বৃহৎ মণ্ডলী

১ম অধ্যায়

পঁচিশটি কারণ, কেন আপনার অবশ্যই একটি বৃহৎ মণ্ডলী থাকা প্রয়োজন

১.  আপনার অবশ্যই একটি বৃহৎ মণ্ডলীর প্রত্যাশা থাকা প্রয়োজন কারণ একজন পালক হিসেবে এটি আপনার সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য। প্রত্যেক পালকের জন্য সবথেকে গুরুত্বপূর্র্ণ দর্শন এবং জ্বলন্ত প্রত্যাশা হলো একটি বৃহৎ মণ্ডলীর আকাঙ্খা থাকা। যদি একটি মণ্ডলীই থাকবে, তবে সেটি বৃহৎ হবে না কেন?

দর্শনের অভাবে প্রজাগন উচ্ছৃঙ্খল হয়; কিন্তু যে ব্যবস্থা মানে, সে ধন্য।  

হিতোপদেশ ২৯:১৮

২.   বৃহৎ মণ্ডলীর প্রত্যাশা এজন্য থাকা প্রয়োজন কারণ এটি আপনাকে আপনার মণ্ডলী বৃদ্ধির পথে পরিচালনা দেবে। অদ্ভুত কার্যের প্রত্যাশা আপনাকে পরিচর্যায় অদ্ভুত কার্যের পরিচালনা দেবে। মনোনীত হবার প্রত্যাশা আপনাকে মনোনয়োনের ফলাফল এনে দিবে। মণ্ডলী বৃদ্ধির প্রত্যাশায় আপনি এমন এক পথ আবিষ্কার করবেন যা আপনার মণ্ডলীকে বৃহত্তর করে তুলবে।

এই জন্য আমি তোমাদিগকে বলি, যাহা কিছু তোমরা প্রার্থনা ও যাচ্ঞা কর, বিশ্বাস করিও যে, তাহা পাইয়াছ, তাহাতে তোমাদের জন্য তাহাই হইবে।  

মার্ক ১১:২৪

৩.   আপনার অবশ্যই একটি বৃহৎ মণ্ডলী থাকা প্রয়োজন, কারণ প্রত্যেক মণ্ডলীর জন্য ভাববানীর মূল লক্ষ্য হলো প্রভু যা নির্মান করেন তা শেষ সীমান্তে এসে বৃহৎ আকার ধারণ করে। আজ যদি আপনার মণ্ডলী ক্ষুদ্র হয়েও যায় তবুও আপনি নিরুৎসাহিত হবেন না। কারণ এটিই অনুমান করা হয়েছে যে আপনার পরিচর্যার কাজ শুরুর তুলনায় আজ অনেকে গৌরাবান্বিত হবে, কেননা ঈশ্বরের বাক্য একথা বলে যে, প্রারম্ভিক সময়ের গৌরব ও আনন্দ থেকে বরং যে গৌরব শেষ পর্যায়ে আসে সেটি আরো বৃহৎ হয়ে থাকে। তাই আপনাকে অবশ্যই সেই গৌরবের জন্য প্রত্যাশা রাখতে হবে। ঈশ্বর বৃহৎ কিছু করবেন এবং অবশ্যই মণ্ডলীর বৃদ্ধি ঘটাবেন।

তাহাতে তব অগ্রিম অবস্থা ক্ষুদ্র বোধ হইবে, তোমার অন্তিম দশা অতিশয় উন্নত হইবে।  

ইয়োব ৮:৭

৪.    আপনার অবশ্যই একটি বৃহৎ মণ্ডলী থাকা প্রয়োজন কারণ অধিকাংশ পালকেরাই এটা ভেবে প্রতারিত হন তাদের কার্য সম্পাদিত হয়েছে কিন্তু আসলে তা হয়নি।

যীশুর পরিচর্যা চলাকালীন অবস্থায় তিনি একটি গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন,

ফসল প্রচুর কিন্তু কাটার লোক কত অল্প।  

মথি ৯:৩৭

এর অর্থ হলো জয় করার মত অনেক আত্মা রয়েছে। আমাদের সবার জন্য অনেক কাজ রয়েছে, অনেক মানুষ রয়েছে যাদের দ্বারা এখনও মণ্ডলী পরিপূর্ণ হয়নি।

