হারানো, দুঃখভোগ, উৎস র্গ ও মৃত্যুবরণ করা

যে আমার কাছে আসবে সে যেন নিজের বাবা-মা, স্ত্রী ও ছেলে-মেয়ে,ভাই-বোন, এমন কি নিজেকে পর্যন্ত  আমার চেয়ে কম প্রিয় মনে করে। তা না হলে সে আমার শিষ্য হতে পারে না।

লূক ১৪:২৬

প্রভু যীশুকে অনুসরন করা সহজ বিষয় নয়। প্রভু যীশুর জন্য জীবন যাপন করাও সহজ বিষয় নয়। যদি কেউ আপনাকে খ্রীষ্ট ধর্মের কোন সহজ মান দেখিয়ে দেয়, তাকে আপনি বিশ্বাস করবেন না। যীশু খ্রীষ্টকে অনুসরন করা ও তাঁর মতো হওয়াই হলো খ্রীষ্ট ধর্মের মূল কথা!

তাঁর শিষ্য হওয়া সম্বন্ধে প্রভু যীশু যা যা বলেছেন, এটি মনে হয় যে কেউ তাকে অনুসরন করুক তা তিনি যেন চান নি। যারা যারা তাঁকে অনুসরন করতে চাইছিল তিনি তাদেরকে তাঁর কাছে এলে যে সব বিপদ হতে পারে সে সম্বন্ধে তিনি তাদের সাবধান করে দিয়েছিলেন।

প্রভু যীশু আমাদেরকে সাবধান করে দেন

তিনি বলেছিলেন,"যদি তোমরা আমার কছে আসো, তাহলে তোমাদের পিতামাতা, পরিবার পরিজন ও নিজেকে ঘৃণা করতে হবে" (লূক ১৪:২৬)।

তাকে অনুসরণ করতে ইচ্ছুক একজন ধনী ব্যক্তিকে বলেছিলেন," যদি তুমি আমাকে অনুসরণ করতে চাও তাহলে তোমার যা কিছু আছে তা অবশ্যই তোমাকে বিক্রি করে দিতে হবে"(মথি ১৯:২১)।

তিনি আরও বলেছিলেন, "যদি তুমি আমাকে অনুসরণ করো তাহলে  তোমার তাকাবার মতো কোন যায়গা থাকবে না কারণ শিয়ালের গর্ত্ত আছে, পাখীদের বাসা আছে, কিন্তু আমার তেমন কিছুই নেই" (লূক ৯:৫৮)।

হারানো, দুঃখভোগ, উৎসর্গ ও মৃত্যুবরণ করা

তিনি বলেছিলেন," যদি সত্যিই তুমি আমাকে অনুসরণ করতে চাও তাহলে তোমার পরিবার পরিজনের কাছ থেকে বিদায় নিতে পারবে না"(লূক ৯:৬১)।

সদ্য পিতা মারা যাওয়া এমন এক ব্যক্তিকে তিনি বলেছিলেন," যদি সত্যিই তুমি আমার শিষ্য হতে চাও তাহলে তোমার পিতার কবর দেবার বিষয়ে তোমাকে চিন্তা করতে হবে না"(লূক ৯:৫৯)।

প্রভু যীশু কারো জন্য মানদন্ড নোয়ান না

স্পষ্টতই, প্রভু যীশু কারো জন্য আলাদা করে বিষয়টি সহজ করতে চান নি। তিনি কারো জন্য মানদন্ডটি নীচু করেন নি। তিনি কাউকে আলাদা করে খাতির করেন নি। তিনি জানতেন তিনি এমন কিছুর জন্য আমাদেরকে আহ্বান করছেন যা কোথাও কেউ কোনদিন মানবজাতির জন্য দেয়নি। এই দান হলো প্রভু যীশুর রক্তে পরিত্রাণ পাবার সুযোগ, ঈশ্বরকে জানার ও স্বর্গে যাবার সুযোগ লাভ করা!

