প্রশ্ন তারও কমন পড়েছিল
By Yasir Monon
4/5
()
About this ebook
ছোট একটা ছেলে । ক্লাস ফাইভ সিক্সে পড়ে । সমবয়সী আর দশটা ছেলের মতোই দুষ্ট , খেলা পাগল । এক ফাইনাল পরীক্ষার দিন সকালে তার হাতে আসে একটা সরকারী চিঠি । উকিলের পাঠানো । এরপর সব ওলট-পালট হয়ে যায় । বাকিদের মতো আর থাকেনা তার জীবন । সেপারেশন হয়ে যাওয়া এক মা-বাবার এক ছেলের জীবন কাহিনী নিয়ে লেখা 'প্রশ্ন তারও কমন পড়েছিল' ।
Yasir Monon
Yasir Monon is author of novel (Proshno Taro Common Porechilo - Bengali), Short Story Collection (Nilame Pachti Shobdo - Bengali) . He lives in Dhaka, Bangladesh with “the wife,” “the bike,” and he occasionally is a very good sleeping artist, that means he likes sleeping. He likes playing Chess . His latest release, Auction of Emotions, is his third book. facebook.com/yasir.monon
Read more from Yasir Monon
দীর্ঘ ঈ কার Rating: 5 out of 5 stars5/5নিলামে পাঁচটি শব্দ Rating: 5 out of 5 stars5/5
Related to প্রশ্ন তারও কমন পড়েছিল
Reviews for প্রশ্ন তারও কমন পড়েছিল
5 ratings0 reviews
Book preview
প্রশ্ন তারও কমন পড়েছিল - Yasir Monon
উৎসর্গ
বই কাউকে উৎসর্গ করা কি জিনিস , প্রথম বই প্রকাশের সময়েও বুঝিনি , এখনও জানিনা ... তাও তখন উৎসর্গ করেছিলাম আমার মা , আমার ওয়াইফ তামান্না , আর আমার শ্রদ্ধেয় বস জাফর ইকবাল সিদ্দিকী স্যারের উদ্দেশ্যে ,
যাদের জন্য আজকে আমি - আমি ।
আরও একটা নাম যোগ করি , নাকি ?
আদি ভাই , প্রিয় মাসুম আহমেদ আদি ভাই । আপনার নামে থাকলো আমার এই বইয়ের দ্বিতীয় প্রকাশ ।
কিছু বন্ধু যেমন ভাইয়ের মতো হয়ে যায় , কিছু ভাইও বন্ধুর চেয়ে কম থাকে না , এরকম একজন মানুষ আমাদের আদি ভাই , আমার আদি ভাই ...
গল্পের আগে অল্প কথা
আমাদের আশে পাশে রোজ ডিভোর্স/সেপারেশন এই শব্দগুলো শুনি। বেশিরভাগ মানুষের কাছেই এগুলো শব্দ হিসেবেই থেকে যায়, বা গল্পের খোড়াক হয়। কিন্তু হয়তো একটা ডিভোর্স হয়ে যাওয়া অভিভাবকদের যে সন্তান থাকে, তাঁর কাছে ‘ডিভোর্স’ শুধু শব্দ না। ওই ব্রোকেন ফ্যামিলির ছেলে/মেয়েটা কতোটা যে মানসিক যন্ত্রণায় থাকে, তা হয়তো ওরা ছাড়া কেউ বুঝবে না। দোষ যারই থাক, বাবা বা মা, ঝড় যায় কিন্তু সন্তানদের উপর দিয়েই।
ব্রোকেন ফ্যামিলির থেকে বের হয়ে আসা এই সন্তানগুলিকে সবাই ঘাড়ে দায়িত্ব নিতে বলবে, কিন্তু সংসারের হাল কিভাবে ধরবে আর কিভাবে নিজের ভবিষ্যৎ গড়বে, এ ব্যাপারে বুদ্ধি দিতে কেউ এগিয়ে আসবে না। মানুষের খোটা, আত্মীয়দের করুণার চাপাতলে পিষ্ট হয়ে এলোমেলো হয়ে যাওয়া ছেলে মেয়েরা এডিক্টেড হয়ে গেলেও দোষ। পড়াশুনা খারাপ করলেও দোষ, তাড়াতাড়ি বড় হলেও দোষ, সব দোষ তাদেরই। আর কারও কোনও দোষ নাই। বাকিদের বোঝা উচিত, এমনিতেই ফ্রাস্টেটেড থাকে এরা, কারণ তার এই লাইফের জন্য সে দায়ী না। তো কেন গালি শুনতে হবে তাকে?