অনেক পালক তারা ক্ষুদ্র উপসানালয়ের গৃহটি পরিপূর্ণ দেখে প্রতারিত হন। অনেক পরিচর্যাকারী মনে করেন যে, তারা পরিচর্যা সম্পন্ন করেছেন। আপনি ভাল বেতন পান এবং আপনার একটি সুন্দর গাড়ি আছে। ঈশ্বর আপনকে আর্শিবাদ করেছেন। এর অর্থ এই নয় যে, আপনি লক্ষ্যে পৌঁছে গিয়েছেন। আপনার সত্যিকারের কাজ অসম্পাদিত রাখতে শয়তানকে আপনার চোখ ভ্রান্ত করতে দেবেন না। শয়তান সর্বদাই মণ্ডলীকে নিদ্রামগ্ন রাখতে চায়। সে প্রত্যেক পরিচর্যাকারীকে চুপিসারে বলে যে সবকিছু ঠিক আছে। এটিই তাই তুমি তোমার কাজ শেষ করেছ, এই পর্যন্তই তুমি করতে পারতে, এই পর্যন্তই তুমি ঈশ্বরের জন্য অর্জন করতে পারতে। এই ধরণের পরিচর্যাকারীরা আত্মিক ভাবে তাদের লক্ষের প্রতি শয়তান দ্বারা আবদ্ধ থাকেন। শত্রু তাদের হৃদয়ে বলে সবকিছু ঠিক আছে, এটিই তাই, তুমি তোমার কার্য সম্পাদন করেছ।

শয়তান চায় যেন আপনার মণ্ডলী ক্ষুদ্র থেকে যায়। খুব অল্প সংখ্যক লোকই এই বিষয়ে মোকাবেলা করতে সক্ষম। আপনার মণ্ডলীর আয়তন প্রকাশ করে, নরকের লোক সংখ্যা কতটা হ্রাস করছেন। যখন আপনার একটি বৃহৎ মণ্ডলী আছে, এর মানে আপনি আরো অনেকের প্রান প্রতিষ্ঠা করছেন। এর মানে এও দাড়াচ্ছে, আরো অনেক প্রান দিয়াবলের খপ্পর থেকে পালিয়ে গিয়েছে।

৫.   আপনার অবশ্যই একটি বৃহৎ মণ্ডলী থাকতে হবে কারণ এটি ঈশ্বরের ইচ্ছা যেন তাঁর গৃহ পরিপূর্ণ থাকে। বেশির ভাগ মণ্ডলী পরিপূর্ণ হয় না কারণ তারা বৃহৎ মণ্ডলী না।

তখন প্রভু দাসকে কহিলেন, বাহির হইয়া রাজপথে রাজপথে ও বেড়ায় বেড়ায় যাও, এবং আসিবার জন্য লোকদিগকে পীড়াপীড়ি কর, যেন আমার গৃহ পরিপূর্ণ হয়।   

লুক ১৪:২৩

লুক ১৪ তে প্রভু একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় প্রকাশ করেছেন। এখানে মনিব তার দাসকে বলেন যে, আমার গৃহ পূর্ণ হওয়া প্রয়োজন। গল্পের এই মনিব হলেন যীশু নিজেই। যীশু চান যেন তারা তার গৃহ অর্থৎ মণ্ডলী পরিপূর্ণ হয়। ঈশ্বরও তা আকাঙ্খা করেন। এই গল্পে মনিব সেই অল্প সংখ্যক লোক নিয়ে সেই ভোজ পরিচালনা করতে চাননি। তিনি আরও অধিক সংখ্যক লোকের আগমনের আকাঙ্খা করেছিলেন যে তার ভোজের গৃহ পূর্ণ হয়ে যায়।

এই গল্পের মাধ্যমে ঈশ্বর তার রাজ্যে আরও বেশী বিশ্বাসীদের উপস্থিতির ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। তার ইচ্ছাই হলো বৃহৎ মণ্ডলী!

৬.   আপনাকে অবশ্যই বৃহৎ মণ্ডলী গঠন করতে হবে কারণ এই পৃথিবিটাই হলো আপনার জন্য শস্য ক্ষেত্র।

ঈশ্বর আমাদেরকে শুধুমাত্র আমাদের শহরের জন্য প্রেরণ করেননি। এমনকি কিছু গ্রামের জন্যও আমাদের প্রেরণ করেননি, তিনি আমাদের পাঠিয়েছেন এই সম্পূর্ণ বিশ্বের জন্য যেন আমরা অনেক ফসল রোপন করতে পারি।

আর তিনি তাঁহাদিগকে কহিলেন, তোমরা সমুদয় জগতে যাও, সমস্ত সৃষ্টির নিকটে সুসমাচার প্রচার কর। যে বিশ্বাস করে ও বাপ্তাইজিত হয়, সে পরিত্রান পাইবে; কিন্তু যে অবিশ্বাস করে, তাহার দণ্ডাজ্ঞা করা যাইবে।  