তাঁর অসীম ভালোবাসার উত্তরে যে সব লক্ষ কোটি লোক তাঁকে সাড়া দিতে এগিয়ে এসেছে, যীশু খ্রীষ্টের এই সাবধানবাণীগুলো তাদেরকে ভীত করে তুলতে পারে নি। তাঁকে অনুসরণ করার তাঁর এই সব কঠিন কঠিন শর্ত থাকা সত্বেও লক্ষ লক্ষ লোক তাঁকে ভালোবাসে।

কোন না কোনভাবে, জীবন্ত ঈশ্বরকে ও তাঁর পুত্র প্রভু যীশুকে জানাটাই আমাদের যে সব ক্ষতি হতে পারে তার সকল ক্ষতি পুষিয়ে দিতে পারে।

এমন কোন লোকের কথায় কান দেবেন না যারা দাবী করে যে প্রভু যীশুকে অনুসরণ করা মানেই অনাবিল আশীর্বাদ, অর্থ ও শান্তি পাওয়া। এটি খ্রীষ্ট ধর্ম নয়।  খ্রীষ্টকে বিশ্বাস করা মানে হারানো, উৎসর্গ করা, দুঃখভোগ করা ও মৃত্যু বরণ করা।

সকল খ্রীষ্ট-বিশ্বাসীরা যে দুঃখ-কষ্টের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে তা চারটি প্রধান ভাগে ভাগ করা যায়: হারানো, উৎসর্গ, দুঃখভোগ ও মৃত্যু বরণ।

এই চার ধরণের আত্মিক সাক্ষাৎকার যে কোন রূপে সকল খ্রীষ্টিয়ান যেন তাদের জীবনে অবশ্যই আশা করে। যারা প্রকৃতভাবে প্রভু যীশুকে অনুসরণ করে তারা কখনই এই চার ধরণের সাক্ষাৎকার থেকে রেহাই পেতে পারে না।

চারটি আত্মিক সাক্ষাৎকার

যে এর চেয়ে ভিন্ন ধরণের কথা বলে তার কথা শুনবেন না! সে শুধু আপনার চুলকানো কানের উপর আঙ্গুল বুলিয়ে দিচ্ছে! যে কোন আকারে, বা রূপে বা হয়তো অন্য কোন নামে আপনি খ্রীষ্টের ক্রুশের অভিজ্ঞতা লাভ করবেন যদি আপনি সত্যিই তাঁর শিষ্য হয়ে থাকেন।

আমাদের সাক্ষাৎকারগুলো হলো হারানো, উৎসর্গ করা, দুঃখভোগ করা ও মৃত্যু বরণ করা। এগুলো কি ঈশ্বরের বাক্য ভিত্তিক? হ্যাঁ, নীচের শাস্ত্রাংশ আমাদেরকে দেখিয়ে দেয় যে আমাদের বিশ্বাসের ও আহ্বানের কারণে আমরা হারাবার, উৎসর্গ করার, দুঃখভোগ করার জন্য নিযুক্ত হয়েছি ও মৃত্যু বরণ করার জন্যই আলাদা করে রাখা হয়েছে।

এই সব সাক্ষাৎকার কত বাস্তব তা দেখিয়ে দেওয়াই এই বইটির লক্ষ্য।  আপনি যতটা মনে করছেন ততোটা খারাপ এটি নয় এবং সব শেষে এটিই আশীর্বাদের আকর হয়ে উঠবে। লক্ষ্য করুন যে নীচের এই শাস্ত্রাংশটি আমাদের সকলের জন্য এই সব চ্যালেঞ্জগুলোকে স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছে:

১. ‘হারানো ও ক্ষতি’র আপনার সাক্ষাৎকার

কেননা যে কেহ আপন প্রাণ রক্ষা করিতে ইচ্ছা করে, সে তাহা হারাইবে, আর যে কেহ আমার নিমিত্ত তাহা হারায় সে তাহা পাইবে।

মথি ১৬:২৫

কিন্তু যাহা যাহা আমার লাভ ছিল, সেই সমস্ত খ্রীস্টের নামে ক্ষতি বলিয়া গণ্য করিলাম। আর বাস্তবিক আমার প্রভু যীশু খ্রীষষ্টের জ্ঞানের শ্রেষ্ঠতা প্রযুক্ত আমি সকলই ক্ষতি বলিয়া গণ্য করিতেছি; তাঁহার নিমিত্ত সমস্তেরই ক্ষতি সহ্য করিয়ছি, এবং তাহা মলবৎ গণ্য করিতেছি, যেন খ্রীষ্টকে লাভ করিতে পারি।

ফিলিপীয় ৩:৭-৮

খ্রীষ্টের কারণে আপনি ‘ক্ষতি ও হারানো’র সাক্ষাৎকারের অভিজ্ঞতা পাবেন। যারা এ বিষয়ে চিন্তা করতে পারে তাদের কাছে এর অর্থ অনেক হতে পারে ।

