You are on page 1of 3

আরব বিশ্বে স্বৈরশাসক বিরোধী গণ-জাগরণ 

  অব্যাহত রয়েছে।  মুক্তিকামী এ গণ-জাগরণ


আপাততঃ দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থায়   পরিবর্ত ন বা সংস্কারের দাবি জানাচ্ছে। দেশের
রাজনৈতিক ভবিষ্যত গড়ে তোলার   প্রক্রিয়ায় জনগণের অংশীদারিত্ব বা অংশগ্রহণ প্রতিষ্ঠা
করা চলমান   গণ-বিক্ষোভের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য।  নিজ নিজ দেশ সম্পর্কি ত শ্লোগান ও   
দাবির বাইরে পররাষ্ট্র বা আন্তর্জ াতিক বিষয়ে আরব জনগণের বক্তব্য বা   দাবি-দাওয়া
এসব আন্দোলনে এখনও তেমন একটা উচ্চারিত হয়নি।  অন্যকথায় এসব   গণ-আন্দোলন এখনও 
সরাসরি সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধী আন্দোলনের রূপ নেয়নি। এ   অঞ্চলে পরাশক্তিগুলোর
হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধেও  এখন পর্যন্ত কোনো কর্মসূচী   ঘোষণা করেনি এসব আন্দোলন। তাই
আরব দেশগুলোর নতু ন সরকার মূলতঃ জনগণের ঘরোয়া   দাবি-দাওয়া মেটানা ও ঘরোয়া সমস্যা
সমাধানেই বেশি ব্যস্ত থাকবে। কারণ, তারা   জনগণকে এসব সমস্যা সমাধানের প্রতিশ্রুতি
দিয়েছেন।

আরব বিশ্বের এই ক্রান্তিলগ্নেও  ইহুদিবাদী ইসরাইলের আগ্রাসী  ও  ফ্যাসিবাদী তৎপরতা


অব্যাহত রয়েছে। ফলে   বিশ্ব জনমত ইহুদিবাদী ইসরাইলের  বিরুদ্ধেও ক্ষু ব্ধ 
প্রতিক্রিয়া দেখাতে শুরু  করেছে। সম্প্রতি মিশর ও  জর্দ ানের বিক্ষোভকারী জনগণ
দখলদার ইসরাইলের সাথে  সম্পর্ক ছিন্ন করতে কায়রো  এবং আম্মানের প্রতি আহ্বান
জানিয়েছে। কায়রোয়  গণ-বিক্ষোভে ইসরাইলি পতাকায়  অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে এমনকি
প্রতিবাদী জনতা  ইসরাইলি দূতাবাসে ফিলিস্তিনের  পতাকা বসানোর চেষ্টা করেছে।
ফিলিস্তিনি  পতাকাবাহী মিশরীয় প্রতিবাদীরা  গাজায় ইসরাইলের সাম্প্রতিক হামলায়ও
ক্ষোভ  প্রকাশ করেছে। তারা গাজার সঙ্গে  মিশর সীমান্ত খুলে দিয়ে  সেখানকার 
ফিলিস্তিনিদের ওপর চাপিয়ে দেয়া অমানবিক  ইসরাইলি অবরোধ  ভেঙ্গে দিতে মিশরের  সেনা
সমর্থিত সরকারের প্রতি আহ্বান  জানিয়েছে।
ফিলিস্তিনি জাতির অব্যাহত মজলুম অবস্থা   মুসলিম ও আরব বিশ্বের জনগণের হৃদয়কে এখনও
বেদনায় আপ্লুত করছে।  যদিও তারা এ   মুহূর্তে নিজ নিজ  দেশের স্বৈরসরকার উৎখাতের
আন্দোলনে মশগুল বা ব্যস্ত।   কিন্তু  তার মানে এই নয় যে, আরব ও মুসলিম জনগণ
ঐতিহাসিক ফিলিস্তিন সংকটের   কথা ভু লে গেছে।
আরব বিশ্বে ইহুদিবাদী ইসরাইলের সবচেয়ে   ঘনিষ্ঠতম কৌশলগত মিত্র ছিলেন মিশরের
স্বৈরশাসক হোসনি মুবারক। আরব   গণ-জাগরণের প্রথম দিকেই তার পতন ঘটে। মুবারকের পতনের
পর হতচকিত ইসরাইল কিছু    দিন আগ্রাসী পদক্ষেপ থেকে বিরত থেকে সংযমী ভাব দেখিয়েছে।
কিন্তু অল্প কয়   দিন পরই ইসরাইল আবারও স্বমূর্তি ধারণ করে। তেলআবিবের কর্মকর্ত ারা
এমন ভাব   দেখানো শুরু করলেন যেন আরব বিশ্বে কিছু ই ঘটেনি, বরং যা ঘটছে তা যেন   
ইসরাইলের অনুকূলেই যাচ্ছে। এর কারণ, ইসরাইলে ফ্যাসিবাদী শক্তির কর্তৃ ত্ব ও   
ফ্যাসিবাদী প্রবণতা এতই বাড়ছে যে সংযম চর্চ া করা ইহুদিবাদী শাসকদের পক্ষে   
পুরোপুরি অসম্ভব।
সম্প্রতি ইসরাইলি সংসদ ন্যাসেটে জাতিগত   বৈষম্যকে বৈধতা দিয়ে যে আইন পাশ করা হয়েছে
তা ইসরাইলের ফ্যাসিবাদী চরিত্র   জোরদারেরই প্রমাণ। যিভ স্টার্নহেল ইসরাইলি "দৈনিক
হারেৎজ"-এ লেখা এক   নিবন্ধে এই আইনকে "অন্ধকার রাতে নেসেটে পাশ হওয়া বিল" এবং এ
পদক্ষেপকে    গণতন্ত্র বিরোধী বলে উল্লেখ করেছেন।  তিনি লিখেছেন, "ইউরোপে ডানপন্থী   
উগ্রবাদীদের অবস্থান ক্রমেই  লক্ষণীয় মাত্রায় জোরদার হয়েছে, কিন্তু তারা   এখনও
ক্ষমতায় যেতে পারেনি। অন্যদিকে  ইসরাইলে  বর্ণবাদী, উগ্রপন্থী ও   পুরোহিততান্ত্রিক
ডানপন্থীরা সরকারে বা ক্ষমতায় রয়েছে এবং তাদের বিরোধীতা   প্রায় শুন্যের কোঠায়। "