মার্ক ১৬:১৫-১৬

মুল বিষয়টি হলো সমস্ত পৃথিবীর আত্মার ফসল এবং বৃহৎ অর্জনের ক্ষেত্রে বোঝা অনুভব করতে হবে। যা হবে অবশ্যই বিশ্বের জন্য সংখ্যার একটি বৃহত্তর অংশ। এই কাজের জন্য প্রতিটি মণ্ডলীকে তাদের শুন্যস্থান গুলো পূর্ণ করতে হবে। মনে রাখতে হবে কোটি কোটি আত্মা রয়েছে যাদের জয় করতে হবে।

৭.   আপনার অবশ্যই বৃহত্তর মণ্ডলীর প্রয়োজন রয়েছে কারণ বাইবেলের উল্লেখিত মণ্ডলী গুলোতেও অনেক সদস্য ছিল। অনুসরণ করার জন্য সেগুলি কি উৎকৃষ্ট উদাহরণ নয়? যদি সেই প্রাচীন মণ্ডলী গুলোর তিন হাজার এবং পাঁচ হাজার সদস্য থেকে থাকে তবে আজ কি সেরকম হতে আমাদেরকে তা পরিচালনা দেয় না? প্রকৃত অর্থ বাইবেলে ঐ সদস্য সংখ্যা এজন্যই অর্ন্তভুক্ত করা হয়েছে যেন আমরা আমাদের লক্ষ্যকে বুঝতে পারি ।

পিতরের কথায় যারা বিশ্বাস করেছিল তারা বাপ্তিষ্ম গ্রহণ করেছিল এবং সব মিলিয়ে তিন সহস্র লোক মণ্ডলীতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। তারা অন্য বিশ্বাসীদের সাথে যোগ দিয়েছিলেন, প্রেরিতদের শিক্ষা গ্রহণ করেছিলেন এবং প্রভুর ভোজ ও প্রার্থনার সহভাগিতায় থেকেছিলেন।

তখন যাহারা তাঁহার কথা গ্রাহ্য করিল, তাহারা বাপ্তাইজিত হইল; তাহাতে সেই দিন কমবেশ তিন হাজার লোক তাঁহাদের সহিত সংযুক্ত হইল। আর তাহারা প্রেরিতদের শিক্ষায় ও সহভাগিতায়, রুটি ভাঙ্গায় ও প্রার্থনায় নিবিষ্ট থাকিল।  

প্রেরিত ২:৪১-৪২

তথাপি যে সকল লোক বাক্য শুনিয়াছিল, তাহাদের মধ্যে অনেকে বিশ্বাস করিল; তাহাতে পুরুষদের সংখ্যা কমবেশ পাঁচ হাজার হইল।  

প্রেরিত ৪:৪

৮.   প্রভুর রাজ্যে অনেক বেশী আত্মা জয়ের জন্য আপনার বৃহৎ মণ্ডলীর প্রয়োজন রয়েছে। ক্ষুদ্র মণ্ডলীর তুলনায় একটি বৃহৎ মণ্ডলীতে অনেক বেশী সেবা আহবান এবং সুযোগ থাকে। প্রভুর জন্য আত্মা জয় করাই কি ফল পরিচর্যার লক্ষ্য নয়? একটি বৃদ্ধি প্রাপ্ত মণ্ডলী কি অনেক লোককে পরিত্রান এনে দিতে পারেনা?

৯.   আপনার অবশ্যই একটি বৃহৎ মণ্ডলী থাকতে হবে কারণ এখান থেকে আরো বেশী করে লোকদের কাজে পাঠানো হবে।

তখন তিনি আপন শিষ্যদিগকে কহিলেন, শস্য প্রচুর বটে, কিন্তু কার্য্যকারী লোক অল্প; অতএব শস্যক্ষেত্রে স্বামীর নিকটে প্রার্থনা কর, যেন তিনি নিজ শস্যক্ষেত্রে কার্য্যকরী লোক পাঠাইয়া দেন।  

মথি ৯:৩৭-৩৮

মণ্ডলীতে সত্যিকারের কর্মীদের সংখ্যা একটি নির্দিষ্ট শতাংশতেই থাকে। আপনি যাই বলুন আর যাই করুন না কেন সকলেই পরিচর্যার কাজে অন্তভুক্ত হবে না। কেউ থাকবেন যিনি দর্শক এবং পর্যবেক্ষক, কেউ শুধু মন্তব্যই করবেন কিন্তু কর্মীরা সবসময় পরিচর্যার কাজ করে যাবেন। তাই মণ্ডলীর সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে কর্মীদের সংখ্যাও বাড়বে এবং সহজেই তখন তাদের আর্থিক ব্যবস্থাপনা করা সম্ভব হবে।