ক. ক্ষতি মানে আপনাকে কোন কোন বিষয় ছাড়া চলতে হতে পারে।  যে জিনিস আপনি হারাবেন আপনার সামনে সেগুলো ফিরে পাবার কোন ধরণের ভবিষ্যত না-ও থাকতে পারে।

হারানো, দুঃখভোগ, উৎসর্গ ও মৃত্যু বরণ করা

খ. ক্ষতি মানে আপনি কোন কোন বিষয় হতে বঞ্চিত হয়ে থাকবেন।

গ. ক্ষতি মানে আপনি আপনার জীবনে কোন কোন বিষয় রাখতে বা বজায় রাখতে পারবেন না।

ঘ. ক্ষতি মানে আপনার জীবনে আপনি কোন কোন বিষয় ছেড়ে দিবেন।

২. দুঃখভোগের সাথে আপনার সাক্ষাৎকার

খ্রীষ্টের জন্য আপনি দুঃখভোগের সাথে ‘সাক্ষাত’ এর অভিজ্ঞতা অর্জন করবেন। যে ব্যক্তি দুঃখভোগ মানে কি তা বুঝতে চেষ্টা করে, এই দুঃখভোগ সেই ব্যক্তির কাছে অনেক কিছু । যারা তাদের বিশ্বাসের পথে দুঃখভোগের কোন ধারণা না রাখে তাদের কথায় কোন কান দেবেন না। বিশ্বাসের সকল বীরগণ ঈশ্বরের উপরে তাদের বিশ্বাসের জন্য দুঃখভোগ করেছিলেন।

ক.       দুঃখভোগ মানে আপনি ব্যথা, মারাত্মক বেদনা, ক্ষতি, ক্ষত বা খারাপ কিছু সহ্য করবেন।

খ.   দুঃখভোগ মানে  আপনি জীবনে বিরোধিতা, কষ্ট, দুঃখ, ও স্বল্পতা বোধ করবেন।

গ.   দুঃখভোগ মানে আপনি দূর্ভাগ্য, অস্বাচ্ছন্দ ও কষ্টের মধ্য দিয়ে    যাবেন।

ঘ.   দুঃখভোগ মানে আপনি অত্যাচার, অবিচার ‍ও বিরোধিতা ভোগ করবেন।

যেহেতু তোমাদিগকে খ্রীষ্টের নিমিত্ত এই বর দেওয়া হইয়াছে, যেন কেবল তাঁহাতে বিশ্বাস কর, তাহা নয়, কিন্তু তাঁহার নিমিত্ত দু:খভোগও কর; কারণ আমাতে যেরূপ দেখিয়াছ, এবং এখন আমাতে হইতেছে শুনিতেছ, সেইরূপ প্রাণপণ তোমাদেরও হইতেছে।

ফিলিপীয় ১:২৯-৩০

আমাদের ভ্রাতা ও খ্রীষ্টের সুসমাচারে ঈশ্বরের পরিচারক যে তীমথিয়, তাঁহাকে পাঠাইয়াছিলাম, যেন তিনি তোমাদিগকে সুস্থির করেন, এবং

চারটি আত্মিক সাক্ষাৎকার

তোমাদের বিশ্বাসের সম্বন্ধে আশ্বাস দেন, যেন এই সকল ক্লেশে কেহ চঞ্চল না হয়, কারণ তোমরা নিজেরাই জান, ইহাই আমাদের জন্য নিযুক্ত। আর বাস্তবিক, আমাদের যে ক্লেশ ঘটিবে, ইহা আমরা অগ্রে, তখন তোমাদিগকে বলিয়াছিলাম; আর তাহাই ঘটিয়াছে, এবং তোমরা তাহা জান। এই জন্য আমিও আর ধৈর্য্য ধরিতে না পারাতে তোমাদের বিশ্বাসের তত্ব জানিবার নিমিত্ত উঁহাকে পাঠাইয়াছিলাম, ভাবিয়াছিলাম, পাছে পরীক্ষক কোন প্রকারে তোমাদের পরীক্ষা করিয়াছে বলিয়া আমাদের পরিশ্রম বৃথা হইয়া পড়ে।

১ম থিষলনীকীয় ৩:২-৫

যাইতে যাইতে তাঁহারা শিষ্যদের মন সুস্থির করিলেন, এবং তাঁহাদিগকে আশ্বাস দিতে লাগিলেন, যেন তাঁহারা বিশ্বাসে স্থির থাকে, আর কহিলেন, অনেক ক্লেশের মধ্য দিয়া আমাদিগকে ঈশ্বরের রাজ্যে প্রবেশ করিতে হইবে।

