন। মহান মুক্তিযুদ্ধ বাঙ্গালী জাতির ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ঘটনা এক সাগর রক্তের বিনিময়ে আমরা অর্জন করেছি আমাদের স্বধীনতা এবং রক্ষা করেছি আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিকে। আমাদের এই প্রিয় মাতৃভূমির জন্য যারা অকাতরে জীবন দিয়েছেন তারা জাতির সূর্য সন্তান তাদের সেই ত্যাগের বিনিময়ে আজ আমরা মুক্ত স্বাধীন । আমরা পেয়েছি এক নতুন মানচিত্র নতুন পতাকা। কিন্তু স্বাধীন বাংলাদেশে আবার যখন পরাজিত শত্রুদের উত্থান দেখি, কবির কন্ঠে যখন শুনি জাতির পতাকা খামচে ধরেছে সেই পুরনো শকুন তখন শঙ্কিত না হয়ে পারিনা। আমাদের প্রাণপ্রিয় স্বাধীনতাকে নস্যাৎ করার জন্য ঘৃণ্য চক্রান্ত এখনো চলছে সাম্প্রদায়ীকতার বিষবাষ্প দিকে দিকে ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। এ ব্যাপারে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে এবং একাত্তরের পরাজিত শক্তি যাতে মাথাচাড়া দিয়ে না দাড়ায় সে জন্য আমাদের সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে।
একটি দিয়াশালাইয়ের কাঠি এক ঘষাতেই ঘটিয়ে দিতে পারে প্রলয়ংকর অগ্নিকান্ড কিন্তু সে জানে না যে তার ভিতরে কি পরিমান বিস্ফোরক ও দাবানল সুপ্ত আছে তাই সে নিজে থেকে কিছু করতে পারে না কিন্তু আমরা মানুষ সব কিছু করতে পারি আমাদের দ্বারা কোন কিছুই অসম্ভব নয়। তাই আজ সময় এসেছে রুখে দাড়াবার সোনার বাংলার ভবিষ্যৎ আমাদের হাতে আর তাই আমাদের সকলকে এক হয়ে শক্ত হাতে এর হাল ধরতে হবে এবং যদি কেউ সোনার বাংলার ভবিষ্যৎ গড়তে বাধা হয়ে দাড়ায় তাহলে শক্ত হাতে এর প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। যদি আমরা সবাই এক হয়ে বজ্রমুষ্টি হয়ে থাকি ইনশাআল্লাহ আমরা আমাদের স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলতে পারব।
বাংলাদেশের অদভ্যুদ্বয়ের ইতিহাস সাড়া বিশ্বে দিবালোকের মতো স্পষ্ট হলেও আজও পাকিস্তানপ্রেমী কতিপয় ব্যাক্তি ইতিহাস বিকৃতির অপচেষ্টা চালায়। ১৯৭৫ সালের জাতির জনকের নির্মম সেই হত্যাকান্ডের পর রেডিও টিভি সংবাদপত্র সহ যাবতীয় প্রচার মাধ্যমই ছিল স্বাধীনতাবিরোধীদের হাতে। আর তাই তারা যাই চেয়েছে যেভাবে চেয়েছে, তাই প্রচারিত হয়েছে তাই ছাপা হয়েছে এদেশের ক্ষমতায় স্বাধীনতা বিরোধীদের অধিষ্ঠানের জন্য জরুরী ছিল মুক্তিযুদ্ধের অর্জন গুলিকে বিতর্কিত করা, প্রশ্নবিদ্ধ করা। আর সে জন্য সবচেয়ে জরুরী ছিল এই স্বাধীনতার স্বপ্নদ্রষ্টাকে নানা অপপ্রচারের মাধ্যমে কিভাবে কলঙ্কিত করা যায়। যাতে করে স্বাধীনতা বিরোধীদের মুক্তিযুদ্ধকালীন যাবতীয় অপকর্মকে বৈধতা দেওয়া যায়, ১৫ আগষ্টের হত্যাকান্ডকে বৈধতা দেওয়া যায়, নেপথ্যের স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তিকে বৈধতা দেওয়া যায়, মুক্তিযুদ্ধকে কলঙ্কিত করা যায়। সর্বোপরি সোনার বাংলার স্বপ্নদ্রষ্টা শেখ মুজিবের বাস্তবায়নকে ঠেকিয়ে রাখা যায়। যাতে করে এদেশটি পাকিস্তানের ভাবধারায় ফিরে যায়। আর সেজন্যই স্বাধীনতাবিরোধীরা ইতিহাস বিকৃত করেছিল। আমার একটা ঘটনার উদৃতি