১০. আপনার অবশ্যই একটি বৃহৎ মণ্ডলী থাকতে হবে কারণ অনেক বেশী সুসমাচারের পরিচর্যাকারী, পালক এবং বিশপ দের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে যারা বৃহত্তর ক্ষেত্রে ফসল রোপনে কাজ করতে পারবেন। সেখানে অনেক বেশী পরিচর্যার জন্য প্রশিক্ষণ কর্মসুচী থাকতে পারে। এক সদস্য বিশিষ্ট মণ্ডলীর থেকে বরং দশ হাজার সদস্য বিশিষ্ট মণ্ডলী অনেক বেশী পালক গঠন করতে পারে। আর বাস্তবিক ভাবে বলা যায়, ক্ষুদ্র মণ্ডলীতে সুসমাচার প্রচারের জন্য পরিচর্যার ক্ষেত্রে যথেষ্ট লোক পাওয়া যায় না।

১১. আপনার অবশ্যই একটি বৃহৎ মণ্ডলী থাকতে হবে কারণ এই মণ্ডলীর লোকেরা বাতাসের অধিপতির বিরুদ্ধে প্রার্থনা করতে পারবে।

কেননা রক্তমাংসের সহিত নয়, কিন্তু আধিপত্য সকলের সহিত, কতৃর্ত্ব সকলের সহিত, এই অন্ধকারের জগৎপতিদের সহিত, স্বর্গীয় স্থানে দুষ্টতার আত্মাগণের সহিত আমাদের মল্লযুদ্ধ হইতেছে। এই জন্য তোমরা ঈশ্বরের সমগ্র যুদ্ধসজ্জা গ্রহণ কর, যেন সেই কুদিনে প্রতিরোধ করিতে এবং সকলই সম্পন্ন করিয়া দাঁড়াইয়া থাকিতে পার। অতএব সত্যের কটিবন্ধনীতে বদ্ধকটি হইয়া, ধার্মিকতার বুকপাটা পরিয়া, এবং শান্তির সুসমাচারের সুসজ্জতার পাদুকা চরনে দিয়া দাঁড়াইয়া থাক; এই সকল ছাড়া বিশ্বাসের ঢালও গ্রহণ কর, যাহার দ্বারা তোমরা সেই পাপাত্মার সমস্ত অগ্নিবান নির্বাপিত করিতে

পারিবে; এবং পরিত্রান শিরস্ত্রাণ ও আত্মার খড়গ, অর্থাৎ ঈশ্বরের বাক্য গ্রহণ কর। সর্ব্ববিধ প্রার্থনা ও বিনতি সহকারে সর্ব্বসময়ে আত্মাতে প্রার্থনা কর, এবং ইহার নিমিত্ত সম্পুর্ণ অভিনিবেশ ও বিনতিসহ জাগিয়া থাক।  

ইফিষীয় ৬:১২-১৮

বৃহৎ মণ্ডলীর মাধ্যমে প্রভুর জন্য অনেক বেশী প্রার্থনা করা সম্ভব। তাতে অনেক লোক পরিত্রান পেতে পারে। প্রভু যখন আমায় ইউরোপে প্রেরণ করেন তখন মণ্ডলী স্থাপনের জন্য এবং তার রাজ্য পুন: প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি আমাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করতে বলেন। আমরা জানি ইউরোপে কিভাবে নাস্তিকতা ছড়িয়ে রয়েছে তারা তাদের মস্তিস্ক থেকে ঈশ্বরকে সরিয়ে রেখেছেন। তাদের অনেকেই ঈশ্বরের অস্তিত্ব বিশ্বাস করে না।

অনেক বছর আগে ইউরোপ থেকে মিশনারিদের সমস্ত বিশ্বে পাঠানো হত। আর আজ তারাই ঈশ্বরের পরিচালনা বিহীন হয়ে পড়েছে। ঈশ্বর আমাদের দেখালেন যে, মণ্ডলীতে আমাদের একটি দায়িত্ব হলো ইউরোপের এই অবস্থার জন্য প্রর্থনা করা। সুইজারল্যান্ড নেদারল্যান্ড এবং ইংল্যান্ডে আমাদের উপস্থিতি অনেক সমর্থন তৈরী করতে পেরেছিল।

জেনেভাতে আমাদের