প্রেরিত ১৪:২২

৩.              আত্মত্যাগের সহিত আপনার সাক্ষাৎকার

খ্রীষ্টের জন্য আপনি ‘আত্মত্যাগের’ সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। যে উৎসর্গ মানে কি তা বুঝতে চেষ্টা করে এই উৎসর্গ সেই ব্যক্তির কাছে অনেক কিছু। যারা খ্রীষ্টিয়ান হিসেবে আমাদের যে দুঃখভোগ করতে হবে সে বিষয়ে প্রচার করে না তাদের কথায় কোন কান দেবেন না। যে ধর্মে আমরা বিশ্বাসী, উৎসর্গ করা সে ধর্মের একটি অঙ্গ।

ক. উৎসর্গ করার মানে ঈশ্বরের আরাধনার জন্য আপনার যে ধন সম্পদ আছে তা উৎসর্গ করা।

খ. উৎসর্গ করার মানে উচ্চ কিছুর জন্য আপনার কাছে মূল্যবান সকল কিছু সমর্পণ করা।

গ. উৎসর্গ করার মানে অন্য কিছুর জন্য আপনার জীবনে ক্ষত ও সমস্যা স্বীকার করা।

ঘ. উৎসর্গ করার মানে আপনার সমস্ত দ্রব্য দিয়ে দেওয়া যদিও তাতে আপনার কোন লাভ হবে না।

হারানো, দুঃখভোগ, উৎসর্গ ও মৃত্যু বরণ করা

ভ্রাতৃগণ, ঈশ্বরের নানা করুণার অনুরোধে, আমি তোমাদিগকে বিনতি করিতেছি, তোমরা আপন আপন দেহকে জীবিত, পবিত্র ও ঈশ্বরের প্রীতিজনক বলিরূপে উৎসর্গ কর, ইহাই তোমাদের চিত্ত সঙ্গত আরাধনা।

রোমীয় ১২:১

অতএব আইস, আমরা তাঁহারই দ্বারা ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে নিয়ত স্তব বলি, অর্থাৎ, তাঁহার নাম স্বীকারকারী ওষ্ঠাধরের ফল, উৎসর্গ করি।

ইব্রীয় ১৩:১৫

৪. মৃত্যু বরণ করার সাথে আপনার সাক্ষাৎকার

খ্রীষ্টের জন্য আপনি ‘মৃত্যু’ বরণ করার সাথে সাক্ষাৎ করবেন।কোন ব্যক্তি মৃত্যু বরণ করবে এটা বলার মধ্য দিয়ে অনেক কিছু বোঝায়।  এ জন্যই প্রভু যীশু আমাদেরকে আমাদের ক্রুশ তুলে নিতে ও তাঁকে অনুসরণ করতে বলেছিলেন।

ক. মৃত্যু বরণ করা মানে অস্তিত্ব হারিয়ে ফেলা ও সমস্ত কাজ আর না করা।

খ. মৃত্যু বরণ করা মানে শক্তি ও বল হারিয়ে ফেলা

গ. মৃত্যু বরণ করা মানে ধীরে ধীরে শেষ হয়ে ও মিলিয়ে যাওয়া

ঘ. মৃত্যু বরণ করা মানে চিরকালের জন্য থেমে যাওয়া

আর তিনি সকলকে বলিলেন, কেহ যদি আমার পশ্চাৎ আসিতে ইচ্ছা করে, তবে সে আপনাকে অস্বীকার করুক, প্রতিদিন আপন ক্রুশ তুলিয়া লউক, এবং আমার পশ্চাদগামী হউক।

লূক ৯:২৩

খ্রীষ্টের সহিত আমি ক্রুশারোপিত হইয়াছি, আমি আর জীবিত নই, কিন্তু খ্রীষ্টই আমাতে জীবিত আছেন, আর এখন মাংসে থাকিতে যে জীবন আছে, তাহা আমি বিশ্বাসে, ঈশ্বরের পুত্রে বিশ্বাসেই যাপন করিতেছি;

চারটি আত্মিক সাক্ষাৎকার

তিনিই আমাকে প্রেম করিলেন এবং আমার নিমিত্তে আপনাকে প্রদান করিলেন।

গালাতীয় ২:২০

ভ্রাতৃগণ, আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্ট যীশুতে তোমাদের বিষয়ে আমার যে শ্লাঘা, তাহার দোহাই দিয়া বলিতছি, আমি প্রতিদিন মরিতেছি।