সমীক্ষায় দেখা গেছে, ইসরাইলি যুব সমাজের   মধ্যেও ফ্যাসিবাদ অতীতের চেয়ে বেশি
সমাদৃত হচ্ছে এবং শান্তির সমর্থকদের   সংখ্যা কমে আসছে ব্যাপক হারে। 
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এভিগডোর লিবারম্যানের মত   ইসরাইলি নেতারা আরও বেশি ক্ষমতা অর্জ ন
করতে সক্ষম হওয়ায় এ বিষয়টি তাদের   জন্যও বড় দুঃস্বপ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে যারা
ইসরাইলকে এতদিন প্রাচ্য ও   পাশ্চাত্যের সেতু -বন্ধন বলে মনে করত।
ইসরাইলের বিচার বিভাগ ও  প্রশাসনের ওপর   উগ্র ইহুদিবাদী ধর্মীয় গ্রুপগুলোর
কর্তৃ ত্ব ক্রমেই বাড়ছে। এখন ইসরাইলি    পুরোহিত বা  রাব্বিরাই জাতীয় নিরাপত্তা
পরিষদ ও গোয়েন্দা সংস্থা শিন বেথের   প্রধান কে হবেন তা ঠিক করছেন। ইসরাইলি সংসদে
পাশ হওয়া নতু ন  বর্ণবাদী আইন   অনুযায়ী  ইসরাইলি আরবরা ইসরাইল সৃষ্টির দিনটিকে "
নিক্ববা" বা " বিপর্যয়   দিবস" হিসেবে পালন করতে পারবে না এবং  ইসরাইলকে রক্ষার শপথ
নিতে হবে    আরবদেরকে।
আসলে ইহুদিবাদী ইসরাইল হয়ে পড়েছে   নব্য-ফ্যাসিবাদের কেন্দ্র।  আর এটাই ইসরাইলের
সবচেয়ে বড় সমস্যা। তাই ইসরাইল   পাশ্চাত্যে কেবল উগ্র ডানপন্থী দল বা গ্রুপগুলোকেই
বন্ধু হিসেবে খুঁজে   পাচ্ছে। অথচ  বিশ্ব এখন বর্ণবাদ ও বৈষম্যবাদের বিরোধীতা করছে
ও মানবাধিকার   জোরদারের চেষ্টা করছে।  ইসরাইলে সব সময়ই ফ্যাসিবাদের চর্চ া হয়েছে।
কিন্তু   এখন তা আইনে পরিণত হয়েছে।  ইসরাইলের ভেতরে ফিলিস্তিনি আরবদের অধিকার ও   
স্বাধীনতা লংঘনের বিষয়টি এখন পাশ্চাত্যের জন্যেও বোঝা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