আমি লেখালেখি পারি না। ধন্যবাদ ছোটবেলার ফ্রেন্ড কানিজকে যে সবার আগে একটু হলেও সাহস দিয়েছে। নয়তো এই পাগলামি করার কথা চিন্তাও করতাম না। মাথায় যা এসেছে তাই তুলে ধরার চেষ্টা করেছি কিবোর্ড দিয়ে, ডিজিটাল খাতায়। গত ডিসেম্বর ২০১৫ এর প্রথম সপ্তাহ থেকে অল্প অল্প করে ভেঙ্গে ভেঙ্গে লেখা শুরু করি ‘প্রশ্ন তারও কমন পড়েছিল’। বাস্তব কাহিনী অবলম্বনে লেখা, কিন্তু কারও নাম বা ব্যক্তিগত কোনও বিষয় নিয়ে কাউকে আঘাত করার জন্য এটা লিখিনি। একটা ছবি আঁকতে চেয়েছি ভাঙ্গা পরিবারগুলির সন্তানদের। তবুও কোনও ব্যাপারে কেউ কষ্ট পেয়ে থাকলে আন্তরিকভাবে দুঃখিত।
গত ২০১৬ এর ফেব্রুয়ারি তে প্রকাশ পাওয়ার পর এবার ২০১৮ এর অমর একুশে বইমেলায় দ্বিতীয় প্রকাশ পাচ্ছে বইটি । অবশ্যই অনেক আনন্দিত আমি । আর এই বিগত সময়ে যাদের অনুপ্রেরণায় আমি বইটি দ্বিতীয় প্রকাশের সিদ্ধান্ত নিয়েছি , তাঁদের মধ্যে তামান্না , মুন্না , অথই , হিমেল, মামুন ভাই ,জামি, আদি ভাই , মারুফ , ওয়াহিদ অনঘ , মুফি ভাবি সহ প্রত্যেকের কাছে অনেক কৃতজ্ঞ আমি , বুঝতে পারছি , আমার দায়িত্ব বাড়িয়ে দিয়েছেন অনেক ।
অনেক রকম ভুল পাবেন এই বইয়ে। তবুও মাত্র দুই সপ্তাহে লিখে শেষ করা এই বইটি পড়ে একটুও যদি কারো ভালো লেগে থাকে, এটাই আমার কাছে অনেক বড় পাওয়া।
দোয়া রাখবেন আমার জন্য , একগাদা , দুইগাদা , অনেক দোয়া দরকার ।
ইয়াসির মনন
জানুয়ারি ২০১৬
জানুয়ারি ২০১৮
বাসার সামনে ছোট একটা উঠান আছে রিমনদের। দোতলা বাড়ি। পুরান আমলের বাড়ি। বাসার ছাদ আর বাথরুমের সিলিং একই উচ্চতার। যে কেউ বাসায় এসে বাথরুমে গেলেই আগে টেনশনে পড়ে যায়। এদিক ওদিক দেখে। কোনায় একটা বড় ষ্টীলের বাক্স টাইপের কিছু একটা আছে। সাথে লাগানো আছে লম্বা জং ধরা শিকলের চেন, ছোট একটা হাতল সহ। বাথরুমের কাজ শেষ হলেই ওই হাতল ধরে টানা লাগে। ম্যানুয়াল ফ্ল্যাশ সিস্টেম। টানতে হয় উপর থেকে, পানি পড়বে নিচ দিয়ে। টিকটিকিদের বাসাও আছে ঘরের প্রতিটা দরজার উপরে। অনেক বড় হওয়ার পরে রিমন জেনেছে যে এটা আসলে টিকটিকির বাসা না। সব বাসায় এরকম থাকে রুমে বাতাস প্রবেশের জন্য। এটা রিমনের নানার বাড়ি। নানা নানী কেউই বেঁচে নেই। আম্মুর সাথে থাকে ও। নিচতলায় সাতটা রুম। এতোগুলো রুম রিমনদের লাগে না। নিজেরা থাকে তিন রুমে, আর দুই রুম ভাড়া দেয়া। বাকি দুই রুম বন্ধ। রুম দুটি রিমনের ছোট খালার। আমেরিকা থাকে, তাই এই রুমগুলি বেশিরভাগ সময়ে বন্ধই থাকে। ওই আমলে নানা হয়তো ডুপ্লেক্স বাড়ি বানাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সিড়ি ভিতর দিয়ে না দিয়ে বাসার বাহিরে দিয়ে দিয়েছেন। সিড়ির সামনে বুড়ো একটা আম গাছ। ওই সিড়ি থেকে বাসার উঠানের গেট পর্যন্ত মোটামুটি খালি লম্বা জায়গা। এই জায়গাতেই রিমন তার ফ্রেন্ডদের সাথে বিকালে ক্রিকেট খেলে, মিনি ক্রিকেট। হাত ঘুরিয়ে বল করা যাবে না, আর ব্যাটসম্যান বল উড়িয়ে মারলেই আউট।
এই উঠানেই সকাল থেকে এমাথা থেকে ওমাথা হেঁটে হেঁটে প্যারাগ্রাফ মুখস্ত করছিল রিমন। ফাইনাল পরীক্ষা চলছে স্কুলে। আজকে ইংলিশ সেকেন্ড পেপার পরীক্ষা ছিল। তখনও অনেক পড়া বাকি। এটার পর ‘মাই এইম ইন লাইফ’ পড়তে হবে। মজার ব্যাপার, সাজেশন অনুযায়ী ক্লাসের পঞ্চাশটা ছেলে আজকে দুইটা-তিনটা রচনা মুখস্ত করে যাবে। মানে হল, বড় হয়ে যাই হও না কেনো, ‘মাই এইম ইন লাইফ’ বই পড়েই মুখস্ত লিখতে হবে। প্যারাগ্রাফ পড়া মাত্র শেষ, এমন সময়ে উঠানের মেইন গেট দিয়ে গফুর মামা ঢুকল। এলাকার একমাত্র পিয়ন সে। ছোটবেলা থেকে তাঁকে দেখে আসছে রিমন। আশেপাশে যাকেই দেখে, তাকেই মামা ডাকে ও। রিকশাওয়ালা থেকে শুরু করে বাসার উলটা দিকে বসা মুচি পর্যন্ত। নিজের একমাত্র আপন মামা ছোটবেলাতেই মারা গেছেন। সেই অভাবটা দূর করতেই হয়তো এমন করে সে।
‘কী মামা, আপা আছে বাসায়?’
‘হু’
‘ডাকবেন একটু? দরকার ছিল’
‘কী? চিঠি? আমি সই দেই?’
ছোটবেলা থেকেই কেবল সই দেয়ার সুযোগ খুঁজতে থাকে রিমন। একবার আলামারি থেকে আম্মুর ব্যাঙ্কের চেক বই মাটিতে পড়ে গিয়েছিল, রিমন তো একের পর এক প্রতি পাতায় কাঠের রঙ পেন্সিল দিয়ে পাঁচ ছয়টা করে সই দিয়েছিল। পরে কপালে অনেক কিছু জুটেছিল তার।
‘না মামা, আজকে আপার সই-ই লাগবে’
‘কেন? আম্মুর কোনও চিঠি আসলে তো সব সময় আমি নেই, আজকে দিবেন না কেন?’
‘এটা কোর্টের চিঠি মামা, আপার সই ছাড়া হবে না’
‘আম্মু সবজি কাটে, দাঁড়ান, ডাকছি’
এই বলে উঠান থেকে বাসার ভিতরে চলে যায় রিমন, কিছুক্ষণ পর ফেরত আসে তার মা’র সাথে। মা’র হাতে এখনও মিষ্টি কুমড়ার বিচি লেগে আছে। তারমানে আজকেও নিরামিষ খাওয়া লাগবে। এটা ভাবতে ভাবতেই হাতের বই নিয়ে আবার উঠানে চলে যায় সে। গফুর তার মায়ের হাতে হলুদ একটা খাম দিয়ে একটা কাগজে সই নিয়ে চলে গেল। রিমনকে ভিতরে ডাকলেন তার মা।
রিমন জানে, কেন ডেকেছেন তিনি, হয় চশমা আনতে বলবে নয়তো চিঠি পড়তে বলবেন। সই না করতে পারার কষ্ট ভুলে বুক ফুলিয়ে ভিতরে ছুটলো সে। চিঠিটা চিনির ডিব্বার উপরে রাখা। আম্মু বলল, ‘দেখো তো কী লেখা?’
খুব আগ্রহ নিয়ে খামটা ছিড়ে ভিতর থেকে পাতলা একটা কাগজ বের করলো সে।