১ম করিন্থীয় ১৫:৩১

অধ্যায় ২

খ্রীষ্টের জন্য কীভাবে ক্ষতি সহ্য করতে হয়

আর আমি বাস্তবিক আমার প্রভু যীশু খ্রীষ্টের জ্ঞানের শ্রেষ্ঠতা প্রযুক্ত আমি সকলই ক্ষতি বলিয়া গণ্য করিতেছি, তাঁহার নিমিত্তে সমস্তেরই ক্ষতি বলিয়া সহ্য করিতেছি, এবং তাহা মলবৎ গণ্য করিতেছি, যেন খ্রীষ্টকে লাভ করি।

ফিলিপীয় ৩: ৮

ঠিক প্রেরিত পৌলের মতো করে, আপনাকেও যীশু খ্রীষ্টের জন্য সব কিছুর ক্ষতি সহ্য করতে হবে। অনেক কিছু হারিয়ে প্রেরিত পৌল সহ্য করেছিলেন। যদি আপনি কোন ক্ষতি সহ্য না করেন আপনি কোন কিছু লাভ করতে পারবেন না। প্রভু যীশুর বারোজন শিষ্য প্রভু যীশুকে অনুসরন করতে গিয়ে সব কিছু হারিয়েছিলেন। তারা সব কিছু ছেড়ে দিয়েছিলেন! তারা তাদের পেশা, তাদের পরিবার ও তাদের বন্ধু বান্ধব হারিয়েছিলেন। এই হারানো তাদের জন্য বিরাট ব্যক্তিগত এক ক্ষতি ছিল। যদি আপনি কোন কিছু হারাতে প্রস্তুত না থাকেন আপনি প্রভুকে অনুসরন করতে পারেন না।

তখন পিতর তাঁহাকে বলিতে লাগিলেন, দেখুন, আমরা সমস্তই পরিত্যাগ করিয়া আপনার পশ্চাদগামী হইয়াছি।

মার্ক ১০:২৮

আপনি যা ধরে রাখেন তার মধ্যে আপনার পরিচর্যা সীমিত থাকে। যদি আপনি দৌড়াবার সময়ে আপনার সঙ্গে কিছু কিছু জিনিস রাখেন, তাহলে আপনি জোরে দৌড়াতে পারবেন না।  ঈশ্বর চান যেন আমরা সব কিছু পিছনে ফেলে রেখে তাঁর অনুসারী হই। আমাদের হয়তো ঘুম, আমাদের বন্ধু-বান্ধব, আমাদের টেলিভিশন দেখা, আমাদের জীবিকা ও চাকুরী ফেলে দিয়ে প্রভু যীশুকে অনুসরন করতে হবে।

খ্রীষ্টের জন্য কিভাবে ক্ষতি সহ্য করতে হয়

আপনার আর্থিক ক্ষতি সহ্য করতে হবে

পরিচর্যাতে রত হওয়া মানেই কিছু আর্থিক ক্ষতি সহ্য করা। আপনি যখন পরিচরর্যা করতে আরম্ভ করবেন তখনই আপনার আর্থিকভাবে ক্ষতিতে পড়তে হবে। অনেক পালক বুঝতে পারেন না যে তাদেরকেই এই পরিচর্যাতে অর্থ দিতে হবে।প্রত্যেক পরিচর্যাকারীকে পরিচর্যাতে ব্যক্তিগতভাবে বিনিয়োগ করতে হয়। অবশ্যই, আপনি তা করতে পারেন না যদি আপনার অর্থ চার্চের অর্থ থেকে পৃথকভাবে রাখা না থাকে।

এ বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ, যেন আপনার ব্যক্তিগত সম্পদ চার্চের সম্পদ থেকে পৃথকভাবে রাখা থাকে। যদি এই স্বচ্ছতা স্পষ্ট না হয়, তাহলে আপনি দেবার আশীর্বাদ থেকে বঞ্চিত হবেন। আপনার তো দেবার কিছুই নেই, কারণ আপনার কাছে যা কিছু আছে তার সবই চার্চের সম্পদ। আর আপনি কীভাবে চার্চের যা তা থেকে চার্চকে দিতে পারেন?