গাজায়   ইসরাইলের আগ্রাসন এবং ইসরাইলি এই আগ্রাসনের প্রতিক্রিয়ায় বিশ্ব জনমতের   


ধিক্কার ও নিন্দার পর  এই দখলদার শক্তি আন্তর্জ াতিক অঙ্গনে বৈধতা হারানোর   ঝুঁ কির
মধ্যে রয়েছে।
ইসরাইলই বিশ্বের একমাত্র (কৃ ত্রিম বা   অবৈধ) রাষ্ট্র যা গঠনে জাতিসংঘকে ব্যবহার
করা হয়েছিল। কিন্তু ইসরাইলি শাসক   গোষ্ঠী এটা ভু লে গেছেন যে,  কেবল গণতন্ত্র চর্চ া
ও আরব নাগরিকদের অধিকার   মনে চলার শর্তে পশ্চিমা দেশগুলো  ইসরাইলকে স্বীকৃ তি
দিয়েছিল। এখন জাতিসংঘ   নিরাপত্তা পরিষদ বা জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ফিলিস্তিনকে
একটি স্বাধীন দেশ   হিসেবে স্বীকৃ তি দিলে তেল-আবিব আরো মারাত্মক বিপদের মুখে পড়বে।
ফিলিস্তন জবরদখলকারী  ইসরাইল ফ্যাসিবাদ,   উপনিবেশবাদ ও বর্ণবাদের পথ ধরে চলছে। এ
ধরনের একটি ফ্যাসিবাদী শক্তিকে মেনে   নেয়া ইউরোপের জন্য ক্রমেই কঠিন হয়ে উঠছে। ফলে
ধীরে ধীরে ইহুদিবাদি ইসরাইল   তার সমর্থকদের হারাচ্ছে।

ইসরাইলি শাসকগোষ্ঠী নানা পন্থায়  ফিলিস্তিনিদের  অধিকার লংঘন করছে এবং বর্ণবাদের
বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা  নেয়নি। ইসরাইলের  বর্ত মান সরকার অবিচারকে আইনে পরিণত করে
নিজেকে দক্ষিণ  আফ্রিকার সাবেক  বর্ণবাদী সরকারের সমপর্যায়ে নিয়ে এসেছে।
ভূ মি ও বংশীয় পরিচিতির জন্য ইহুদিবাদীরা  সব কিছু কে অগ্রাহ্য করতে  প্রস্তুত।
ইহুদিবাদীরা মনে করে কথিত ইহুদিদের  অধিকার বাড়াতে হলে অবশ্যই  ফিলিস্তিনিদের
অধিকার লংঘন করতে হবে। আর এ জন্যই  ইহুদিবাদীরা কখনও আরব ও  ইহুদিদের সমান অধিকার
মেনে নিতে পারেনি। ইসরাইলি এ  নীতি ফিলিস্তিনিদের  মধ্যে আত্মমর্যাদাবোধ, নিজস্ব
পরিচিত ও নিজ ভূ মির প্রতি  ভালবাসা জোরদার  করছে এবং তারা ক্রমেই আশাবাদী হচ্ছে।

অন্যদিকে  জরিপে দেখা গেছে,  মার্কি ন ইহুদিদের দৃষ্টিতে ইসরাইলে আশাব্যঞ্জক  আর


কিছু   নেই। ফলে ইসরাইলের  এক অপরিহার্য ও বড় শক্তি ঝরে পড়বে। ইসরাইলি যুবকরা আর 
শান্তিও চায় না,  আবার যুদ্ধেও জড়াতে ভয় পায়-এমন অবস্থায় এ দখলদার শক্তি 
পাশ্চাত্যের জন্য  ক্রমেই আরো বোঝা হয়ে উঠছে এবং ইসরাইলের বৈধতার সংকটও  জোরদার
হচ্ছে।

You might also like