আপনাকে অবশ্যই আরাম আয়েশ ও সুখ স্বাচ্ছন্দ্য

ত্যাগ করতে হবে

প্রভুর সঙ্গে থাকার জন্য আপনার বিশ্রামের সময়কে উৎসর্গ না করে, কিছুতেই প্রকৃত ফল ধরতে পারে না। অনেক পরিচর্যাকারী সব কিছুর জন্য সময় দেন কিন্তু প্রভুর জন্য দেন না। টিভি দেখার সময় আছে, অর্থহীন সামাজিক মেলামেশা করার জন্য সময় আছে, কম্পিউটার, ব্যবসা, খেলাধূলার জন্য সময় আছে কিন্তু প্রভুর সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগের সময় নেই। আপনার পরিচর্যা প্রভুর সঙ্গে আপনার ব্যক্তিগতভাবে সময় কাটানোর প্রতিফলন মাত্র।

একটি পরিচরর্যাতে অনেক কিছু থাকে যেগুলো আপনার আরাম আয়েশকে হারাম করে দিতে পারে। আপনি যদি জীবনের ছোটখাটো বিষয়কে উৎসর্গ করতে প্রস্তুত না থাকেন, আপনি আপনার পরিচর্যাতে কিছু নাও পেতে পারেন।

এ পৃথিবীর কোন কোন আয়েশের বিষয়কে গুরুত্ব দেওয়া আপনার পরিচরর্যাতে পিছনে পড়ার কারণ হতে পারে।  আপনার উচিৎ যেন আপনি "উর্ধ্বস্থ বিষয় ভাব, পৃথিবীস্থ বিষয় ভাবিও না" (কলসীয় ৩:২)।

হারানো, দুঃখভোগ, উৎসর্গ ও মৃত্যু বরণ করা

যখন আপনার হৃদয় উর্ধ্বস্থ বিষয়ের প্রতি নিবদ্ধ থাকে, আপনি তখন এই পৃথিবীর হাল্কা জিনিস নিয়ে ততো উদ্বেলিত হবেন না।

এক রাতে, আমি বিদেশী কোন এক দেশে, প্রশান্ত মহাসাগরের তীরে বসে ছিলাম। আমার সামনে দিয়ে কোটিপতিদের বেশ কয়েকটি দামী প্রমোদ তরী আসা যাওয়া করছিল। যারা আমার সঙ্গে ছিলেন আমি সেই খ্রীষ্টিয়ান ভাইদের দিকে তাকিয়ে বললাম, "ইস, যদি স্বর্গে আমার একটা প্রমোদ তরী থাকতো!" তাদের মধ্যে একজন উচ্চ স্বরে হেসে বললেন," না, না, আমি তো এখানেই এরকমের একটা চাই।" এই অল্প আলাপচারিতার মধ্য দিয়ে দু’ধরণের খ্রীষ্টিয় চিন্তা ধারা প্রকাশ পায়। বেশীরভাগ খ্রীষ্টিয়ানেরা এখানেই, এই পৃথিবীতে, আরাম আয়েশ পেতে চায়। যদিও অল্প কয়েকজন স্বর্গে তা পেতে চান।

আমি যে গাড়ীটি চালাই, আমি যে সেটাই চালাতে চাই, তা নয়। আসলে, আমি যে গাড়ী চালাতে চাই আমি কখনোই সে রকমের গাড়ী চালাই নি। আমি খুব ভালো করে জানি কোন ধরণের গাড়ী সবচেয়ে সুন্দর ও সবচেয়ে ভালো, কিন্তু আমি যা করছি তা কেবল পরিচরর্যার খাতিরেই করছি।

কিন্তু আমি ইহার কিছুই ব্যবহার করি নাই, আর আমার সম্বন্ধে যে এইরূপ করা হইবে, সেই জন্য আমি এই সকল লিখিতেছি না; কেননা কেহ যে আমার শ্লাঘা নিষ্ফল করিবে, তাহা অপেক্ষা বরং আমার মরণ ভাল।

১ম করিন্থীয় ৯:১৫

আমি শহরের শ্রেষ্ঠ এলাকায় বা শ্রেষ্ঠ ঘরে বাস করি না। আমি ভালো করেই জানি শহরের এই শ্রেষ্ঠ এলাকা কোথায় ও শ্রেষ্ঠ ঘরটি কোথায়। আমি জানি আমি যেখানে বাস করি তার চাইতে অনেক ভালো ভালো ঘর আছে। আমি আরোও জানি যে আমার চার্চ আমাকে এই সব জিনিস দিতে পারে।

কিন্তু আমি আমার প্রভু আমাকে যা